সঞ্জিব দাস, গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: পটুয়াখালীর উপকূলীয় গলাচিপা উপজেলার বেশ কয়েকটি নদীতে নিষিদ্ধ জালের ব্যবহার সম্প্রতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে নির্বিচারে ধ্বংস হচ্ছে ইলিশের পোনাসহ অসংখ্য প্রজাতির মাছ। এই সব অসাধু জেলেরা উপজেলা শহরে, স্থানীয় হাট বাজারে এমনকি পাড়ামহল্লায় ঘুরে ঘুরে প্রকাশ্যে পোনা মাছ বিক্রি করছেন।জানা গেছে, ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত পাঁচটি অভয়াশ্রমে মাছ ধরার ওপর বর্তমানে নিষেধাজ্ঞা চলমান রয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, গলাচিপা উপজেলার আগুনমুখা, ডিগ্রি, দারচিড়া, রামনাবাদ ও বুড়াগৌরাঙ্গ, তেতুলিয়া ও দাড়ভাঙ্গা নদী এলাকাজুড়ে ‘বাদাজাল, বেহুন্দী কিংবা বেড়জাল’ নামে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে অবাধে ইলিশ, পোয়া ও চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির পোনা মাছ শিকার করছে। এই ইলিশের পোনাগুলো পাড়ামহল্লায় এমনকি হাট-বাজারে চাপিলা মাছ বলে বিক্রি করা হচ্ছে। এভাবে ইলিশের পোনা নিধন হতে থাকলে ‘ইলিশ ধরা নিষেধের কোনো ইতিবাচক ফল পরিলক্ষিত হবে না বলে সচেতনমহল মনে করছেন। এমনকি এতে করে আগামী কয়েক বছরে নদীতে ইলিশ মাছের সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করবে।নাম প্রকাশ না করার শর্তে চরবাংলা এলাকা ও পানপট্টি গ্রামের একাধিক জেলে বলেন, জাটকা বিক্রি ও ধরা নিষিদ্ধ থাকলেও মৎস্য বিভাগের নজরদারি বা অভিযান না থাকায় ইলিশের পোনাসহ নানা জাতের মাছের পোনা নিধন ও বাজারজাত করা হচ্ছে।
প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জের হাটবাজারে নিয়েও জেলেরা এই পোনাকে চাপিলা মাছ নামে বিক্রি করছে। আবার গুড়া মাছগুলো পরবর্তীতে শুঁটকি বানিয়েও বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিদিন কী পরিমাণ পোনা মাছ নিধন হচ্ছে তা নিজের চোখে না দেখলে কল্পনা করাও কঠিন। তারা আরো জানান, গলাচিপা মৎস্য বিভাগের গাফিলতিতে আগামীতে ইলিশ মাছ রক্ষা করা সম্ভব হবে কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিবে। নামমাত্র অভিযান পরিচালনা করে মৎস্যবিভাগ তাদের কর্তব্য শেষ করছে। নদীতে নৌ-পুলিশ ও মৎস্যবিভাগের যৌথ অভিযান চলমান থাকলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অতি নগন্য বলে জানান স্থানীয়রা।গলাচিপা মৎস্যবিভাগ থেকে জানা গেছে, এ বছরের ১৫ মার্চ পর্যন্ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা হয়েছে দু’টি এবং থানা পুলিশের সহায়তায় নৌবাহিনীর অভিযান হয়েছে ১৭টি।
এতে কারেন্ট জাল আটক হয়েছে দেড় লাখ মিটার এবং জাটকা বা গুঁড়ামাছ আটক হয়েছে ৬০০ কেজি। বেহেন্দি জাল ১১টি, অন্যান্য জাল ১৩টি জব্দ করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।জানা যায়, দীর্ঘ দিন ধরে জাটকা মাছ পরিবহনের নিরাপদ রুট হিসেবে রতনদী তালতলী ইউনিয়নের বদনাতলী লঞ্চ ঘাটটি ব্যবহার হয়ে আসছে। রাত যত গভীর হয় এ ঘাটে অপরাধের মাত্রা ততই বাড়তে থাকে। তাদের রয়েছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট সব সময় স্থানীয় রাজনীতির সাথে সুসম্পর্ক রেখে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে থাকে।স্থানীয়রা জানান, চরবিশ্বাস এলাকার চর বাংলার তেতুলিয়া নদীর উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তে আফজাল, রাজ্জাক মৃধা, জহিরুল, ইসমাইল, শাহা তালুকদার ও তাদের লোকজন উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় ৫০টি বেহুন্দী জাল পাতে।
গলাচিপা মৎস্য বিভাগ প্রতি বেহুন্দী জাল থেকে প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে জেলেদের কাছ থেকে আদায় করে বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি রাত সাড়ে ১১টার দিকে বদনাতলী থেকে জাটকা ও কাচকি বোঝাই দু’টি ট্রাক কাটাখালী বাজারে এসে ভিড়লে স্থানীয়রা ওই ট্রাক দু’টি আটক করে প্রশাসনকে খবর দেয়। ঘটনাস্থলে পুলিশসহ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো: জহিরুন্নবী উপস্থিত হন। ট্রাক দু’টি জব্দ করে ওই রাতে থানায় নিয়ে আসে। পরে ট্রাক দু’টি ছেড়ে দেয়া হলেও মাছগুলো পচে যাওয়ার উপক্রম হয়। এদিকে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতিরি গলাচিপা শাখার সভাপতি জাকির হোসেন জানান, মৎস্য অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। তিনি একা একা অভিযান চালান। আমরা নিষিদ্ধ জাল আটক করে তাকে জানালেও তিনি তখন আসেন না।
গলাচিপা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো: জহিরুন্নবী জানান, গলাচিপায় কোনো ধরনের জাটকা মাছ নিধন হচ্ছে না। যদি অবৈধ মাছ এ রুটে আসে সেগুলো রাঙ্গাবালীর নদী থেকে ধরা হতে পারে। তিনি অবশ্য বিভিন্ন নদীতে নির্বিচারে জাটকা নিধন হচ্ছে বলে স্বীকার করেন।
সংবাদটি শেয়ার করুন।
Copyright © 2025 সংবাদের আলো. All rights reserved.