আপনাদের কোনও ভয় নাই: বিএনপি-জামাতের নেতাকর্মীরা
উজ্জ্বল অধিকারী: সিরাজগঞ্জে বিএনপি-জামাতের শীর্ষ নেতারা বলেছেন, এই সিরাজগঞ্জ সম্প্রীতির সিরাজগঞ্জ, হিন্দু-মুসলমান ভাইভাই। আমাদের মধ্যে ধর্মের ভেদাভেদ থাকতে পারে কিন্তু মানুষ হিসেবে কোনও ভেদাভেদ নাই। আমরা হিন্দু ধর্মালম্বীদের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলার নিন্দা জানাই। আমরা নেতাকর্মীদের দিয়ে মন্দিরে মন্দিরে পাহারার ব্যবস্থা করেছি।এছাড়াও এরকম যেকোনও ঘটনা প্রতিহত করতে প্রস্তুত। আপনারা আমাদের যেকোন প্রয়োজনে ডাকলেই পাশে পাবেন। আপনাদের কোনও ভয় নাই।রোববার (১১ আগস্ট) বিকাল ৪টায় জেলা কেন্দ্রীয় মন্দির মহাপ্রভুর আখড়ার সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে তারা এসব কথা বলেন। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করেন।
দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলার প্রদিবাদে সিরাজগঞ্জে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও পূজা উদযাপন পরিষদের ব্যানারে এই সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে সংহতি জানিয়ে সার্বিকভাবে পাশে থাকার অঙ্গিকার করেন বিএনপি-জামাতের জেলার শীর্ষ নেতারা।এসময় হিন্দু সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু ধর্মালম্বীদের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলার কথা তুলে ধরে দু:খ প্রকাশ করেন ও এর শাস্তি দাবি করেন। হিন্দুরাও এদেশের নাগরিক ও সুন্দরভাবে বাঁচার সমস্ত অধিকার আছে জানিয়ে এসব হামলা বন্ধ করার দাবি জানান।
এসময় জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সহ-সভাপতি প্রকৌশলী চন্দন কুমার পাল ও সাধারণ সম্পাদক নরেশ চন্দ্র ভৌমিকসহ বক্তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে সবজায়গায় আমাদের অবদান আছে। আমাদেরও সবার সাথে মিলেমিশে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। কোনভাবেই এসব হামলা মেনে নেওয়া যায়না। অতিদ্রুত এসব বন্ধ করতে হবে ও দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। আমরা যে আপনাদেরই একজন এটা দেশের প্রত্যেক মানুষের ভাবতে হবে।এসময় বিক্ষোভে সংহতি জানিয়ে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা হিন্দু-মুসলমান সবাই ভাই ভাই। আমাদের মধ্যে ধর্ম নিয়ে ভেদাভেদ থাকতে পারে কিন্তু মানুষ হিসেবে কোনও ভেদাভেদ নাই। দেশের বিভিন্ন জায়গার ঘটনা নিয়ে জামায়াতের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকেও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। আমরা সিরাজগঞ্জেও এটা নিয়ে মিটিং করেছি। আমরা সকল নেতাকর্মীদের এসব প্রতিহত করতে বলেছি। এছাড়াও জেলার সকল মন্দিরে পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব দিয়ে দিয়েছি এবং তারা সেটা করছেন। আপনাদের যেকোন সমস্যা হলে আমাদের জানাবেন আমরা আপনাদের ভাই হিসেবে পাশে দাঁড়াব।
এসময় বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু বলেন, হিন্দু-মুসলমান ভাই ভাই, এবং একে অন্যের প্রাণ। আজ অনেকেই বলেন যে একটা সংকট তৈরি হয়েছে, যদি হয়েই থাকে তাহলে কেন তৈরি হয়েছে। প্রত্যেকটা জায়গায় দলীয়করণ করার কারণে এটা তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা যখন দেখলাম শেখ হাসিনা পালিয়ে যাবার পরে পুলিশও নিরাপত্তা দিচ্ছেনা তখন বিভিন্ন জায়গা হামলা হচ্ছে, লুটপাট হচ্ছে তখন আমরা খুব কষ্ট পেলাম। তখন আমরা প্রেস কনফারেন্স করলেও নেট বন্ধ থাকায় যখন দেখলাম প্রচার করা যাচ্ছেনা তখন আমি বিএনপি নেতা কর্মীদের নিয়ে মসজিদে মসজিদে গেলাম ও প্রচার করলাম। রাস্তায় মাইক বের করে মাইকিং করলাম, সবাইকে শান্ত থাকতে আহ্বান করলাম।
তিনি বলেন, এই সংখ্যালঘু কথাটা কোথা থেকে আসলো, আমরা তো আপনাদের সংখ্যালঘু ভাবিনা। আমাদের তো আপনারা আপন ভাই মনে করেন না, যাদের করেন তারা কেন এই ১৫ বছরের বারবার আশা দিয়েও কিছু করলো না। তারা অনেককেই অনেককিছু করেছে কিন্তু হিন্দু ভাইদের বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও কিছু করেননি। এই ১৫ বছরে কেন তারা হিন্দুদের নির্যাতনকারীদের বিচার করলেন না। যদি বিএনপির কেও এগুলো করে থাকতো তাহলে অবশ্যই বিচার করতো। কিন্তু দু:খ লাগে এগুলো আপনারা বোঝেন না। আপনাদেরকে রাজনীতির বলির পাঠা বানিয়ে ব্যবহার করা হয়।
তিনি বলেন, আমাদের কাছে তথ্য ছিল যাদেরকে ছাত্র-জনতা বিতারিত করেছে সেই পরাজিত শক্তি আজ এই অনুষ্ঠানে এসে বিশৃঙ্খলা করে সিরাজগঞ্জে কৃত্রিম ক্রাইসিস তৈরি করতে চায়। আমি বলেছি সিরাজগঞ্জ সম্প্রীতির সিরাজগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ কোনও ব্যাক্তির না। এই সিরাজগঞ্জে আমরা সকল মানুষ সমান সমান, হিন্দু-মুসলমান সবাই এক। হিন্দুরাও খাজনা দেয়, ট্যাক্স দেয়। এমনকি মুক্তিযুদ্ধেও অবদান রেখেছে। এইযে ছাত্র আন্দোলন হলো সেখানেও আমার হিন্দু ছাত্র ভাইরা শহীদ হয়েছেন।
জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সহ-সভাপতি প্রকৌশলী চন্দন কুমার পালের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক দীলিপ কুমার গৌর এর সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন, এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নরেশ চন্দ্র ভৌমিক, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অমর কৃষ্ণ দাস, একই সংগঠনের সহ-সভাপতি জীবন কুমার বিশ্বাস, যুগ্ন-সম্পাদক প্রদীপ কুমার রায়, সদর উপজেলা শাখার সভাপতি অশোক ব্যানার্জিসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা।
এসময় জেলার বিভিন্ন এলাকার হিন্দু ধর্মালম্বীরা ছাড়াও বিএনপি-জামাতের নেতাকর্মীসহ দলমত নির্বিশেষে অসংখ্য সাধারণ ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।