বংশাই নদীর পূন্যস্থান পূণ্যার্থীদের ঢল


জহুরুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার: টাঙ্গাইলের বংশাই নদীর বাসাইল কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সয়দামপুর গ্রামের অংশে দিনব্যাপী পূণ্যস্থান পূণ্যার্থীদের ঢল নামে। পূণ্যস্থন উপলক্ষে মেলা বসেছিল। ব্রিটিশ শাসনামল থেকে প্রতি বছর মাঘ মাসের পূর্ণিমায় সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ ও শিশুরা পাপমোচনের আশায় সয়দামপুর পূণ্যস্থানে অংশ নিচ্ছেন। স্থানীয়দের কাছে ওই পূণ্যস্থান ঐতিহ্যবাহী ‘ডুবর মেলা’ নামে পরিচিত। স্থানীয়রা জানায়, সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পাপ মোচন উপলক্ষে প্রতিবছর মাঘী পূর্ণিমার ভোরে মানত ও গঙ্গাস্রান করেন। গঙ্গাস্রান করলে সারা বছরের পাপ মোচন হয়। মনের আশা ও বাসনা পূরণ হয়। এই স্রানে অংশ নিলে পূণ্য মিলে। তাই দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসে গঙ্গাস্রানে অংশ নিয়ে তাদের মনের বাসনা পূরণ প্রার্থণা করেন। সরজমিনে দেখা যায়, মেলায় জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও আশপাশের জেলা থেকে পূণ্যার্থীরা এসেছেন। স্রানস্থলে ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত স্রানাৎসব হয়। নানা বয়সী নারী-পুরুষ ও কিশোর-কিশোরী স্রানাৎসবে অংশ নেয়।বংশাই নদীর সয়দামপুর অংশে জমির আইল ধরে ডুবর মেলা বসেছে। স্রানে অংশ নেওয়া শান্তি রায় বলেন, আমি টাঙ্গাইল শহর থেকে মাঘী পূর্ণিমার মেলায় এসেছি। এখানে আমি ১০-১২ বছর ধরে আসি। এখানে এসে স্রানে অংশ নেই- খুব ভালো লাগে, নিজেকে বেশ পবিত্র মনে হয়। আমাদের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এটি পূণ্য স্থান। মাঘী পূর্ণিমায় সাধারণত ভোর থেকে বিকাল পর্যন্ত স্রানানুষ্ঠান হয়। তবে কখনও কখনও দুপুর পর্যন্ত স্রান হয়। প্রায় ১০০ বছরের উপর এখানে স্রানানুষ্ঠান হচ্ছে। এ ডুবর মেলায় যারা আসে তারা মনের বাসনা নিয়ে গঙ্গাস্রান করতে আসেন। স্রান করলে মনের বাসনা পূরণ হয়। পূণ্যস্থানে অংশ নেওয়া আরতি রায় বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মনে করে মাঘীপূর্ণিমার তিথিত উত্তর বাহিত জলে স্রান করলে সারা বছরের পাপ মোচন হয়।
অনেকের বিশ্বাস থাকে স্রান করলে তাদের মনের আশা পূরণ হয়। যাদের ছেলে-মেয়ে হয় না তারা এখানে এসে সন্তানের আশায় স্রান করে। নানা মানুষ নানা বাসনা নিয়ে স্রানাৎসবে অংশ নেয়। মেলার মিষ্টি বিক্রতা ফজল আলী বলেন, আমি ৩২ বছর ধরে এই মেলায় আসি। মেলায় ভালোই মিষ্টি বিক্রি হয়। মেলায় ১০-১২ মণ মিষ্টি বিক্রি করা যায়। মেলায় অনেক লোকের সমাগম হয়। পুরোহিত রবীদ্র চক্রবর্তী বলেন, পূর্ব পুরুষ থেকে এই গঙ্গাস্রান শুরু হয়েছে। এ স্রানানুষ্ঠানকে মাঘীপূর্ণিমার গঙ্গাস্রান হিসেবেও অভিহিত করা হয়। ১৫-২০ জন পুরোহিত এই গঙ্গাস্রানে প্রতি বছর আসেন। দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন এ স্রানাৎসবে অংশগ্রহণ করে। পূণ্যার্থীরা তাদের মনের বাসনা নিয়ে এখানে আসেন। তারা ডুব দিয়ে ‘মা গঙ্গা’র কাছে মনের বাসনা ব্যক্ত করেন।
বাসাইলের কাঞ্চনপুর ইউপি চেয়ারম্যান শামীম আল মামুন জানান, ব্রিটিশ শাসনামলে বক্ত সাধু নামে খ্যাত এক ব্যক্তি সন্যাসীর (মাদব ঠাকুর) মূর্তি স্থাপন করে পূজা-অর্চনা শুরু করেন। এই পূজা উপলক্ষে তখন থেকেই স্রানাৎসব ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা প্রতি বছর মাঘী পূর্ণিমায় ডুবর মেলা পালন করে থাকেন। মেলা দেখত দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ আসেন। এই মেলা তখন থেকে ‘ডুবর মেলা’ নামে পরিচিত। এখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তা দিচ্ছে।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।