নওগাঁর মহাদেবপুরে শিব মন্দির ও মূর্তি ভাংচুরের ঘটনায় আটক ১


নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর মহাদেবপুরে শিব মন্দির ও মূর্তি ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। সেই সাথে মন্দিরের পাশে রাখা প্রায় ২০ লাখ টাকা মূল্যের গাছের গুল নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ স্থানীয় ৩-৪জনের নেতৃত্বে শতাধিক ব্যক্তি এসে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এ ঘটনায় পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছে। শনিবার সকালে ভুক্তভোগী দ্বিজেন মন্ডল ৬-৭ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করেছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার (২৮ মার্চ) সকালে উপজেলার সফাপুর ইউনিয়নের ঘাসিয়াড়া গ্রামে। এঘটনায় আতঙ্ক বিরাজ করছে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে। তারা সঠিক তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের বিচার দাবি করেছেন।এদিকে পুলিশ খবর পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। সেই সাথে ফজলুর রহমান বুলেট নামের একজনকে আটক করেছে। আর পুলিশের দ্রুততম এমন ভূমিকায় অনেকটাই খুশি হয়েছেন তারা।
জানতে চাইলে ওই গ্রামের সার্বজনীন শিব ও দুর্গা মন্দির কমিটির এবং সফাপুর ইউনিয়ন পূজা উৎযাপন পরিষদের সভাপতি ভুক্তভোগী দ্বিজেন্দ্রনাথ মন্ডল অভিযোগ করে মুঠোফোনে বলেন, আমার দানকৃত জমিতে দীর্ঘদিন আগে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রায় ৪ মাস পূর্বে ব্যক্তি মালিকানা জমিতে লাগানো ২২৫টি মেহগনি গাছ কেটে সেগুলোর গুল মন্দিরের পাশে স্তুপাকারে সাজিয়ে রাখা হয়।
শুক্রবার সকাল ১১ টার দিকে একই উপজেলার ঈশ্বর লক্ষীপুর গ্রামের মৃত বজলুর রহমান সরদারের পুত্র একে ফজলুর রহমান বুলেট, বিনোদপুর গ্রামের আমজাদ মেম্বার ও একই গ্রামের সালামের পুত্র নাসির উদ্দীন এবং ঘাসিয়াড়া গ্রামের অনিল চন্দ্র মন্ডলের ছেলে গৌউর চন্দ্র মন্ডলের নেতৃত্বে শতাধিক লাঠিয়াল বাহিনী প্রায় ৪০ ভুটভুটি নিয়ে এসে সন্ত্রাসী কায়দায় মন্দিরে হামলা চালিয়ে মন্দির ও মন্দিরে থাকা শিব মূর্তি ভাংচুর করে। এছাড়া মন্দিরের পাশে রাখা প্রায় ২০ লাখ টাকা মূল্যের কাঠের ওই গুলগুলো লুট করে পালিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, আমার কিছু জমির উপর বুলেটের কুনজর পড়ে। প্রায় দুই বছর আগে থেকে জাল কাগজ করে সে জমিগুলো দখলের পাঁয়তারা করছে। মূলত পূর্ব শত্রুতার জেরে তারা এরকম কাজ করেছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই। থানায় মামলা করা হয়েছে। ফজলুর রহমান বুলেট পুলিশ হেফাজতে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
শনিবার দুপুর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আমজাদ মেম্বার মুঠোফোনে বলেন, আমি এই বিষয়ে কিছুই জানি না। তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ তুলছে। একদিন দ্বিজেন্দ্রনাথ মন্ডল বিএনপিকে গালি দিয়েছিল। আমি সেটা প্রতিবাদ করেছিলাম। সেই জন্যই হয়তোবা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ তুলছে। এখন ডিজিটাল যুগ। আমি যদি জড়িত থাকি, তাহলে আমার বিচার হবে।
মহাদেবপুর উপজেলা পূজা উৎযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রভাত ব্যানার্জি বাবুল মুঠোফোনে বলেন, আমি শোনা মাত্রই ওসিকে বলেছি। তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। মন্দির ও মূর্তি ভাঙা কাম্য নয়। আশা করছি দ্রুত সঠিক বিচার পাবো।
জানতে চাইলে নওগাঁ জেলা পূজা উৎযাপন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ চন্দ্র সরকার বলেন, এটা একটা ন্যাক্কারজন্য ঘটনা। মন্দির ও মন্দিরে থাকা মূর্তি ভাঙার দুঃসাহস যারা দেখিয়েছেন, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি কোন নিরপরাধ ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হয় সেই বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।
মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ শাহীন রেজা মুঠোফোনে বলেন, ঘটনার দিন খবর পাওয়া মাত্রই সেখানে গিয়েছিলাম। এবং ওই দিন রূতেই প্রধান অভিযুক্ত ফজলুর রহমান বুলেটকে আটক করা হয়েছে। মূলত গাছ নিয়ে এই ঘটনা। দ্বিজেন মন্ডল ৬-৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আসামি করে একটা মামলা করেছে। মামলাটি চুরি এবং গাছ পড়ে টিন ও মূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে করেছেন। সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বুলেটকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।