বিএসসি কৃষিবিদদের প্রতি বৈষম্য নিরসন ও পাঁচ দফা দাবিতে পটুয়াখালী ভার্সিটিতে বিক্ষোভ সমাবেশ


দুমকী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) কৃষি অনুষদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে বিএসসি কৃষিবিদদের প্রতি চলমান বৈষম্য দূরীকরণ এবং পাঁচ দফা যৌক্তিক দাবিতে এক শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এই কর্মসূচি শুরু হয়। ঘন্টাব্যাপী এ কর্মসূচিতে শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। সমাবেশে কৃষি অনুষদের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন। বক্তৃতায় কৃষি ৬ষ্ঠ সেমিস্টারের ছাত্র গাজী রেজওয়ান হাসান বলেন, “দেশের কৃষিক্ষেত্রে বিএসসি কৃষিবিদদের অবদান অনস্বীকার্য। অথচ বিভিন্ন নিয়োগ ও প্রশাসনিক কাঠামোয় তাদের প্রতি একধরনের বৈষম্য চলে আসছে, যা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।” একই সুরে রিয়াজুল নাহিদ, শাহরিয়ার ইকবাল লিমন এবং ১ম সেমিস্টারের ছাত্রী মৌমিতা বেগমও তাদের বক্তব্যে পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নের জোর দাবি জানান।
সমাবেশ শুরুতেই শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে একটি স্মারকলিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলরের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার বরাবর প্রদান করা হয়। স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা পাঁচ দফা দাবিগুলো হচ্ছে: ১. নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হয়ে ৯ম গ্রেডে (বিএডিসি ও অন্যান্য) কোনোভাবে পদোন্নতির সুযোগ রাখা যাবে না। ২. ১০ম গ্রেডের (উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা/ উপ-সহকারী বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা/সমমান) পদে বিএসসি ও ডিপ্লোমা ধারীদের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। ৩. প্রচলিত ভর্তি পরীক্ষার বাইরে কোনোভাবেই সরকারি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সুযোগ রাখা যাবে না। ৪. কৃষি/ কৃষি সংশ্লিষ্ট স্নাতক ডিগ্রিধারী ব্যতীত কেউ ‘কৃষিবিদ’ উপাধি ব্যবহার করতে পারবে না এবং এ বিষয়ে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।
৫. কৃষি বিষয়ক ডিপ্লোমা বা কারিগরি শিক্ষা শুধুমাত্র কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) অধীনেই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পদবি হবে ‘উপসহকারী কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার’। সমাবেশ চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গবেষক প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের মাঝে উপস্থিত হয়ে বলেন, “তোমাদের এই শান্তিপূর্ণ ও শৃঙ্খলাবদ্ধ কর্মসূচি অত্যন্ত প্রশংসনীয়। শিক্ষার্থীদের জীবন গঠনের এই সময়ে নিজেদের অধিকার আদায়ে সচেতনতা দেখানো একটি ইতিবাচক দিক। তবে তোমাদের স্মরণ রাখতে হবে, শিক্ষা কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয়, সেই দিকেও নজর দিতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “পবিপ্রবি প্রশাসন সবসময় শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির পাশে থাকবে। আমরা তোমাদের দাবি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেবো। বাংলাদেশ কৃষির উন্নয়নে তোমাদের মতো তরুণ কৃষিবিদদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা চাই, তোমাদের প্রতিটি দিন যেন সার্থক হয়—ক্লাস, পরীক্ষা এবং পড়ালেখার কোনও ক্ষতি হোক, এমন কিছু যেন না ঘটে।” সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এস. এম. হেমায়েত জাহান, ট্রেজারার প্রফেসর মোঃ আব্দুল লতিফ, পরীক্ষানিয়ন্ত্রক প্রফেসর মোঃ ইফতেখারুল আলম, নিউট্রিশন এন্ড ফুড সায়েন্স অনুষদের ডিন প্রফেসর মোঃ শহিদুল ইসলাম, জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের সিনিয়র ডেপুটি ডিরেক্টর মোঃ মাহফুজুর রহমান সবুজ, ভাইস-চ্যান্সেলরের কার্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোঃ রাশিদুল করিমসহ বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তাদের দাবি বাস্তবায়ন না হলে ভবিষ্যতে আরও বৃহত্তর কর্মসূচির দিকে যেতে বাধ্য হবেন তারা। তবে এখনই তারা আশাবাদী—বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহানুভূতিশীল অবস্থান এবং সরকারের সদিচ্ছার মাধ্যমে এসব দাবি শিগগিরই বাস্তবায়নের পথ সুগম হবে।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।