সঞ্জিব দাস, গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: জীবনের শতবর্ষ পেরিয়ে এসে ভোটার হওয়ার অধিকার পেলেন আম্বিয়া বেগম। তার বয়স হয়েছে ১০৫ বছর। রবিবার (১৬ মার্চ ২০২৫) গলাচিপা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নতুন ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির কার্যক্রম চলছিল। সেখানে তিনি ভোটার হতে হাজির হলে উপস্থিত সবাই বিস্মিত হয়ে যান। আম্বিয়া বেগমের জীবন যেন এক চলমান ইতিহাস। তিনি বাউফলের কুদ্দুস খানের স্ত্রী। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় বসবাসের ঠিকানা বদলাতে হয়েছে বহুবার। বর্তমানে তিনি গলাচিপা উপজেলার সদর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। এতদিন ভোটার না হতে পারার কারণ জানিয়ে তার নাতি রাকিবুল হাসান বলেন, ১৯৭২ সালে দাদার মৃত্যুর পর দাদি বিভিন্ন স্থানে বসবাস করেছেন। সেই কারণেই তিনি এতদিন ভোটার হতে পারেননি। তবে এবার আমরা উদ্যোগ নিয়ে তাকে ভোটার করালাম। আম্বিয়া বেগমের ভোটার হওয়ার উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করেছেন গলাচিপা সদর ইউনিয়নের তথ্য সংগ্রহকারী ও রতনদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মোছা. লুৎফুন নাহার। তিনি তার তথ্য সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় নথিপত্র তৈরি করেন।গলাচিপা সদর ইউনিয়নের সুপারভাইজার ও বুড়িয়ার বাঁধ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জামাল উদ্দিন জানান, আম্বিয়া বেগমের জন্ম নিবন্ধন সংগ্রহ করে ভোটার ফরম পূরণ করা হয়েছে। দ্রুতই তিনি জাতীয় পরিচয়পত্র পাবেন। আম্বিয়া বেগম ভোটার হতে পেরে উচ্ছ্বসিত। বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও চোখেমুখে ছিল আনন্দের ঝলক। তার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, জীবনে অনেক কিছু দেখলাম, কিন্তু ভোট দিতে পারিনি। এতদিন পর হলেও এবার ভোটার হতে পেরে ভালো লাগছে। এক শতকেরও বেশি সময় পর ভোটার হওয়ার সুযোগ পেয়ে তার চোখে ছিল কৃতজ্ঞতার ছাপ। পরিবারের সদস্যরা যখন তাকে ভোটার হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন,
তখন তিনি খুশিতে সবার জন্য দোয়া করেন। নতুন ভোটার তালিকায় নাম ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই আম্বিয়া বেগম দেশের বয়োজ্যেষ্ঠ ভোটারদের মধ্যে অন্যতম হয়ে গেলেন। তার দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ভোটার হতে পারার আনন্দ পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে। এই ঘটনা শুধু আম্বিয়া বেগমের নয়, বরং বাংলাদেশের ভোটার তালিকায় এক অনন্য নজির হয়ে থাকল। দীর্ঘ এক শতকেরও বেশি সময় পর ভোটার হওয়ার এই ঘটনা প্রমাণ করে, বয়স যতই হোক, গণতান্ত্রিক অধিকারের অংশীদার হওয়া কখনোই দেরি হয়ে যায় না।
সংবাদটি শেয়ার করুন।
Copyright © 2025 সংবাদের আলো. All rights reserved.