কালীগঞ্জে পাগলা কুকুরের কামড়ে নারী ও শিশুসহ ৩০ জন আহত, ভ্যাকসিনের ব্যাবস্থা নেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেএক্সে


পঙ্কজ সরকার নয়ন, গাজীপুর প্রতিনিধি: এবার গাজীপুরের কালীগঞ্জে নারী ও শিশুসহ ৩০ জনকে কামড়িয়ে আহত করেছে পাগলা কুকুর। ২ বছরের শিশু মাশরিফ একা একা খেলা করছিল বাড়ির উঠোনে। হঠাৎ আচমকা বাড়ির উঠানে ঢুকেই পাগলা কুকুটি এলোপাতাড়ি কামরাতে থাকে শুশি মাশরিফকে। আতঙ্কিত মাশরিফ করতে থাকে কান্নাকাটি, চিৎকার। পরে তার ডাক চিৎকারে স্বজনরা এসে উদ্ধার করলেও ততক্ষণে মাসরিফের শারিরীক অবস্থা হয়ে পড়ে আশঙ্কাজনক। দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে কর্তব্যরত কর্তৃপক্ষ জানা যায় সেখানে ভ্যাকসিনের ব্যাবস্থা নেই। হাসপাতালের চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। গত সাত দিন ধরে গাজীপুরের কালীগঞ্জে হঠাৎ করেই বেওয়ারিশ পাগলা কুকুরের আক্রমণ বেড়ে যায়। বিভিন্ন বয়সের প্রায় ৩০ জন নারী ও পুরুষ কুকুরের কামড়ে আহত হন। যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর হলে তারা উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানীর একাধিক হাসপাতালে ভর্তি হন।
উপজেলার বিভিন্ন পাড়া মহল্লা ও মোড়ে দলবেঁধে ওত পেতে থাকে কুকুর। বিরক্ত না করলেও তেড়ে আসে পথচারীদের দিকে। বাদ যায় না যানবাহনে চলাচলকারী যাত্রীরাও। কুকুরের তাড়া খেয়ে বিভিন্ন সময় ঘটছে দুর্ঘটনা। এতে স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী থেকে শুরু করে সব শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে কুকুর আতঙ্ক বিরাজ করছে। অপরদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কুকুরের ভ্যাকসিন না থাকায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ভ্যাকসিনের দাম বেশি নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। জানা গেছে, উপজেলার পৌরসভার দুর্বাটি এলাকায় গত ৩ দিনে ১৫ জন কুকুরের কামড়ে আহত হয়েছেন। এ অবস্থায় ঐ এলাকায় কুকুরের আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয়রা এ বিষয়ে প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি কুকুর নিধনের ব্যাপারে সরকারী বিধি নিষেধ রয়েছে বলে জানান।
এ অবস্থায় সাধারণ মানুষ কুকুরের আতঙ্কে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় লাঠিসোঠা হাতে নিয়ে বের হন। বয়ষ্করা যুবকদের সহযোগিতায় মসজিদে নামাজ আদায় করতে যান। এদিকে প্রতিদিনই হাসপাতালে বাড়ছে কুকুরে কামড়ানো রোগীর সংখ্যা। কিন্তু জলাতঙ্ক প্রতিষেধক সরকারি ভ্যাকসিন মিলছে না হাসপাতালে। মানুষের হয়রানি ও ভোগান্তি বাড়লেও কুকুর নিধনে বা নিয়ন্ত্রণে নেই কোনো উদ্যোগ। পৌরসভার দুর্বাটি এলাকার মো. জমির হোসেন (৪০) বলেন, আমি একজন ইল্কেট্রিশিয়ান। প্রতিদিনের মতো আমি আমার নিজের কাজে বের হচ্ছিলাম। হঠাৎ করে একটা পাগলা কুকুর এসে আমার পায়ে কামড় দেয়। পরে আশপাশের লোকজন এসে আমাকে উদ্ধার করে। অপর ভুক্তভোগী ফুল মেহার (৫৫) জানান তিনি বাড়ি থেকে দোকানে যাচ্ছিলেন গৃহস্থালির সামগ্রী কেনার জন্য। পথিমধ্যে বেওয়ারিশ একটি কুকুর তার পা কামড়িয়ে মারাত্মক জখম করে। পরে তিনি স্থানীয় একটি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন।
কালিগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, বাংলাদেশের আইনে প্রাণী নিধন কররার ব্যাপারে আইনত বাধা রয়েছে। আগে একটি প্রকল্প চালু ছিল যখন কুকুরকে ইনজেকশনের মাধ্যমে মারা যেত। এই মুহূর্তে আমরা সেটা করতে পারছিনা। কালিগঞ্জ স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রেজওয়ানা রশীদ বলেন, আগে ডগ ভ্যাকসিনেশন করা হতো এই মুহূর্তে এটা সরকারিভাবে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সুতরাং কুকুরে কামড় দিলে সাথে সাথে সাবান পানি দিয়ে ক্ষতস্থান ধুয়ে নিতে হবে। পরে যত দ্রুত সম্ভব ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে। যেহেতু উপজেলায় এই ভ্যাকসিনটি নেই তাই আপাতত টঙ্গী সরকারী হাসপাতাল থেকে ফেক্স আন্টি নিয়ে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।
এব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ বলেন, কুকুরের কামড়ের মাধ্যমে রেবিট ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে। এটি খুবই মারাত্মক একটি রোগ যাদ দ্রুত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। যেহেতু প্রাণিধন আইনত দণ্ডনীয় সেহেতু আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। কুকুর কামড়ালে দ্রুত শরীরে ভ্যাকসিন দিতে হবে। তবে কোন ব্যবসায়ী যদি সুযোগের অপব্যবহার করে ভ্যাকসিনের দাম বেশি রাখে তাহলে অবশ্যই তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।