রুট পারমিট ছাড়াই চলছে তুষার-তুহিনের বাস, মালিক বললেন ‘বাংলাদেশে সবই সম্ভব’
সংবাদের আলো ডেস্ক:রাজধানীর গাবতলী থেকে জামালপুরের তারাকান্দি (ভায়া টাঙ্গাইল-ভূঞাপুর) রুটে সরাসরি কোনো বাস চলাচলের অনুমতি না থাকার পরও অবৈধভাবে এই রুটে একাধিক বাস চালাচ্ছে তুষার-তুহিন এন্টারপ্রাইজ।অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে আঁতাত করে এবং প্রভাবশালীদের মদদে গাবতলী টু সিরাজগঞ্জের (উত্তরবঙ্গের) রুট পারমিট নিয়ে ভূঞাপুর-তারাকান্দি রুটে বাস চালাচ্ছেন তারা।
বিআরটিএ জানিয়েছে, রুট পারমিট ছাড়া নির্ধারিত রুটে বাস চালানো সম্পূর্ণ অবৈধ। অর্থাৎ এক রুটের পারমিট নিয়ে কোনোভাবেই অন্যরুটে বাস চলাচল করতে পারবে না। তবে বাস কোম্পানির মালিক বলছেন, বাংলাদেশে সবই সম্ভব!জানা গেছে, তুষার-তুহিন এন্টারপ্রাইজ নামে এই কোম্পানিটি পরিচালিত হচ্ছে জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি উপজেলার তারাকান্দি থেকে। দীর্ঘদিন ধরে নির্ধারিত তারাকান্দি-ভূঞাপুর-মহাখালী রুটে যাত্রী সেবা দিয়ে আসছে তারা। তবে চলতি বছরের শুরুর দিকে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতিকে ‘ম্যানেজ’ করে ইচ্ছেমত মিরপুর-তারাকান্দি ও হেমায়েতপুর-তারাকান্দি রুটে অবৈধভাবে বাস চালানো শুরু করে তুষার-তুহিন।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভূঞাপুর ও তারাকান্দির মালিকানাধীন অসংখ্য বাস কোম্পানি থাকলেও আইনি জটিলতা থাকায় কেউ এ রুটে বাস চালান না। ফলে প্রভাবশালীদের মদদে ইচ্ছেমত ভাড়া আদায় করে একচেটিয়া ব্যবসা করছে প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি এই কোম্পানিটি নতুন করে কল্যাণপুর-তারাকান্দি রুটে বাস চলাচল শুরু করেছে।এরপরই প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে গাবতলী-ভূঞাপুর-তারাকান্দি রুটে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কর্তৃক কোনো পারমিট দেওয়া হচ্ছে না। তাহলে তুষার-তুহিন এন্টারপ্রাইজের বাস কীভাবে দিনের পর দিন হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে দিব্বি চলাচল করছে। যদিও বিষয়টি নিয়ে মালিক সমিতির ভয়ে প্রকাশ্যে কেউ কথা বলতে সাহস পাচ্ছেন না।ভূঞাপুর বাস মালিক সমিতির আহবায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, আমাদের কোন বাস গাবতলী বা কল্যাণপুর পর্যন্ত পৌঁছায় না। আমাদের আইনি জটিলতা আছে। কিন্তু তুষার-তুহিন সম্পর্কে আমার জানা নেই।
এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রথমেই কথা হয়, তুষার-তুহিন এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তুষার আহম্মেদ আকন্দের সঙ্গে। তার কাছে নির্ধারিত রুটের পারমিট আছে কিনা জানতে চাইলে সরাসরি কোনো উত্তর না দিয়ে মালিক সমিতির সঙ্গে বলার পরামর্শ দেন। পরে টাঙ্গাইল জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার ইকবাল হোসেন তাদের রুট পারমিট থাকার কথা নিশ্চিত করলেও এর বেশি তথ্য দেননি।বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হলে যোগাযোগ করা হয় টাঙ্গাইল বিআরটিএ অফিসে। যেখানে দেখা যায়, কল্যাণপুর-তারাকান্দি রুটে সম্প্রতি চালু হওয়া তুষার-তুহিন এন্টারপ্রাইজের ঢাকা মেট্রো- ব ১২-৩৬৫০ নম্বরের বাসটি রেজিস্ট্রেশন করা আছে নিটল মোটরস লিমিটেড নামে। এর নির্ধারিত রুট উল্লেখ রয়েছে ঢাকা-গাবতলী-সিরাজগঞ্জ।
বিষয়টি নিয়ে ফের জানতে চাওয়া হয় টাঙ্গাইল জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার ইকবাল হোসেনের কাছে। বিআরটিএ থেকে পাওয়া তথ্য তাকে জানানোর পর তিনি গোমর ফাঁস করেন। বলেন, তুষার-তুহিন এন্টারপ্রাইজের গাবতলী থেকে তারাকান্দি রুটের পারমিট নেই। সিরাজগঞ্জের রুট পারমিট নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন তারা।সার্বিক বিষয়ে অবগত করে ফের তুষার-তুহিন এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তুষার আহম্মেদ আকন্দের কাছে জানতে চাইলে নির্ধারিত রুট পারমিট না থাকার কথা অবশেষে তিনি নিজেও স্বীকার করেন। বলেন, সরকার যদি আমাকে জামালপুর থেকে গাবতলীর রুট পারমিট না দেয় সেটি তাদের বিষয়। এখানে সবকিছুই সম্পন্ন না। এটা বাংলাদেশ, এখানে সবই সম্ভব!
তিনি বলেন, এটা ট্রাক না, বাস। কোন রুটে চলাচল করবে এটা মালিক সমিতি নির্ধারণ করে। যেহেতু আমাদের গাড়ি চালাতে হবে, তাই টাকা বেশি দিয়ে হলেও বিআরটিএ থেকে অন্য রুটে পারমিট করাই।যেখানে পিকনিকের গাড়ির অস্থায়ী রুট পারমিট লাগে, সেখানে কীভাবে দিনের পর দিন ভিন্ন রুটে বাস চালাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক কিছুই আইনে আছে, তবে সারা বাংলাদেশে যারাই বিজনেস করে বিআরটিএ কর্তৃক এভাবেই চালিয়ে আসছে।এসময় টাঙ্গাইল জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতিকে বড় অঙ্কের মাসোহারা দিয়ে গাড়ি চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ভূঞাপুর থেকে কাউকে এই রুটে বাস চলাচলের অনুমতি দেয়নি টাঙ্গাইল মালিক সমিতি। গাবতলী ও টাঙ্গাইলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে আমরা গাড়ি চালাচ্ছি। তবে কোনো টাকা দিতে হয়না।
তার দাবি, জেলার নাম উল্লেখ করে একটা রুট পারমিট থাকলেই হয়, এতে সমস্যা নেই। যদিও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) প্রধান কার্যালয়ের রুট পারমিট শাখার উপপরিচালক সুব্রত কুমার দেবনাথ জানিয়েছেন, এক রুটের পারমিট নিয়ে কোনোভাবেই অন্যরুটে বাস চলাচল করতে পারবে না। এটা সম্পূর্ণ অবৈধ।এ বিষয়ে জানতে চাইলে টাঙ্গাইল বিআরটিএ’র মোটরযান পরিদর্শক এনামুল হক ইমন বলেন, এ বিষয়ে আমরা অবগত নই। এই প্রথম জানতে পারলাম। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করব। খুব শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্র: সময়ের কন্ঠস্বর
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।