উল্লাপাড়ার অনলাইন জুয়ার নেটওয়ার্ক সারাদেশে জুয়ারিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে
রায়হান আলী, উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার অনলাইন জুয়ার নেটওয়ার্ক সারাদেশে। এই ফাঁদে সর্বশান্ত হচ্ছে উঠতি বয়সের তরুণ, যুবকরা। পুরো উপজেলা ছেয়ে গেছে এই অনলাইন জুয়া। এর মধ্যে বড়পাঙ্গাসী ইউনিয়নের উপজেলার খাদুলি গ্রামের অধিকাংশ মানুষের অনলাইন জুয়ার সাথে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। জুয়ার পরিচালনা মধ্যস্থতা করে সারাদেশে অনলাইন জুয়ার নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে অনেকের বিরুদ্ধে। উপজেলার প্রত্যন্ত এই গ্রামের ৬ হাজারের বেশি জনসংখ্যার বেশিরভাগ মানুষ অনলাইন জুয়ার সাথে সম্পৃক্তার অভিযোগ উঠেছে । এই গ্রামের অনেকেই পেশা হিসেবে বেঁছে নিয়েছে এই অপরাধ কর্মকান্ড। অজপাড়া গাঁয়ে লোকচক্ষু আড়ালে অনলাইন জুয়া কার্যক্রম গড়ে ওঠার অনুসন্ধানে পাওয়া যায়। এরা সাধারণত ভেলকি ইউএসডি, অ্যান্ড্রয়েড ফোনের মাধ্যমে মোস্টবেট, ওয়ান এক্সবেট, বেট উইনার, বেট৩৬৫, মেলবেট, লাইনবেট, জিটুইন, ক্রিকেক্স, প্যারিম্যাচ, এমসিডব্লিউসহ বিভিন্ন অ্যাপসে জুয়া পরিচালনা করে। এতে প্রতারণার শিকার হচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকার তরুণ, যুবকেরা।মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) সরেজমিনে অনুসন্ধানে খাদুলি গ্রামে গিয়ে জানা যায়, এই গ্রামের অধিকাংশ তরুণ, যুবক অনলাইন জুয়া পরিচালনা করে বিপুল পরিমাণে টাকাপয়সা করেছে। আবার কেউ হয়েছে নিঃস্ব। এদের মধ্যে খোঁজ পাওয়া যায় ইন্ডিয়ান জুয়ার সাইট “বেলকি ইউএসডি” এর বাংলাদেশী ডিলার বৈরাল প্রামাণিক এর ছেলে মনছুর আলী। সে একসময় রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করলেও বর্তমাণে বিপুল পরিমাণে টাকাপয়সা করেছেন। কিনেছে R15 ব্যন্ডের মোটরসাইকেল। এই অল্প সময়ে এতো টাকাপয়সার মালিক হওয়ায় আশ্চর্য হয়েছে এলাকার লোকজন। লেখাপড়া অল্প থাকলেও মনছুর এ্যাড্রুয়েড ফোনের মাধ্যমে অনলাইন জুয়া পরিচালনা করতে পারেন অনায়াসে। বিকাশে মাধ্যমে টাকা গুলো লেনদেন করা হতো বলে তথ্য পাওয়া যায়। ঢাকার কেরানীগঞ্জের রুহিতপুর এলাকার ফ্লেক্সিলোড ব্যবসায়ী মোঃ রাশেদ মিয়া। সে জানান ফেজবুকে চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে যোগাযোগ করলে পরিচয় হয় উল্লাপাড়ার খাদুলি গ্রামের মনছুর এর সাথে। মনছুরের প্ররোচনায় ব্যবসায়ী রাশেদ মিয়া বিকাশের মাধ্যমে প্রথমে ২০ হাজার, পরবর্তী বিনিয়োগ বাড়তে, বাড়তে ১০ লাখ পর্যন্ত বিনিয়োগ করেন মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে। ২০২৪ এর জুলাই মাসে হঠাৎ করেই রাশেদ মিয়া দেখতে পায় “বেলকি ইউএসডি) এ্যাপস (জুয়ার সাইট) বন্ধ। সেখানে তার ছিলো ৯৮৮৫ ডলার। এই সাইটের বাংলাদেশী ডিলার মনছুরের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি আজ না কাল টাকা দিবে বলে তাকে দিন দেয়। পরবর্তী বলেন ইন্ডিয়ায় গিয়ে টাকা উত্তোলন করতে হবে, একথা বলে রাশেদ মিয়ার কাছে আরে ৮০ হাজার টাকা নেয়। কিন্তু সেই টাকাও ফেরত পাননি তিনি।বর্তমানে তার পুঁজি হারিয়ে ফ্লেক্সিলড ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। একই এলাকার স্থানীয় ডাক্তার রাশেদ (৪০),মোদি ব্যবসায়ী সোহেল মিয়া (৩৮) ও প্রতারিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। রাশেদ মিয়ার স্ত্রী মনিকা আফরিন জানান তার স্বামী মনছুরের মাধ্যমে প্রতারিত হয়ে সাংসারিক কলহের সৃষ্টি হয়েছে। পুঁজি হারিয়ে তাদের পরিবার একমাত্র সম্বল ব্যবসা বন্ধ হয়েছে। বেলকি ইউএসডি’র বাংলাদেশের ডিলার মনছুর আলী এর সাথে কথা বললে তিনি জানান ডলার গুলো তার কাছে রয়েছে, সে তাদের টাকা নিয়েছে তাদের কে ফেরত দিবে। মনছুর এর সাথে কথা বলার একটি রেকর্ড গণমাধ্যম কর্মীদের হাতে এসেছে, সেখানে মনছুর বলছে সে ইন্ডিয়া আছে টাকাগুলো উত্তলন করে সে আর তাদের সাথে খেলবে না। অনুসন্ধানে আরো উঠে এসেছে খাদুলি গ্রামের তহমিল আকন্দের ছেলে ওমর আকন্দ (২৬) এর নাম। সে আগে মাঠে কাজ করতেন, বর্তমানে ৩ বছরে হয়েছেন কোটি টাকার মালিক। অনলাইন জুয়ার সাইটের ডিলার হয়ে রাতারাতি প্রতারণার মাধ্যমে হয়েছেন কোটিপতি। প্রশাসনের ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে দেশের বিভিন্ন বিভিন্ন এলাকার লোকজনের সাথে বিকাশের মাধ্যমে লেনদেন করে এই ব্যবসা পরিচালনা করছে। তার স্ত্রী পাখি খাতুন ও এই ব্যবসার সাথে জড়িত।এছাড়াও একই এলাকার আব্দুল খালেক ছেলে খায়রুল ইসলাম (১৭) তার নামে অভিযোগ রয়েছে সে অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণে টাকাপয়সা করেছে। এলাকায় তার ব্যপক প্রভাব রয়েছে, বয়স কম হলেও জুয়া পরিচালনার মাধ্যমে টাকাপয়সা করেছে। এই টাকা গুলো লেনদেন করছে বিকাশ,নগদ অথবা রকেটে। লেখাপড়া বাদ দিয়ে জুয়ার ব্যবসাকেই পেশা হিসেবে নিয়েছেন। একই মহল্লার আজিজ আকন্দ এর ছেলে রনি আকন্দ (১৯), নজরুল আকন্দ (৩৫),আক্কাস আকন্দের ছেলে আশিক আকন্দ (১৯),ষষ্ঠী ভৌমিকের ছেলে দীপঙ্কর ভৌমিক,জলিল আকন্দের ছেলে মমিন আকন্দ (১৯)। মিলে অনলাইন জুয়ার চক্র গড়ে তুলেছেন। এছাড়াও এই গ্রামের কোরবান আলীর ছেলে আরিফ হোসেন (৩০) এককভাবে গ্রামে বসেই অনলাইন জুয়ার ডিলারী কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে । এলাকাবাসীর অভিযোগ আরিফ হোসেন প্রতি হাজারে ২০ টাকা কমিশনে, অনলাইন জুয়ার কয়েন বিক্রি করেন।সে একসময় কৃষিকাজ করলেও বর্তমানে অনলাইন জুয়া কার্যক্রম পরিচালনা করে বিপুল টাকার মালিক হয়েছেন। এ বিষয়ে অভিযুক্ত আরিফ হোসেন জানান সে একসময় অনলাইন জুয়ার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন এখন তিনি এগুলো আর করেননা বলে দাবি করেন। খাদুলী এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানায় অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে রাতারাতি টাকাপয়সার মালিক হয়েছে অনেকেই। পুলিশ অনেক সময় গ্রেপ্তার করে, এরপর জামিনে বেড়িয়ে এসে আবারও এই কর্মকান্ড চালিয়ে যায় । অনলাইন জুয়া খেলে তাদের গ্রামে অন্তত ৪০ টি R15 মডেলের গাড়ি কিনেছে এর সাথে সম্পৃক্তরা। এরা ধরাছোঁয়ার বাইরে, সারাদেশের মানুষ প্রতারিত হচ্ছে, গুটিকয়েক মানুষের কাছে। তবে উল্লাপাড়া মার্চেন্টস পাইলট টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের প্রভাষক আব্দুস ছালাম বলে অনলাইন জুয়া বন্ধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। যারা জড়িত তাদের কে আইনের আওতায় আনতে হবে। এ বিষয়ে উল্লাপাড়া মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান বলেন কারো যদি অনলাইন জুয়ার সাথে সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় তাহলে তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।