ফারুক হত্যা মামলা টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র মুক্তি জামিনে মুক্ত
জহুরুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার: টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি বুধবার (২৮ আগস্ট) জামিনে মুক্ত হয়ে কারাগার থেকে বের হয়েছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ফারুক আহমদ হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে বন্দী সহিদুর রহমান খাম মুক্তির জামিনের জন্য তাঁর আইনজীবীরা টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন আবেদন করেন। তাঁর আইনজীবীরা আদালতকে জানান, সহিদুর রহমান খান মুক্তি কারাগারে খুব অসুস্থ অবস্থায় আছেন। তাঁর অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাচ্ছে। তিনি থাইরয়েডের সমস্যাসহ আরও অনেক রোগে ভুগছেন। সুচিকিৎসা না পেলে তাঁর মৃত্যু হতে পারে। যেকোনো শর্তে মুক্তির জামিন চান আইনজীবীরা।
পরে ওই আদালতের বিচারক মো. মাহমুদুল হাসান শুনানি শেষে সহিদুর রহমান খান মুক্তিকে মামলার আগামি ধার্য তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেন। আগামি ধার্য তারিখে কী কী চিকিৎসা গ্রহণ করলেন, তা আদালতকে জানানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি মনিরুল ইসলাম খান।
টাঙ্গাইল জেলা কারাগারের জেল সুপার মোকলেছুর রহমান জানান, সহিদুর রহমান খান মুক্তির জামিন মঞ্জুরের কাগজপত্র বুধবার বিকাল সোয়া তিনটার দিকে কারাগারে আসে। পরে সাড়ে তিনটার দিকে তিনি কারাগার থেকে বের হন। সহিদুর রহমান খান মুক্তির বাবা সাবেক সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খান ও ভাই সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা সহ এ মামলায় তাঁর অপর তিন ভাইও আসামি।
সহিদুর রহমান খান মুক্তির পরিবারিক সূত্র জানায়, মুক্তি পাওয়ার পর তিনি চিকিৎসা গ্রহণের জন্য ঢাকায় রওনা হয়েছেন। সেখানে কোনো হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেবেন। ২০১৪ সালে জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলায় সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি বের হয়ে আসে। তারপর সহিদুর রহমান মুক্তি সহ তাঁর ভাইয়েরা আত্মগোপন করেন।
দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর সহিদুর রহমান খান মুক্তি ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাঁর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। পরে ২০২২ সালে ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি জামিন পেয়েছিলেন। পরে আদালত জামিন বাতিল করার পর ২৮ ফেব্রুয়ারি আবার কারাগারে যান। এরপর ২০২৩ সালের ২০ নভেম্বর উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে ২২ নভেম্বর কারাগার থেকে মুক্ত হন। পরে আদালত তাঁর জামিন আবার বাতিল করলে পরদিনই আদালতে আত্মসমর্পণের পর কারাগারে যান। এরপর থেকে তিনি কারাগারেই ছিলেন।
প্রকাশ, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফারুক আহমদের গুলিবিদ্ধ লাশ তাঁর কলেজপাড়া এলাকার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর তাঁর স্ত্রী নাহার আহমদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০১৪ সালের আগস্টে গোয়েন্দা পুলিশ এ হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আনিসুল ইসলাম রাজা ও মোহাম্মদ আলী নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করে। আদালতে এ দুজনের দেওয়া স্বীকারোক্তিতে এই হত্যার সঙ্গে তৎকালীন সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা এবং তাঁর তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাঁকন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা জড়িত বলে বের হয়ে আসে।
২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় গোয়েন্দা পুলিশ। এতে সহিদুর রহমান খান মুক্তিরা চার ভাইসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি মনিরুল ইসলাম খান জানিয়েছেন, মামলাটির শুধু তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ বাকী রয়েছে। অন্য সব সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো মন্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো।