কালের গহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছে বাগাতিপাড়ার শাঁখাশিল্প
ফজলে রাব্বি, বাগাতিপাড়া নাটোর: নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলা সদর হতে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে জামনগর ইউনিয়ন পরিষদের শাঁখারিপাড়া গ্রাম অবস্থিত। শাঁখাশিল্পের জন্য প্রসিদ্ধ এই গ্রাম এখন শুধুই স্মৃতি। এ এলাকার কিছু হিন্দু সম্প্রদায় এখনও অতীত ঐতিহ্য আঁকড়ে ধরে আছে। এখানকার প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার শাঁখাশিল্পের সাথে জড়িত । তবে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে শাঁখা শিল্পের প্রয়োজনীয় উপাদানের মূল্য বৃদ্ধিতে পুঁজি সংকটে ধ্বংসের পথে বিরল এ শিল্প। পুঁজি সংকট এবং ঋণের জালে দিশেহারা শাঁখারী শিল্পের সাথে জড়িত এসব পরিবার। জামনগরের শাঁখারি পাড়ায় প্রায় ২০০ঘর শাঁখারির বাস। নারী-পুরুষ সমান তালে এখানে শাঁখা তৈরি করেন। একদিনে একজন শ্রমিক সর্বোচ্চ পঞ্চাশজোড়া শাঁখা তৈরি করতে পারেন। তবে সারাদিন কর্মচাঞ্চল্য থাকলেও ভালো নেই এখানকার শাঁখারিরা। অর্থনৈতিক দৈন্য দশা এখন তাদের নিত্যসঙ্গী। এখানকার শাঁখারিদের সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হয় কাঁচামাল সংগ্রহে। একটা সময় খুলনা ও বাগেরহাট থেকে শামুক কিনতেন শাঁখারিরা। বর্তমানে এ অঞ্চল থেকে শামুকের সরবরাহ নেই বললেই চলে। দেশের বাইরে থেকে আমদানি করায় শামুকের দাম অনেক বেশি পড়ে। আর তা বেশ চড়া দামে কিনতে হচ্ছে শাঁখারিদের। অনেক পরিবারের সদস্যরা অনেক কষ্টে বিভিন্ন এনজিওদের নিকট হতে ঋণ গ্রহন করে শামুক কেনে। তারপর সেই সামুদ্রিক শামুক কেটে, ঘষে-মেজে চুড়ি ও আংটি তৈরী করে দেশের বিভিন্ন জেলায় যেমন রংপুর, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, নওগা সহ দেশের হিন্দু প্রধান এলাকায় ফেরী করে বিক্রি করে যে উপার্জন হয় তা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ ও ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালায়। এছাড়াও আরো বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচেছ এখানকার শাঁখাশিল্পের জড়িত পরিবার। ফলে গ্রামের উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শাঁখারিদের ঋণ সহায়তা ও উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে দেশের অর্থনীতিতে অচিরেই অবদান রাখতে পারবে এই পল্লী অঞ্চল। কারিগররা জানান, দেশে কাঁচামাল না থাকায় আমদানি করা হয় শ্রীলংকা ও ভারত থেকে। প্রকারভেদে একজোড়া শাঁখা তৈরিতে ব্যয় হয় ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা। তবে সম্প্রতি কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভারত থেকে কম দামের শাঁখা কিনে দেশের বাজারে বিক্রি করায় নাটোরের তৈরি শাখার চাহিদা কমেছে। নীলকমল সেন নামে এক কারিগর বলেন, দেশে শঙ্খর উৎপাদন না থাকায় শ্রীলংকা ও ভারত থেকে কাটা শঙ্খ আমদানি করে পালিস করে বিভিন্ন নকশায় শাঁখা তৈরী হয় এখানে। এখানকার তৈরি শাঁখা দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হয়। আর এ এলাকার শাঁখা বেশি দামে বিক্রি হলেও ভারত থেকে আসা তৈরি করা শাঁখা স্থানীয় বাজারে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।