বুধবার, ১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ‘কুম্ভমেলা’ শুরু

সংবাদের আলো ডেস্ক: উত্তর ভারতের প্রয়াগরাজ শহরে শুরু হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বড় উৎসবে কুম্ভ মেলা। সোমবার থেকে তারা সেখানে পবিত্র স্নান শুরু করেছেন। মহাকুম্ভ মেলা হিসাবে পরিচিতি এই উৎসবকে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সমাবেশ হিসাবে বর্ণনা করা হয়ে থাকে। খবর বিবিসির।

কুম্ভ মেলা প্রতি ১২ বছরে একবার একবার অনুষ্ঠিত হয়।সোমবার শুরু হয়ে পরবর্তী ছয় সপ্তাহের মধ্যে হিন্দু ধর্মের মানুষেরা যমুনা, স্বরসতী নদী এবং পৌরাণিকভাবে পবিত্র গঙ্গা নদীর সঙ্গমস্থলে স্নান করবেন। এবার প্রায় ৪০ কোটি তীর্থযাত্রী ৪৫ দিনের এই উৎসবে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

হিন্দুরা বিশ্বাস করে যে, পবিত্র নদীতে ডুব দেওয়া হলে তারা যাবতীয় পাপ থেকে মুক্তি লাভ করবেন। তাদের আত্মাকে শুদ্ধ করবে এবং তাদের জন্ম ও মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্ত করবে; কারণ হিন্দু ধর্মের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো মুক্তি। কুম্ভ মেলা এতোটাই বড় যে, এটি মহাকাশ থেকেও দেখা যায়।

mela1

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সোমবার স্থানীয় সময় বিকেল চারটা পর্যন্ত এক কোটি ৬০ লাখ মানুষ গোসল করেছেন। মঙ্গলবার এই সংখ্যা দুই কোটি মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ শহরটিকে লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রীকে আতিথেয়তা দেয়ার জন্য হিমশিম খেতে হচ্ছে।

হিন্দুধর্মে মহাকুম্ভ মেলার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এই বিশেষ সময় গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতীর সঙ্গমে সকলে স্নান সারেন। চলতি বছর উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। প্রচুর নাগা সাধু আসেন এই মেলাতে। যাদের নিয়ে কৌতূহলের শেষ থাকে না অনেকেরই।

mela3

কথিত আছে, এই মহাকুম্ভ সর্বপ্রথম অর্থাৎ রাজকীয় স্নান করে কিন্তু প্রথম সাধুরাই। তারপর সাধারণ মানুষের স্নান করার রীতি রয়েছে। সাধুরা মনে করেন, এই মহাকুম্ভে স্নান করলে কঠোর তপস্যার ফল পাওয়া যায়। এতে শরীর সুস্থ থাকে। নাগা সাধুরা তাদের নিজেদের কাছে অনেক অস্ত্র রাখেন।

যারা সন্তু সমাজ ও শংকরাচার্যের কাছ থেকে নাগা উপাধি পান, তারাই কিন্তু একমাত্র নাগা থাকতে পারেন। অষ্টম শতাব্দীতে যখন মন্দির যখন সে সময় ধ্বংস হচ্ছিল সেই সময় আদিগুরু শংকরাচার্য চারটি মঠ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেখানে তিনি সনাতন ধর্ম রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছিলেন।

আর যার থেকে মনে করা হয় সনাতন ধর্মের ঐতিহ্য রক্ষার জন্য শুধু ধর্মগ্রন্থই যথেষ্ট নয়, রক্ষার জন্য অস্ত্রও প্রয়োজন। আর তারপর থেকেই কিন্তু নাগা সাধুরা নিজেদের কাছে অস্ত্র রাখেন। তবে এখানেই শেষ নয়! নিজেদের আত্মরক্ষায় তারা ত্রিশূল, তলোয়ার, বর্শার ব্যবহার করে থাকেন।

হাজার বছরের পুরোনো কুম্ভ মেলা ধর্মীয়, ধার্মিকতা এবং পবিত্র স্নানের মাধ্যমে গঙ্গা, যমুনা এবং সরস্বতী নদীর মোহনায় অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে পুণ্য লাভের আশায় লাখো মানুষ একসঙ্গে স্নান করে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা মনে করেন গঙ্গা, যমুনা এবং সরস্বতীর পবিত্র জলে স্নান করে মানুষ পাপ থেকে মুক্ত হয়।

mela4

তীর্থযাত্রীরা সূর্যোদয়ের আগে পবিত্র ঠান্ডা পানিতে স্নান শুরু করেন। এবার কুম্ভ মেলার উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে হিন্দু তীর্থযাত্রীরা উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজের ত্রিবেণি সঙ্গমে পবিত্র জলে পুণ্যস্নান শুরু করেছে। ইতোমধ্যে এই মিলনস্থলে হাজির হয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। এসেছেন দেশবিদেশের সাধুসন্তরাও।

কুম্ভ মেলায় যোগদানের জন্য তাঁবুতে অবস্থান করা ব্যবসায়ী রীনা রাই বলেন, একজন হিন্দু হিসেবে, এটি একটি অবিস্মরণীয় উপলক্ষ্য। ৩৮ বছর বয়সী এই নারী এই উৎসবে অংশ নিতে মধ্যপ্রদেশ রাজ্য থেকে প্রায় ১,০০০ কিলোমিটার (৬২১ মাইল) পথ পাড়ি দিয়ে কুম্ভ মেলায় অংশ নিয়েছেন।

mela5

হিন্দু সন্ন্যাসী এবং উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এক বিবৃতিতে ভক্তদের স্বাগত জানিয়েছেন বলেন, বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য অনুভব করতে, ধ্যান করতে এবং বিশ্বাস ও আধুনিকতার সঙ্গমে পবিত্র স্নান করতে বিশ্বের বৃহত্তম আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক সমাবেশ শুরু হচ্ছে।

আয়োজকরা বলেন, কুম্ভ মেলার প্রস্তুতির ব্যাপারটা একটি অস্থায়ী দেশের মতোই, যার জনসংখ্যা যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার সম্মিলিত জনসংখ্যার সমান হবে। মেলার মুখপাত্র বিবেক চতুর্বেদী বলেন, প্রায় ৩৫ কোটি থেকে ৪০ কোটি ভক্ত-সাধু মেলায় আসছেন, কাজেই, বুঝতেই পারছেন প্রস্তুতির ব্যাপারটা কেমন।

mela6

চতুর্বেদী বলেন, প্রায় দেড় লাখ টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে, কমিউনিটির একেকটি রান্নাঘর থেকে একবারে পঞ্চাশ হাজার মানুষ খেতে পারবে। মূল অনুষ্ঠান স্থলে ৬৮ হাজার লাইট বসানো হয়েছে, যার এর উজ্জ্বল আলো মহাকাশ থেকে দেখা যাচ্ছে। ২০১৯ সালে ’আধা’ কুম্ভমেলায় ২৪ কোটি পুণ্যার্থী অংশ নিয়েছিল। হিন্দুরা বিশ্বাস করে, পবিত্র নদীতে স্নান বা গোসল করলে পাপ মোচন হয়, আত্মা বিশুদ্ধ হয় এবং জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। কারণ, হিন্দুধর্মের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো মোক্ষ লাভ। প্রায় ৪০ কোটি তীর্থযাত্রী এই ৪৫ দিনের মহাসমাবেশে অংশগ্রহণ করার জন্য আসবেন।

mela7

মহাকুম্ভ মেলার সূত্রপাত মূলত একটি পৌরাণিক কাহিনীর মাধ্যমে। কাহিনী অনুসারে, সমুদ্র মন্থনের ফলে সৃষ্ট এক কুম্ভ বা পেয়ালা অমৃতের জন্য দেবতা ও অসুরেরা লড়াই করেছিলেন এখানে। যুদ্ধের সময় কুম্ভ থেকে অমৃতের কিছু ফোঁটা পড়ে প্রয়াগরাজ, হারিদ্বার, উজ্জয়িন ও নাসিক শহরে।

সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

এই সপ্তাহের পাঠকপ্রিয়