নালিতাবাড়ীতে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের নানা পদক্ষেপ ৬ মাসে শতাধিক অভিযান


আমানুল্লাহ আসিফ, নালিতাবাড়ী: কোনোভাবেই সীমান্তবর্তী শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার দুই নদী ভোগাই ও চেল্লাখালীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন থামছে না। দিন রাত দেদারসে বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এই দুই নদীসহ উপজেলার বিভিন্ন খাল, পাহাড় ও ফসলি জমিতেও বালু উত্তোলন করে আসছে অবৈধ গোষ্ঠীরা। আবার উত্তোলিত এসব বালু পরিবহন করে ছোট বড় রাস্তাগুলো নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে। এমতাবস্থায় জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, শ্যালুচালিত মিনি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর ভিতর গভীর গর্ত ও তীর ভেঙে চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার নদীবেষ্টিত প্রত্যেকটি এলাকার চিত্র একই। এই অবস্থায় বর্ষাকালে তীরবর্তী মানুষের ভোগান্তি কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে বলে অভিযোগ তাদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী জানান বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের পরিচয় দিয়ে বালু তোলা হয়। কেউ এই কাজে বাধা দিলে তার উপর আক্রমণ করে বালুখেকোরা। তাদের যেন দেখার কেউ নেই।তবে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে প্রশাসন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে নিয়মিত বিভিন্ন স্পটে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
অবৈধ বালু উত্তোলনের পরিমাণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে ১৪৩২ বঙ্গাব্দে ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর বালুমহাল ইজারা বাতিল করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। উপজেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্যমতে, গত ৬ মাসে শতাধিক দীর্ঘ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এসব অভিযানের ব্যপ্তি ছিল টানা ৬-১৬ ঘন্টা পর্যন্ত। গত ৬ মাসে বিভিন্ন অভিযানে ৭৫ টি মামলায় ৬০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়াও বালু উত্তোলনের সাথে জরিত ৩৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। বালু জব্দ করার পর নিলামের মাধ্যমে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। ৮-১০ টির মতো নিয়মিত মামলাও দায়ের করা হয়েছে। অসংখ্য ড্রেজার মেশিন পাইপসহ বালু উত্তোলনের সরঞ্জাম ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। অবৈধভাবে বালু পরিবহনের জন্য জব্দ করা হয়েছে ট্রাক্টর, ট্রলি , স্কেভেটরসহ বিভিন্ন যানবাহন। বালু সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি, অভিযোগের শুনানি, সচেতনতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপনসহ অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ প্রশাসন গ্রহন করেছে। সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবিসহ, স্বেচ্ছাসেবীদের সহযোগিতায় এসব অভিযান বাস্তবায়ন করেছে উপজেলা প্রশাসন।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুর রহমান জানান, দাপ্তরিক ব্যস্ততা স্বত্ত্বেও অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে সর্বোচ্চ এফোর্ড দিয়ে কাজ করছে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অনেক জায়গায় স্থানীয়রা প্রশাসনকে সহায়তা না করে বালু ব্যবসায়ীদের সহায়তা করে থাকে। বর্তমানে নালিতাবাড়ীতে বালুর কোন বৈধ ইজারা পয়েন্ট নেই। খুব শীঘ্রই এই অবৈধ বালু উত্তোলন শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা আক্তার ববি দৈনিক জবাবদিহিকে বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে উপজেলা প্রশাসন সর্বোচ্চটুকু দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর ইজারা বাতিল করা হয়েছে। প্রত্যেক এলাকায় সচেতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে সকল শ্রেণি পেশার মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।