মঙ্গলবার, ২৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

এক মণ লবণে মেলে না চার কেজি চাল

টেকনাফ প্রতিনিধি: কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলে লবণের ভরা মৌসুম চলছে। পুরোদমে চলছে লবণ উৎপাদন। চৈত্রের তীব্র গরম উপেক্ষা করে মাঠে কাজ করছেন চাষিরা। তবে তারা নিশ্চিত নন-উৎপাদিত লবণ বেচে আগামীর দিনগুলো তাদের ঠিকঠাক চলবে কি না। কারণ এখন বাজারের লবণের যে দাম তাতে এক মণ লবণ বিক্রি করে চার কেজি চাল হয় না। চাষিদের অভিযোগ, লবণ মিলের মালিক ও অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে মাঠ পর্যায়ে লবণের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। এর সঙ্গে আছে অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আকাশছোঁয়া দাম। যার কারণে কষ্ট করে লবণ চাষ করেও তাদের অবস্থার কোনো বদল হয় না।

চাষিরা জানান, খামার পর্যায়ে এখন তারা এক মণ লবণ ১৮০ থেকে ২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেন। অথচ প্রতিকেজি মোটা চালের দামই ৫৫ টাকার বেশি। এই হিসাবে এক মণ লবণ বিক্রি করে চার কেজি চাল হয় না। সরেজমিনে লবণ মাঠ ঘুরে দেখা যায়, সাবরাং ইউনিয়নের নয়া পাড়া, শাহপরীর দ্বীপের হাজার হাজার একর জমিতে কালো পলিথিনে সারি সারি লবণের বেড। ওই বেডের পলিথিনের ওপর সাদা লবণের দানা। কথা হয় শাহ পরীর দ্বীপের লবণ মাঠে আব্দুল হামিদ নামে এক চাষির সঙ্গে। তিনি জানান, হঠাৎ করে লবণের দাম পড়ে যাওয়ায় খুবই দুশ্চিন্তায় আছি। এক মণ লবণ বিক্রি করে চার কেজি চালও পাওয়া যাচ্ছে না। এভাবেই দিন দিন লবণের দাম কমে গেলে হুমকির মুখে পড়বে লবণ শিল্প। আমরাও পড়ব অস্তিত্ব সংকটে।

আরেক লবণ চাষি জাহেদ উল্লাহ বলেন, বর্তমানে লবণের দাম প্রতি মণে ১৮০-১৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এই দরের মধ্যে ওঠানামা করে লবণের দাম। খরচের চেয়ে কম দামে বিক্রি করার ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে আমাদের। অথচ যারা সিন্ডিকেট করে দাম কমিয়েছে খুচরা বাজরের তারা ৩০-৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে। সাবরাংয়ের লবণ চাষি মোহাম্মদ শরীফ হোসেন বলেন, যেভাবে লবণের দাম দিন দিন কমে যাচ্ছে, এই অবস্থা চলতে থাকলে লবণ চাষ করে চাষিরা বিনিয়োগও ওঠাতে পারবে না। তিনি বলেন, প্রতি একর লবণ মাঠে খরচ পড়ছে ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু বিক্রি করে ২০ হাজার টাকাও পাওয়া যায় না। তাই চাষিরা লবণ বিক্রি করতে চাচ্ছে না। তাতে আবার দেখা দিচ্ছে আরেক সংকট। অবিক্রীত লবণের পরিমাণ বেড়েই চলেছে।

আর মজুদ যত বাড়ছে দাম ততই কমছে। টেকনাফ উপজেলা লবণ চাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শফিক মিয়া বলেন, সিন্ডিকেট করে মধ্যস্বত্বভোগীরা লবণের দাম কমিয়ে দেওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে। লোকসান দিয়ে লবণ বিক্রি করে দাদনের টাকাও পরিশোধ করতে পারবে না অনেক চাষি। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) টেকনাফের ইনচার্জ মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, টেকনাফে লবণ চাষ হচ্ছে ৩ হাজার ৯৪৫ একর জমিতে। গত বছরের তুলনায় লবণ উৎপাদনও বেড়েছে। তবে দাম কম হওয়ায় চাষিরা হতাশ।

বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

এই সপ্তাহের পাঠকপ্রিয়