নজরুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী আমলে ২ কোটি ভুয়া ভোটার করা হয়েছে। বর্তমানে নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা হালনাগাদ করছে। কিন্তু এ জোড়াতালির ভোটার তালিকা দিয়ে নির্বাচন হবে না। নতুন করে ভোটার তালিকা করে ফ্রি ফেয়ার ইলেকশন দিতে হবে। মানুষ জীবন দিযেছে নতুন করে ফ্যাসিবাদী শাসন দেখার জন্য নয়। ২০০৮ সালে ছিল সাজানো নির্বাচন ২০১৪ বিনা ভোটে, ২০১৮ রাতের ভোট এবং ২০২৪ সালে ডামি নির্বাচনে ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। বাজার সিন্ডিকেট ভাংতে হবে। যে জনগণ ভারতীয় আধিপত্যবাদকে বিদায় করেছে। সরকারকে বলবো, আপনারা না পারলে সিন্ডিকেট কারা করছে, জনগণের হাতে সপর্দ করুন। তারাই সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেবে। দেশটা কারো বাপের না। দেশটা কোনো দলের না। এই দেশকে নিয়ে আর কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না। দেশজুড়ে একটা আওয়াজ উঠেছে, সবদল দেখা শেষ, জামায়াতে ইসলামীর বাংলাদেশ। জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীরা সন্মানিত হবে। অমুসলিমরা সবেচয়ে ভাল থাকবে। ইসলামী সরকার তাদের জানমালের নিরাপত্তা দেবে। জামায়াতের কাছে অমুসলিমরা সবচেয়ে নিরাপদ থাকবে। তিনি আরও বলেন, যেনতেন নির্বাচনের জন্য মানুষ জীবন দেয় নাই। হাজার হাজার মানুষ পঙ্গু হয় নাই। প্রয়োজনীয় সংস্কার করে অবাদ সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সংস্কার শেষে কবে নির্বাচন হবে তার একটা স্পষ্ট রোডম্যাপ দিতে হবে। তবে সংস্কারের নামে কালক্ষেপন করা যাবে না। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান আরো বলেন, বাংলাদেশকে নিয়ে আর কাউকে খেলতে দেয়া হবে না। আগামী দিনের বাংলাদেশকে ইসলামী রাষ্ট্র বানাতে চাই। যে রাষ্ট্র কারও প্রভুত্ব মেনে নেবে না।প্রয়োজনীয় সংস্কার করেই নির্বাচন দিতে হবে। যেনতেন সংস্কার মানবো না, তবে সেই সংস্কারের নামে সময় ক্ষেপন মানবো না। এদেশের মানুষ জেগে উঠতে শিখেছে। জেগে ওঠা জনগন কারও প্রভুত্ব মানবে না। গত ১৬ বছরে পূরো বাংলাদেশ একটি বন্দিশালা বানিয়েছিল আওয়ামীলীগ। বিনা দোষে আমাদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ডান্ঢাবেরি পরিয়ে আদালতে হাজির করা হতো। আওয়ামী ফ্যাসিবাদীর বিরুদ্ধে যারাই সংগ্রাম করতে চেয়েছে তাদেরই টুটি চেপে ধরা হয়েছিল। তারা নির্বাচরে মানুষ হত্যা করেছে। কিন্তুু মানুষ হত্যা করে তাদের শেষ রক্ষা হয়নি। এদেশের মানুষ গণশত্রুদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ তুলেছিল। জুলাই আগস্টে হাজার হাজার ছাত্র জনতাকে হত্যা করেছে। একজন বিচারপতি মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে ফাঁসি দিয়ে আস্ফালন করে বলেছিলেন "আজকে সাঈদিকে ফাঁসি দিয়ে আসলাম"। কিন্তুু তাদের পরিনতি কি হয়েছে তা সারা পৃথিবী দেখেছে। তিনি বলেন, অহংকার ভালো নয়, যারা অহংকার করে কথা বলতেন তারা এখন কোথায়। তারা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। শনিবার(২৫ জানুয়ারি ) বিকেলে রায়গঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আয়োজনে নিমগাছী ডিগ্রি কলেজ মাঠে এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান অতিথি রফিকুল ইসলাম খাঁন বলেন, ট্যাক্সের টাকায় কেনা গুলি জনগনের বুকে মেরে অবৈধ সরকারকে যারা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিল তারা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। লুটপাটকারী এসব চোরদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। মাওলানা রফিকুল ইসলাম খাঁন আরও বলেন, যে ট্রাইব্যুনালে ইসলামী আন্দোলনের সিপাহীসালার মাওলানা নিজামীকে হত্যা করেছে সেই ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ তার দোসরদের বিচার করতে হবে। তিনি বলেন, যে ফ্যাসিবাদীরা পালিয়ে যায় তারা আর ফিরে আসে না। পৃথিবীতে ফিরে আসার নজিরও নাই। জামায়াতে ইসলামী আগামী দিনে এদেশকে একটি মানবিক ইসলামী কল্যান রাষ্ট্র তৈরীতে চেষ্টা চালাচ্ছে। যেখানে চাদাঁবাজী ও দখলদারিত্বের ঠাঁই হবে না। জামায়াত ক্ষমতায় যেতে চায় না কিন্তুু ইসলামকে ক্ষমতায় নিতে চায়। পৃথিবীতে নবী আম্বিয়া (আঃ) কে ইসলাম বিজয়ী করার দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করা হয়েছিল। আমরা সেই নবী রাসূলদের অনুসরন করতে চাই। ইসলামী কল্যান রাষ্ট্রে আমরা রাজাও হবো না, জনগণকে প্রজাও বানাবো না। তিনি আরও বলেন, জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীরা সব কাজই করতে পারবে। তাদের জন্য আলাদা সুব্যবস্থা থাকবে। রায়গঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমীর আলী মূর্তজার সভাপতিত্বে জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড.মাওলানা আব্দুস সামাদ,সিরাজগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা শাহিনুর আলম। তাড়াশ উপজেলা জামায়াতের আমীর গোলাম সাকলায়েন, সলংগা থানা জামায়াতের আমীর রাশেদুল ইসলাম এবং রায়গঞ্জ উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ডা. এম মনসুর আলীর যৌথ সঞ্চালনায় জনসভায় আরো বক্তব্য রাখেন সিরাজগঞ্জ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক জাহিদুল ইসলাম, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুস সালাম, সিরাজগঞ্জ পৌর জামায়াতের আমীর মাওলানা আব্দুল লতিফ,জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম, অধ্যাপক নাসির উদ্দীন,রায়গঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবিএম আব্দুস সাত্তার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা কাজিপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ হাসান মনসুর মিলন, জেলা শ্রমিক কল্যাণ সেক্রেটারি সোলায়মান হোসেন, সলংগা থানা জামায়াতের সাবেক আমীর হোসাইন আলী, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা সিরাজগঞ্জ শহর শিবিরের সাবেক সভাপতি তরিকুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ শহর শিবিরের সভাপতি শামীম রেজা, জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি আলহাজ উদ্দীন, সেক্রেটারি আব্দুল আজীজ প্রমুখ। শনিবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরের পর থেকেই রায়গঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলা সহ আশেপাশের এলাকা থেকে হাজার হাজার নেতা-কর্মী মিছিল সহকারে নিমগাছী ডিগ্রি কলেজ মাঠে আসতে থাকে। নির্ধারিত সময়ের আগেই জনসভা স্থল ও আশপাশের রাস্তা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। রায়গঞ্জ উপজেলার নিমগাছী কলেজ মাঠ এত লোকের সমাগম এর আগে দেখেনি রায়গঞ্জবাসি।
সংবাদটি শেয়ার করুন।
Copyright © 2025 সংবাদের আলো. All rights reserved.