চৌহালীতে নি:সন্তান বৃদ্ধদের ঘর ছাড়া করলেন সুদখোর শিক্ষক মতিন, পলিথিন টাঙ্গিয়ে দিনযাপন


জহুরুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার: সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার যমুনার দুর্গম চরের সুফিয়া খাতুন (৫৯) ও দিনমুজুর জয়নাল আবেদিন মোল্লা (৭১)। এই বয়োবৃদ্ধ নি:সন্তান দম্পত্তি সুদি টাকা পরিশোধ করতে বিলম্ব হওয়ায় প্রায় ৩ মাস ধরে গৃহছাড়া করেছে সুদি কারবারি স্কুল শিক্ষক আব্দুল মতিন। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে একটি সুত্র। এদিকে দেনার ভয়ে এলাকা ছেড়ে ঢাকায় দিনমুজুরির কাজ করছে বৃদ্ধ জয়নাল আবেদিন। আর খোলা আকাশের নিচে কাগজ টাঙ্গিয়ে অসহায় দিন যাপন করছে বৃদ্ধা সুফিয়া খাতুন। তাদের পাশে দাড়াতে কর্তাব্যক্তি ও সমাজের বৃত্তবানদের সহযোগিতার হাত বাড়াতে আর্জি জানিয়েছেন সমাজকর্মী মামুন বিশ্বাস। জানা যায়, চৌহালী উপজেলার উমারপুর ইউনিয়নের দুর্গম পাথরাইল দক্ষিণপাড়া চরে বসবাস করছিল জয়নাল আবেদিন ও সুফিয়া খাতুন দম্পত্তি। তাদের ঘরে কোন সন্তান নেই। ২৬ টিনের ঘরে তারা কোনরকম খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছিল। তবে এরমধ্যে কয়েক বছর আগে আগশিমুলিয়া উত্তরপাড়া সরকারী প্রাথমমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিনের কাছ থেকে এক লাখ টাকা দেনা করেন।এর বিনিময়ে সুদ হিসেবে বছরে ১৫-২০ মন ধান দেয়া হয়। তবে এবছর চাহিদা মত ধান দিতে ও অর্থ পরিশোধ করতে ব্যার্থ হয় অসহায় পরিবারটি। একারনে প্রায় তিন মাস আগে সুদিকারবারী মতিন মাষ্টার দলবল নিয়ে অন্যের কাছে বৃদ্ধ দম্পতির থাকার বাসগৃহ টিনের ঘর বিক্রি করে টাকা নিয়ে নেয়। এরপর থেকে বৃদ্ধা সুফিয়া খাতুন খোলা আকাশের নিচে পলিথিন টাঙ্গিয়ে ঝুঁপড়ি ঘর তুলে বসবাস করছে। তার বয়োবৃদ্ধ স্বামী জয়নাল আবেদিন দেনা পরিশোধ করতে না পেরে ঢাকা গিয়ে দিনমুজির কাজ করছে। মাঝে মধ্যে চরে এসে স্ত্রীর খোঁজ রাখছেন। তবে এ ছাড়া তাদের খোঁজ খবর নেয়ার কেউ নেই বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। স্থানীয় এলাকার ইউসুফ ও আব্দুর রশিদ জানান, আখশিমুলিয়া উত্তরপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালযয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মিয়ার নিকট হইতে তিন চার বছরে আগে সুদি করে এক লক্ষ টাকা দেনা এনেছিল সুফিয়া ও জয়নাল। তারা টাকা পরিশোধ করতে না পাড়ায় পাওনাদারেরা তার ঘর বিক্রি করে টাকা নিয়ে যায়। এখন মানবতার জীবন যাপন করছেন। যার কারণের রমজানের মধ্যেও অতি কষ্টে রোজা পালন করছে।
এদিকে বৃদ্ধা সুফিয়া খাতুন জানান, পাওনাদারের টাকা দিতে চাপ দিতেছিল, ঘর বেচে দিছে। এখন অন্যের জায়গায় ঝুপড়ি তুলে আছি। আমাদের কোন সামার্থ্য নাই, এজন্য কাগজ টাঙ্গিয়ে থাকি। একটা ঘর কেউ দিলে শেষ জীবনের একটু হলেও শান্তি পেতাম। শরীরে নানা অসুখ দেখা দিয়েছে। সকলের সাহায্য চাই। এ বিষয়ে সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন বলেন, ১লাখ টাকায় মাত্র ১২ মন ধান দিয়েছিল। এখন আসল টাকাও দিতে পারে না, পরে ঘর বেচে তারাই সেচ্ছায় ৪৫ হাজার টাকা দিয়েছে। আমি সুদের কারবার করি না, এ কথা সঠিক না। এ বিষয়ে সমাজ কর্মী মামুন জানান, খবর পেয়ে অসহায় পরিবারের সাথে দেখা করে সামান্য কিছু খাদ্যদ্রব্য ও সহায়তা করেছি। একটি ঘর নির্মানে বৃত্তবানদের কাছে আর্থিক সহযোগিতা কামনা করছি। চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জুয়েল মিয়া ও থানার ওসি জিয়াউর রহমান জানান, দুর্গম চরের এ বিষয়িট জানা ছিল না, দ্রুতই খোজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।