মঙ্গলবার, ২৫শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য আধ্যাতিক সাধু আন্তনীর তীর্থোৎসব অনুষ্ঠিত

পঙ্কজ সরকার নয়ন, গাজীপুর প্রতিনিধি: গাজীপুরের কালীগঞ্জে যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য প্রতিবছরের ন্যায় এবারও খ্রিস্টান ধর্মালম্বিদের পরম আরাধ্য ব্যক্তিত্ব আধ্যাতিক সাধু আন্তনীর তীর্থোৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। দীর্ঘ ৯দিন নভেনা প্রার্থনা শেষে শুক্রবার (০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) সকালে কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের পানজোড়ায় সাধু আন্তনীর তীর্থস্থানে দুই দফায় খ্রিস্টযোগে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় পালিত হলো খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সাধু আন্তনীর তীর্থোৎসব। তীর্থ যাত্রীদের আগমনে মঙ্গলপ্রদীপ জ্বালিয়ে গানে গানে মুখরিত হয়ে ওঠে সাধু আন্তনীর তীর্থস্থান প্রাঙ্গণ। নাগরী ধর্মপল্লী উদ্যোগে সকাল ৭টায় ও সকাল সাড়ে ১০টায় দুটি খ্রিস্টযোগে অনুষ্ঠিত হয়। তীর্থোৎসবের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বে হাজার হাজার ধর্মানুরাগী প্রার্থনায় অংশ নেন। প্রচলিত আছে ১৬৬৩ সাল থেকে কালীগঞ্জের পানজোরায় সাধু আন্তনীর স্মরণে এই তীর্থোৎসব পালিত হয়ে আসছে।তাই এবছর বিপুল উৎসাহ আর উদ্দীপনায় তীর্থোৎসব পালিত হচ্ছে। সমাগম হয়েছে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের। খ্রিষ্ট সম্প্রদায়ের মতে, মহান সাধু আন্তনীর জীবনে তিনি পিতা ঈশ্বরের দেয়া সদগুণ মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করেছেন। তিনি মাত্র ১৭ বৎসর বয়স থেকে ঈশ্বরের কাজে নিবেদিত হয়েছিলেন এবং আমৃত্যু ঈশ্বরের রাজ্য বিন্তারে কাজ করেছেন। এছাড়া প্রায় একযুগ ধরে যারা ঈশ্বরের প্রতি, তার একমাত্র পুত্র প্রভু যীশু খ্রিস্টের প্রতি এবং মা মারীয়ার প্রতি যাদের বিশ্বাস ছিল না তাদের বিশ্বাসকে দৃঢ় করতে কাজ করে গেছেন। তিনি তার জিহ্বা ব্যবহার করে খ্রিস্ট ধর্মের প্রচার করেছেন। তার মনোমুগ্ধকর ধর্মীয় বানী শ্রবণ করতে দূর-দূরান্ত থেকে জড়ো হতো হাজারো ভক্ত। তীর্থোৎসব আগত প্রভাত গমেজ সংবাদের আলোকে বলেন, মহান সাধু আন্তনী প্রভু যীশু খ্রিস্টের মতো অনেক আশ্চর্য কাজ করেছেন যা তার জীবদ্দশায় তাকে করেছে মহান। জীবনের অনেক ঘটনা আমরা বিভিন্ন পুস্তিকা পড়ে জানতে পেরেছি এবং আজও কোনো দ্রব্য হারিয়ে গেলে সাধু আন্তনীর কাছে প্রার্থনা করলে তা পাওয়া যায় বলে ভক্তদের বিশ্বাস। তার মৃত্যুর এতো বৎসর পরও সাধু আন্তনীর নিকট প্রার্থনা করলে ফল পাওয়া যায়।সাধু আন্তনী অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী আধ্যাত্মিক পুরুষ ছিলেন। তিনি দুরারোগ্য ব্যাধিগ্রস্তকে ছুঁয়ে দিলে রোগী সুস্থ হয়ে উঠত। সাধু আন্তনী ১১৯৫ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপে (বর্তমান পর্তুগাল) জন্মগ্রহণ করেন। তার কর্মজীবন কাটে ইতালির পাদুয়ায়। সাধুর অনুসারীরা বিশ্বাস করেন তার সঙ্গে শিশু যিশুর সাক্ষাৎ ঘটেছিল। এর মধ্য দিয়ে সাধু আন্তনী অলৌকিক ক্ষমতা অর্জন করেন। তার ভক্ত অনুসারীদের মতে, সাধু আন্তনীর নাম মুখে নিলে অন্তরে ভক্তিভাবের জন্ম নেয় এবং হারানো জিনিস ফিরে পাওয়ার জন্য সাধু আন্তনীর কাছে প্রার্থনা করলে সুফল পাওয়া যায়। মাত্র ৩৯ বছর বয়সে ক্ষণজন্মা এ মহাপুরুষ ইহলোক ত্যাগ করেন। তাই প্রতি বছর তীর্থোৎসবে দূর-দূরান্ত, এমনকি দেশ-বিদেশ থেকে প্রচুর সংখ্যক ভক্ত উপস্থিত লক্ষ্য করা যায়। সরেজমিনে দেখা যায়, শুক্রবার সকাল থেকে দখিনা হালকা বাতাস ও শীত উপেক্ষা করে দুই খ্রিস্টজাগে তীর্থযাত্রীরা আসতে শুরু করে। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জনসমুদ্রে পরিণত হয় নাগরী ধর্মপল্লী পালকীয় পরিষদ প্রাঙ্গণ। এতে নিরাপত্তার চাঁদরে ঢাকা ছিল পুরো পালকীয় পরিষদ প্রাঙ্গণ। তীর্থোৎসবটি শুধু খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের হলেও উৎসবে অংশ নেয় বিভিন্ন জাতি ধর্মের হাজার হাজার দেশ-বিদেশ ভক্ত। সকালে দুটি পর্বের তীর্থোৎসবে আরতি আগমনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা। আরতি শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর শুরু হয় খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের বাণী পাঠ ও উপদেশ। খ্রিস্ট প্রসাদ বিতরণ শেষে ধন্যবাদ জানিয়ে সমাপনী আশীর্বাদ জ্ঞাপন করেন।

সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

এই সপ্তাহের পাঠকপ্রিয়