সোমবার, ৩১শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

রাজাপুরে লাইলাতুলকদর নামাজরত অবস্থায় মসজিদে মুসুল্লির মৃত্যু

ঝালকাঠি প্রতিনিধি: পবিত্র লাইলাতুল কদর ও জুমাতুল বিদার পুণ্যময় রাতে নামাজ আদায় করতে গিয়ে মসজিদেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন ৯০ বছরের এক প্রবীণ মুসল্লি। রাজাপুর উপজেলার পুটিয়াখালি গ্রামের সাহেব আলী (৯০)

দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় বসবাসের পর মাত্র চার বছর আগে গ্রামের বাড়িতে ফেরেন। বৃহস্পতিবার রাতে এশার নামাজ আদায়ের জন্য মোল্লা ফাউন্ডেশন ওয়াকফ এটেস্ট জামে মসজিদে প্রবেশের সময়ই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।

প্রত্যক্ষদর্শী ও মুসল্লিদের বরাতে জানা যায়, সাহেব আলী ওযু শেষ করে দ্রুত মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করছিলেন। ঠিক তখনই হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যান তিনি। উপস্থিত মুসল্লিরা তাঁকে দ্রুত ধরে ফেলেন। মুসল্লি নিপু সিকদার, যিনি একজন হোমিও চিকিৎসক, তাঁর পালস চেক করে নিশ্চিত করেন যে সাহেব আলী আর জীবিত নেই।

এদিকে, নামাজরত মুসল্লি ইলিয়াস মোল্লা জানান, তিনি তখন ফরজ নামাজ আদায় করছিলেন। ইমাম সালাম ফেরানোর ঠিক আগমুহূর্তে সাহেব আলী মসজিদে প্রবেশ করেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ঘটনাটি দেখেই ইমাম দ্রুত নামাজ শেষ করে তাঁর কাছে ছুটে যান।

মসজিদের ইমাম ইব্রাহিম খান বলেন, “সাহেব আলী ছিলেন আমাদের মসজিদের নিয়মিত মুসল্লি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ তিনি সবসময় এখানেই আদায় করতেন। সেদিন একটু দেরি করে আসলেও, দুর্ভাগ্যবশত নামাজ শুরু করতে পারলেন না। তবে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেলেন এক পবিত্র রাতে।” তিনি আরও বলেন, “সেদিন ছিলো লাইলাতুল কদর ও জুমাতুল বিদার রাত— এমন এক বরকতময় রাতে মসজিদে এসে মৃত্যুবরণ করা নিঃসন্দেহে সৌভাগ্যের বিষয়। আশা করি, আল্লাহ তাঁকে জান্নাতের প্রথম সারির মুসল্লিদের কাতারে স্থান দেবেন।”

সাহেব আলীর কোনো ছেলে সন্তান নেই, চার কন্যা সন্তানের মধ্যে তাঁর বড় মেয়াই দেখাশোনা করতেন। দীর্ঘদিন ঢাকায় থাকার পর, চার বছর আগে তিনি গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন এবং বড় মেয়ের সাথেই বসবাস করছিলেন। পরিবারে তিনি ছিলেন সকলের শ্রদ্ধার পাত্র।

সাহেব আলীর নাতি, তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জলিল আদিক কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমি ঢাকায় পড়াশোনা করি। ঈদের ছুটিতে বাড়িতে ফিরে নানাকে জড়িয়ে ধরেছিলাম, বুঝিনি সেটাই হবে শেষবারের মতো। আমরা প্রায়ই একসাথে মসজিদে নামাজ পড়তে যেতাম। কিন্তু সেদিন আমি একটু দেরি করেছিলাম, আর নানা চলে গিয়েছিলেন আগে। ভাবিনি, তিনি আর আমাদের মাঝে ফিরবেন না।”

মসজিদের সভাপতি হুমায়ূন কবির মোল্লা (৬২) বলেন, “আমি তখন মসজিদে নামাজরত ছিলাম। সাহেব আলী নামাজ আদায় করতে এসে মৃত্যুবরণ করেছেন, এটি আমাদের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। আল্লাহ যেন তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন, আমরা সবাই তার জন্য দোয়া করি।”

একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ হিসেবে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সাহেব আলী নামাজের প্রতি অনুগত ছিলেন। পবিত্র রজনীতে মসজিদেই তাঁর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা গ্রামবাসীর মনে এক গভীর শূন্যতার সৃষ্টি করেছে। তবে স্থানীয়রা মনে করেন, এমন এক রাতে, এমন এক পুণ্যময় স্থানে মৃত্যুবরণ করাকে সৌভাগ্য বলেই মনে করা উচিত। সাহেব আলীর মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে, তবে সবাই তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করছেন।

সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

এই সপ্তাহের পাঠকপ্রিয়