লংগদু-নানিয়ারচর সড়কের অভাবে দুর্ভোগে ৩ লাখ মানুষ
রাঙামাটি প্রতিনিধি: দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে সরকারের সুনজরে দুর্গম জনপদ হিসেবে পরিচিত পাহাড়ি জেলা রাঙ্গামাটির যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ থেকে সহজতর হচ্ছে। পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে পিচঢালা নির্মিত সড়কের ফলে এ অঞ্চলের দৃশ্যপট বদলে গেছে। উন্নয়নের অংশ হিসেবে সড়ক ও জনপদ বিভাগ জেলার নানিয়ারচর-লংগদু উপজেলার সঙ্গে খুব শিগগিরই সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে যাচ্ছে বলে গুঞ্জন দীর্ঘদিনের। কিন্তু বাস্তবতা দেখা গেছে ভিন্ন। সড়কটি নির্মিত হলে তিনটি উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের ভাগ্য বদলে যাবে। উপজেলাগুলো হলো নানিয়ারচর, লংগদু ও বাঘাইছড়ি। রাঙ্গামাটি জেলা সদরের সঙ্গে নানিয়ারচর উপজেলার সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠলেও লংগদু উপজেলার সঙ্গে সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা কোনোদিনই ছিল না। যোগাযোগ রক্ষা হতো নৌ-পথে। তবে এইবার সরকার নানিয়ারচর উপজেলার সঙ্গে লংগদু উপজেলার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করার পরিকল্পনা হাতে নিলেও অদৃশ্য কারণে থেমে যায়। সড়কটি নির্মিত হলে উপজেলা দুটির যেমন যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে তেমনি জেলার সদরের সঙ্গে শক্তিশালী যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। শুধু তাই নয়; এ সড়কটি গড়ে উঠলে রাঙ্গামাটিবাসী নানিয়ারচর হয়ে, লংগদু-বাঘাইছড়ি উপজেলার সঙ্গে অনায়াসে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারবে। তথা জেলা সদরের সঙ্গে তিনটি উপজেলার সড়ক পথে যোগাযোগ সহজ হয়ে উঠবে।স্থানীয়রা বলছেন, নানিয়ারচর-লংগদু সড়ক নির্মিত হয়ে গেলে তিনটি উপজেলার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন সহজ হবে তেমনি এখানকার উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত সহজিকরণসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রতিফলন ঘটবে। এবার সড়ক বিভাগ লংগদু উপজেলার সঙ্গে নানিয়ারচর উপজেলার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে দিলে এ অঞ্চলের উন্নয়ন বহুগুণ বেড়ে যাবে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধশালী অঞ্চলে পরিণত হবে এই এলাকা। সড়ক বিভাগ ও স্থানীয়দের তথ্য মতে, নানিয়ারচর উপজেলার সঙ্গে লংগদু উপজেলার দূরত্ব ৩৭ কিলোমিটার। দূরত্ব ঘোচাতে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে ৩৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের জন্য প্রাক্কলন তৈরি করেছিল রাঙামাটি সড়ক ও জনপদ বিভাগ। বর্তমানে নানিয়ারচর উপজেলা থেকে লংগদু উপজেলা সীমান্ত পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত সড়ক থাকলেও সড়কের বেহাল অবস্থা। সড়কটি সংস্কার করাসহ নানিয়ারচর-লংগদু উপজেলার মোট ৩৭ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের কাজ করা হলেই সড়ক পথের যাতায়াত নিশ্চিত হবে। জানা গেছে, ইতিপূর্বে সড়কটি তৈরি করতে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর কাজ শুরু করলেও নির্মাণ কাজ শেষ না করেই বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে গত বছর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উদ্যোগে লংগদু উপজেলা অংশের কাজ শুরু করা হলেও মাস খানেক পরেই বন্ধ করে দেওয়া হয়। অথচ সড়কটি চালু হলে তিন উপজেলার বাসিন্দাদের যেমন জেলা সদরের সঙ্গে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে পারবে তেমনি ওই এলাকার মানুষের জীবনমানে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হবে। বর্তমানে নদীপথে জেলা শহর থেকে লংগদু আসতে চার পাঁচ ঘন্টা আর বাঘাইছড়ি উপজেলায় পৌঁছাতে ৭-৮ ঘন্টা সময়ও লেগে যায়। লংগদু উপজেলার সঙ্গে জেলা শহরের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই।যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌপথ। এতে শুষ্ক মৌসুমে বাড়ে জনদুর্ভোগ। স্থানীয়দের মতে, নানিয়ারচর হতে লংগদু সংযোগ সড়কটি হলে রাঙামাটি জেলা শহরের সাথে দুটি উপজেলার যোগাযোগ সন্নিকটে আসবে এবং দুটি উপজেলার অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রবৃদ্ধি হবে। যেখানে সড়কপথে বাঘাইছড়ি থেকে রাঙামাটি পৌঁছাতে ৩ ঘন্টা ও লংগদু থেকে ২ ঘন্টায় জেলা শহরে পৌঁছানো সম্ভব। স্থানীয়রা আরও বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ শুনে আসছি নানিয়ারচর সংযোগ সেতু হলেই দুটি উপজেলার চলাচল আরম্ভ হবে, কিন্তু সেতুটি চালু হলেও সংযোগ রাস্তার কোনো পদক্ষেপ নেই। লংগদু সংযোগ সড়কটি না হওয়ার পিছনের কারণ ও বাঁধা কোথায় জানতে চায় এলাকাবাসী। কারা এই সংযোগ রাস্তাটির কাজ না হওয়ার পিছনে বাঁধা সৃষ্টি করছে। এই নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে তিন উপজেলার সাধারণ মানুষের মাঝে। মাইনীমূখ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন কমল বলেন, লংগদু উপজেলা একটি দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল। সড়ক বিভাগ, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ সকলের সহযোগিতা পেলে লংগদু নানিয়ারচর উপজেলার সংযোগ সড়কটি নির্মানের মাধ্যমে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও তিনটি উপজেলার মানুষের যাতায়াতের পথ সুগম হব। আমরা চাই এ জনগুরুত্বপূর্ণ সংযোগ সড়কটি অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হোক।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।