গাইবান্ধা প্রতিনিধি: জীবনের ঘটে যাওয়া কিছু বেদনাবিধুর স্মৃতি, যা কখনই মুছে ফেলা যায় না। একযুগ আগের এইদিনে সাভারের রানা প্লাজা হয়ে উঠেছিলো দুঃখ—বেদনার এক শোকগাঁথা। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে ধসে পড়েছিল নয় তলা ভবন রানা প্লাজা। এ ঘটনায় সহস্রাধিক মানুষ নিহত হয়েছিলেন।
এর মধ্যে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার
স্মতি রানী (২০), ইউনুছ আলীসহ (২২) আরও বেশ কিছু পোশাক শ্রমিক নিহত হন। আহত ও নিখোঁজ আছেন অনেকে। এ ঘটনার একযুগ হলেও, আজও কান্না থামেনি স্বজনদের। এখনও আতঙ্ক কাটেনি আহতদের। সরেজমিনে গতকাল বুধবার সাদুল্লাপুর উপজেলার দামোদরপুর এলাকায় দেখা গেছে— স্বজনদের আহাজারীর দৃশ্য।
এ সময় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কিশামত দশলিয়া গ্রামের শ্রী পঞ্চনন বাবু। তিনি একজন ভূমিহীন। স্ত্রী—সন্তাান নিয়ে অন্যের জমিতে কোনোমতে বসবাস। স্মৃতিরাণীসহ তিন মেয়ে তার। নেই কোনো ছেলে সন্তান। মেয়েদের মধ্যে সবার বড় স্মৃতিরাণী। পিতার জন্য জায়জমি কিনে বসতবাড়ি স্থাপন করার স্বপ্নে স্মৃতিরানী পাড়ি দিয়েছিলেন ঢাকার সাভার এলাকায়। এরপর সেখানকার রানা প্লাজার পোষাক শিল্পে চাকুরি নেয়। ৭ম তলায় ফিনিসিং সেকশসনে হেলপার পদে কর্মরত ছিলেন। এরমধ্যে ঘটে যায় বিপত্তি।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিলে সাভারের রানা প্লাজা নামের ভবন ধসে প্রাণ হারায় স্মৃতিরানী। যেন নিমিষে স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে শ্রী পঞ্চনন বাবুর। স্বপ্নের এই সন্তানকে হারিয়ে এখনো বাকরুদ্ধ তিনি। শুধু পঞ্চনন বাবুই নয়, মাতা সন্ধ্যারানীরও একই অবস্থায় রয়েছে।
এছাড়া রানা প্লাজা ভবনের সপ্তম তলায় পোশাক শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন ইউনুছ আলী। ঘটনার দিন ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল যথানিয়মে কাজে গিয়েছিলেন। সেটাই যে তার কাজের শেষ দিন তার নিজেরও হয়তো জানা ছিল না। রানা প্লাজা ধসের ১১ দিন পর তার মরদেহ খুঁজে পাওয়া যায়। এর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় তার মরদেহ।
এইদিনে সাভারের রানা প্লাজা হয়ে উঠেছিলো দুঃখ—বেদনার এক শোকগাঁথা। এ প্লাজাটি ধ্বংসস্তপ থেকে প্রাণে উদ্ধার হয়েছিলেন সাদুল্লাপুর উপজেলার বাসিন্দা জিয়াউর রহমান ও মনিফা বেগম নামের এইদম্পতি। সেই ভয়বহ দুর্ঘটনার আতঙ্ক এখনো কাটেনি এ দম্পতির। রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় আহত দম্পতি জিয়াউর ও মনিফা জানালেন সেই ট্র্যাজেডির এক বেদনা বিজড়িত ঘটনা।
এ বিষয়ে জিয়াউর রহমান ও মনিফা বেগম ঘটনার বর্ননা দিতে কেদে ফেলছিলেন। তারা বলেন, যেন মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা। ভয়াবহ ওই ধ্বংসস্তুপের বেঁচে থাকা এক আশ্চর্য ব্যাপার। সয়ং আল্লাহপাক ছাড়া বেঁচে থাকা সম্ভব হয়নি। সেই ঘটনার আট বছর অতিবাহিত হলেও এখনো কাটেনি তাদের আতঙ্ক। সাদুল্লাপুরের দামোদরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ ইউনিয়নের নিহতের স্বজনদের ও আহদের পরিবারে সহযোগীতা অব্যাহত রয়েছে।
সংবাদটি শেয়ার করুন।
Copyright © 2025 সংবাদের আলো. All rights reserved.