‘৫ হাজার টাকায় প্রশ্নপত্র ও জিপিএ ৫’ মেলা এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রটি পুনর্বহালের দাবি


সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার দূর্গম জনপদ মনসুর নগর ইউনিয়ন। সেখানে উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতকের জন্য একটি মাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আলহাজ্ব ফরহাদ আলী মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজ। তার পাশেই চরগিরিশ ইউনিয়ন এম মনসুর আলী জাতীয় উচ্চবিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়টিই অত্র অঞ্চলের এইচএসসি পরীক্ষার একমাত্র কেন্দ্র ছিল। যা শুধুমাত্র করা হয়েছিল ফরহাদ আলী মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য। উপজেলা সদর থেকে ওই কেন্দ্রের দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। কেন্দ্রে পৌঁছাতে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা সময় লাগে। ফলে উপজেলা প্রশাসন ও শিক্ষা অফিস থেকে কেউ কেন্দ্র পরিদর্শনে যান না বললেই চলে। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রটিকে ঘিরে গত ছয় বছর ধরে যেন চলছিল প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে নকল বাণিজ্যের মহোৎসব। পরীক্ষা কেন্দ্রের কক্ষে বসেই স্মার্টফোনে পাওয়া প্রশ্ন ও সমাধান দেখে উত্তরপত্রে লেখেন পরীক্ষার্থীরা। প্রশ্ন, উত্তরপত্র ও কলমের সঙ্গে স্মার্টফোনও ছিল পরীক্ষার্থীদের কাছে অপরিহার্য সরঞ্জাম। কেন্দ্র কমিটিকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে কব্জায় নিয়ে পরীক্ষার্থীদের জন্য এমন বন্দোবস্ত করেতো একটি চক্র।
নকল বাণিজ্যের এ বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসলে গত বছর পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে অভিযান চালান কাজীপুর উপজেলা প্রশাসন। ঘটনার সত্যতাও মেলে। এরপর কেন্দ্রটি বাতিল করা হয়।
ফরহাদ আলী কলেজটি থেকে ৬৮১ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে এবছর। কলেজটির এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য করা এম মনসুর আলী জাতীয় উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রটি পুনর্বহালের দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) বেলা এগারোটায় সরিষাবাড়ী- কুমারিয়াবাড়ী- চরছিন্না সড়কের কুমারিয়াবাড়ি বাজার এলাকায় সেই কলেজটির শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকার সাধারণ জনগণ মানববন্ধনে অংশ নেন। তাদের দাবি জুনের ২৬ তারিখ থেকে অনুষ্ঠিত পরীক্ষা চলবে দুই মাস। এই দুই মাস উপজেলা সদরে থেকে পরীক্ষা দিতে গেলে জন প্রতি ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হবে। অস্বচ্ছল পরিবারগুলোর পক্ষে এ খরচ বহন করা সম্ভব না। কেন্দ্রটি পুনর্বহাল করলে প্রায় ৭শ পরীক্ষার্থী স্বস্তি পাবে।
মানববন্ধনে এলাকাবাসি জানান, ‘চলমান এসএসসি পরীক্ষা সুষ্ঠু, সুন্দর ও নকলমুক্ত পরিচালিত হচ্ছে। এমতাবস্থায় এইচএসসি পরীক্ষাও প্রশাসন ও এলাকাবাসীর সার্বিক সহযোগিতায় সুষ্ঠু, সুন্দর ও নকলমুক্ত পরিবেশে পরিচালনা করা হবে।’
আলহাজ্ব ফরহাদ আলী মেমোরিয়াল ডিগ্ৰি কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘চলতি বছরে এবার ৬৮১ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে। পরীক্ষা কেন্দ্রটি যদি পুনর্বহাল করা যেত তাহলে পরীক্ষার্থীদের উদ্বিগ্নতা কেটে যেত। সবার সহযোগিতায় নকলমুক্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো।’
কাজীপুর উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার আকিকুর রহমান বলেন, ‘আলহাজ্ব ফরহাদ আলী মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজের পরীক্ষার্থীদের জন্য নাটুয়ারপাড়া ডিগ্রি কলেজকে কেন্দ্র ও পার্শ্ববর্তী খাসশুরিবেড় উচ্চবিদ্যালয়কে ভ্যেন্যু কেন্দ্র ধরা হয়েছে। তবে ফাইনাল করা হয়নি। শিক্ষাবোর্ড থেকে নির্দেশনা পেলেই ফাইনাল করা হবে।’
কাজীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দেওয়ান আকরামুল হক বলেন, ‘পরীক্ষার কেন্দ্র প্রকাশ করা হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। তবে চরাঞ্চলের ওই কেন্দ্রের বিষয়ে আমি জানি। কেন্দ্র স্থানান্তর বা পুনর্বহালের বিষয়টা সম্পূর্ণ শিক্ষা বোর্ড দেখবে।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।