সংবাদের আলো ডেস্ক: ৪ বছরের শিশু নাঈমা, সাড়ে ৫ বছরের আহমুদুল্লাহ আর ১০ বছরে পা রেখেছে আইরিন। কচি মায়াভরা তিনটি মুখজুড়ে রাজ্যের বিষাদ আর ভয়। না জানি কখন তাদের পুলিশে ধরে নিয়ে যায়। এতিম তিন শিশুই পিতার ঋণের দায়ে মামলার আসামি! ওদের মা থেকেও যেন নেই। মৃত স্বামীর খেলাপী ঋণের মামলায় দুমাস ধরে জেলে। দুই বছর আগে বাবার মৃত্যুর পর মায়ের আশ্রয়ে লালিত পালিত হলেও মা জেলে যাবার পর থেকে অবুঝ শিশু জান্নাতুল নাঈমা আর আহমাদুল্লাহর একমাত্র ভরসা দশ বছর বয়সী বড়বোন আইরিন। নানার আশ্রয়ে ছোট ভাইবোনের বাবা-মার দায়িত্ব পালন করছে আইরিন। ফরিদপুরের বোয়ালমারী পৌরসদরে অবস্থিত আইরিন পোল্ট্রি মুররি হাউজের স্বত্বাধিকারী মৃত আমিন শেখ ও পপি খাতুন দম্পতির নাবালক তিন শিশু। বাবা আমিন শেখের ঋণের দায়ে ৩টি শিশু একটি বেসরকারি ব্যাংকের দায়ের করা অর্থ ঋণের মামলার আসামি। বাবা মারা গেছেন আরও দুই বছর আগে।আর এ মামলায় তাদের মা পপি খাতুন দুইমাস যাবত জেলহাজতে থাকায় শিশুদের জীবন এখন বিষাদে ভরা আর যন্ত্রণায় কাতর। বৃদ্ধ দিনমজুর নানা সিরাজ শেখ এতিম এই শিশুদের নিয়ে বিভিন্ন জনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন প্রতিকারের আশায়। তবে সমাধানের পথ এখনও পাননি তারা। শিশুদের নানী বলেন, দুইমাস হলো আমাদের মেয়েকে ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ। তিন শিশুকে আমরা পালছি। বুড়ো মানুষ আমরা, আয়-রোজগার নেই কীভাবে এই বাচ্চাদের দেখাশোনা করবো? ছোট্ট শিশু নাঈমা বলে, আমার আম্মুকে এনে দাও। আমি আম্মুর কাছে যাব। আম্মুর জন্য আমার কষ্ট লাগে। ১০ বছরের শিশু আইরিন বলে, ভাইবোন দুটো ঘুমের ঘরেও পুলিশ-পুলিশ বলে কান্না করে। আমার আব্বার লোন মাফ করে আমার মারে ছাড়িয়ে এনে দেন।তিন শিশুর নানার অভিযোগ, অভাগা নাতি-নাতনিরা এখনও ঠিকমতো টাকা, ঋণ, লেনদেনের অর্থই বোঝে না। তাদের বয়স লুকিয়ে তাদের আসামি করেছে ব্যাংকটি। নিজেরই সংসার চলে না তার ওপর যুক্ত হয়েছে কন্যার এতিম নাবালক তিন সন্তান। তিনি বলেন, আমার মেয়েটারে দুই মাস আগে ধরে নিয়ে গেছে। টাকার অভাবে তাকে জামিন করে আনতে পারিনি। আমরা স্বল্প আয়ের মানুষ। মামলার কারণে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। মামলা আর তিন শিশু বাচ্চাকে নিয়ে কিছুই করতে পারছি না। শিশুদের মামলার আসামি করা মানবাধিকারের লঙ্ঘন বলে জানিয়েছেন মানবাধিকারকর্মী ও সাপ্তাহিক চন্দনার সম্পাদক কাজী হাসান ফিরোজ। তিনি বলেন, আমিন শেখের ঋণের মামলায় তার স্ত্রী কারাগারে। তিন শিশু সন্তানও মামলার আসামি। এটি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘণ। আমরা আশা করছি, আদালত এবিষয়ে সুবিবেচনা করবেন।শিশু তিনটির মা পপি খাতুনের মুক্তি ও মৃত আমিন শেখের ঋণ মওকুফ করে এ মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দিতে আদালতের সুদৃষ্টি কামনা করেছে প্রতিবেশীরাও।
সংবাদটি শেয়ার করুন।
Copyright © 2025 সংবাদের আলো. All rights reserved.