সোমবার, ২১শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

অব্যাহতি দেয়ার ৭ মাস পর বিসিবিকে নিয়ে বোমা ফাটালেন হাথুরু

সংবাদের আলো ডেস্ক: বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সাবেক সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের পছন্দের ব্যক্তি ছিলেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। যে কারণে দ্বিতীয় দফায় বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব পেয়েছিলেন এ শ্রীলঙ্কান। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল খেলোয়াড়কে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার। তবুও নতুন করে তার চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়েছিল বিসিবি। তবে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর তৎকালীন সভাপতি পাপন দেশ ছেড়ে পালালে হাথুরুরও বিদায় ঘন্টা বেজে উঠে। পাপন পদত্যাগ করলে বিসিবির নতুন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন ফারুক আহমেদ। এরপর ভারতে ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভরাডুবি ঘটে বাংলাদেশের। তারপর হাথুরুও আর টেকেননিও। তার বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ আনে বিসিবি। একটি ছিল ‘মিসকনডাক্ট উইথ প্লেয়ার’, আরেকটি ছিল ‘মিসকনডাক্ট এজ এমপ্লয়ি।

’ ২৩ বিশ্বকাপের ঘটনা বাদেও চুক্তির সময়কালে নির্ধারিত ছুটির চেয়ে বেশি ছুটি কাটানোর অভিযোগ ছিল হাথুরুর বিরুদ্ধে। সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানিয়েছিলেন ফারুক। ২০২৩ বিশ্বকাপের ঘটনার তদন্ত রিপোর্টে খেলোয়াড়কে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি উল্লেখ ছিল বলে জানান ফারুক। এছাড়া তিনি নিজে সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়ের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টির ব্যাপারে নিশ্চিত হন বলেও জানিয়েছিলেন বোর্ড সভাপতি। অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান কোচ হিসেবে ফিল সিমন্সকে নিয়োগ দেয় বিসিবি। হাথুরুকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলে হাথুরু তার জবাবও দিয়েছিলেন। যদিও সে জবাবকে অগ্রহণযোগ্য এবং অসন্তোষজনক হিসেবে আখ্যায়িত করে তার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে বিসিবি। পরে প্রধান কোচের দায়িত্ব দেয়া হয় সিমন্সকে। এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচের দায়িত্বে আছেন ফিল সিমন্স।

বিসিবি থেকে অব্যাহতি দেয়ার প্রায় ৭ মাস পর এসে বাংলাদেশ থেকে বিদায় নেয়ার সময়ের কথা নিয়ে বোমা ফাটিয়েছেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার ‘কোড স্পোর্টস’-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিসিবিকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘তারা আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়নি। শুধু অভিযোগ তুলে আমার ক্যারিয়ার শেষ করে দিয়েছে।’ হাথুরুসিংহে আরও জানান, বরখাস্ত হওয়ার পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে তিনি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেছেন। “আমার সঙ্গে সবসময় একজন ড্রাইভার ও একজন বন্দুকধারী থাকত। বরখাস্তের পর শুধু ড্রাইভার ছিল। তখনই বুঝেছিলাম, পরিস্থিতি ভালো নয়,” বলেন হাথুরুসিংহে। টাকা তুলতে ব্যাংকে গেলে টিভিতে নিজের বরখাস্ত হওয়ার খবর দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তিনি।

ব্যাংক ম্যানেজার পর্যন্ত তাকে সাবধান করে বলেন, রাস্তায় গেলে বিপদ হতে পারে। পরে এক বন্ধুর সহায়তায় টুপি ও হুডি পরে রাতের ফ্লাইটে দেশ ছাড়েন সাবেক এই কোচ। হাথুরু দাবি করেন, তিনি নাসুমকে চড় মারেননি, বরং ব্যাটসম্যানদের গ্লাভস পাঠানোর জন্য পিঠে হালকা টোকা দিয়েছিলেন মাত্র। “আমি কোনো খেলোয়াড়কে আঘাত করিনি, এমনকি কখনও ঝগড়াও করিনি,” বলেন তিনি। তার পক্ষে কথা বলেছেন বাংলাদেশ দলের সাবেক সহকারী কোচ নিক পোথাস এবং স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ। দুজনেই অভিযোগটিকে ‘অতিরঞ্জিত ও ভিত্তিহীন’ বলে উল্লেখ করেছেন। হেরাথ বলেন, “বিশ্বকাপের সময় তার চারপাশে প্রচুর ক্যামেরা ছিল। কিছু ঘটলে প্রমাণ থাকত।” পোথাস যোগ করেন, “যারা অভিযোগ করেছেন, তাদের হয়তো ব্যক্তিগত ক্ষোভ ছিল। হাথুরু পেশাদার কোচ, এমন আচরণ করলে এতদিন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে টিকে থাকতে পারতেন না।”

হাথুরুসিংহের মতে, তাকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত ছিল বিসিবির বর্তমান সভাপতি ফারুক আহমেদের পূর্বপরিকল্পিত পদক্ষেপ। তার ভাষায়, “আমি জানি না, গত ছয় মাসে কতগুলো সুযোগ হাতছাড়া করেছি। বিসিবি শুধু আমার চুক্তি বাতিলের চেষ্টা করেনি, তারা আমার পুরো ক্যারিয়ারটাই ধ্বংস করেছে।” হাথুরু দুই দফায় প্রায় ছয় বছর বাংলাদেশের প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৪ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত প্রথম মেয়াদে বাংলাদেশ ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল। ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশ সেমিফাইনাল খেলেছিল হাথুরুর অধীনে। এরপর ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে দলটির প্রধান কোচ হয়ে ফিরেছিলেন তিনি। এবার ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভরাডুবি হলেও সেসময় উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় মেয়াদে আসার পরপরই বাংলাদেশ ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডকে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ধবলধোলাই করেছিল। আর গত বছরের আগস্টে পাকিস্তানের মাঠে পাকিস্তানকে হারানোর মতো ইতিহাস গড়েছিল বাংলাদেশ।

সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

এই সপ্তাহের পাঠকপ্রিয়