পাহাড়ি লেবুর কদর দেশজুড়ে


রাঙামাটি প্রতিনিধি: বিস্তৃীর্ণ পাহাড়ি জমিতে উৎপন্ন লেবু এখন পার্বত্যাঞ্চলের গণ্ডি ছাড়িয়ে সারাদেশে রফতানি হচ্ছে। বেশ জনপ্রিয় এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এ লেবুর চাহিদা বিদেশেও দিন দিন বাড়ছে। তবে পুষ্ট, অপেক্ষাকৃত বড় ও দেখতে সুন্দর এমন লেবুর রপ্তানি সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। তাই রপ্তানিযোগ্য মানসম্পন্ন লেবু উৎপাদনের জন্য সরকারের কাছে ‘বিশেষায়িত অঞ্চল’ প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন পাহাড়ের স্থানীয় চাষি ও ব্যবসায়ী। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লেবুর ভালো ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা। অন্যদিকে লেবুর ন্যায্য দাম পেয়ে কৃষক ও ব্যবসায়ীরাও খুশি। চলছে রমজান মাসের প্রস্তুতি, খরার তাপদাহে যখন সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ,তখন মৌসুমের ফল লেবুর চাহিদা প্রচুর থাকে বলে চাষি ও খুচরা-পাইকারি বিক্রেতারা আর্থিকভাবে লাভবান হন বলে জানিয়েছেন ক্রেতা বিক্রেতারা। পাহাড়ি জনপদ রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির বিভিন্ন এলাকায় প্রতি বছর মাঝারি ও ক্ষুদ্র পরিসরে লেবুর চাষ হয়ে থাকে। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লেবুর ফলন ভালো হয়েছে। সে সাথে লেবুর দাম চড়া থাকায় কৃষকদের খরচ পুষিয়ে লাভের মুখ দেখছেন বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন কৃষকেরা। কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকা জুড়ে লেবুর বাগান রয়েছে এবং সেখানে প্রতি বছরই কমবেশি লেবুর চাষ হয়ে থাকে। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে লেবুর ফুল আসে এবং জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ মাস জুড়ে ফলন পাওয়া যায়। কয়েকবছর ধরে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানের পাহাড়ি জমিতে বাণিজ্যিকভাবে লেবুর চাষ শুরু হয়েছে। চাষি ও পাইকারী ব্যবসায়ী ছাড়াও খুচরা ব্যবসায়ীরা লেবু বিপণনের সাথে জড়িত।
পাহাড়ি লেবু চাষি বিলন ও রিতেষ চাকমা জানায়, লেবু সাধারণত ৫ জাতের হয়ে থাকে। কাগজী লেবু, পাতী, এলাচী, বাতাবী ও নতুন জাতের হাইব্রীড সিডলেস নামে একটি লেবু চাষও বর্তমানে হচ্ছে। স্থান, কাল ভেদে এসব লেবু পাহাড়ি জমিতে চাষাবাদ হয়। পরে এগুলো স্থানীয় হাটে বাজারজাত করা হয়। স্থানীয়ভাবে পাহাড়ে প্রচলিত নিয়মে লেবু দুই ঝুড়ি নিলে এক ভার হয়। সেরকম প্রতি ভারে ৫শ’র মতো লেবু থাকে। বর্তমানে প্রতি ভার লেবুর দাম ২-৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে কয়েকগুণ বেশি। ফলে কৃষকেরা বেজায় খুশি। ১টি লেবু খুচরা মূল্যে প্রকৃতি ভেদে ৫-১২ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। পার্বত্য অঞ্চলের এসব পাহাড়ি বাজার থেকে পাইকাররা দেশের বিভিন্ন স্থানে লেবু সরবরাহ করেন। পাহাড়ে উৎপাদিত এ লেবু ঢাকার কারওয়ান বাজার, সেনবাজার, মগবাজার, সদরঘাটসহ দেশের বিভিন্ন বড় বড় বাজারে সরবরাহ করে থাকেন ব্যবসায়ীরা।
সেখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে লেবু বাজারজাত হয়। বাগান মালিক ও চাষি লংগদুর শিলাছড়ি এলাকার মোহন চাকমা জানান, বাগানে লেবুর ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু সরকারিভাবে বাজারজাতকরণ, সংরক্ষণ এবং হিমাগার না থাকায় মালিকরা তাদের ন্যায্যমূল্য হতে বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা পরিত্যক্ত পাহাড়ি ভূমি চাষিদের লিজ দিয়ে লেবু চাষের আওতায় নিয়ে আসার জন্য সরকারের কাছে আহবান জানান। তাহলেই বিশেষায়িত জমি তৈরি করে পুষ্ট ও ভালো মানের রফতানিযোগ্য লেবু উৎপাদন ও রফতানি সম্ভব হবে। খুচরা ব্যবসায়ী লতিফ মোল্লা বলেন, সে লেবু বাগান মালিকের কাছ থেকে প্রতিটি লেবু ৪-৫ টাকা দরে ক্রয় করে। বাজারে খুচরা এক একটি লেবু ৮-১৫ টাকা দরে পর্যন্ত বিক্রি করেন। কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ইসরাফিল হক বলেন, শুধু পাহাড়েই ১৫ হাজার হেক্টর পাহাড়ি ভূমিতে লেবুর চাষাবাদ হয়। এতে উৎপাদনে লক্ষ্য মাত্রা অর্জিত হয়ে থাকে। সবচেয়ে ইতিবাচক বিষয় হলো এ এলাকার লেবু দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন বিদেশেও রফতানি হচ্ছে।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।