ভারতের নির্বাচন: কেন বাংলাদেশর জন্য গুরুত্বপূর্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ ভারতের লোকসভা নির্বাচন শেষ হল। আগামী ৪ জুন জানা যাবে দিল্লির মসনদে কে বসছে। ভারতের নির্বাচন শেষ হওয়ার পর এখন সারা বিশ্বের নজর ভোট গণনার দিকে। ৪ জুনের ফলাফল কি হবে তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে জল্পনা-কল্পনা চলছে। এই নির্বাচনের ফলাফলের ব্যাপারে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও নানারকম উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অধীর আগ্রহে অনেকে অপেক্ষা করছেন ভারতের নির্বাচনের ফলাফল কী হয় তা দেখার জন্য। ভারতের লোকসভা নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আগ্রহ দুইটি কারণে। প্রথমত, ভারত আমাদের পাশের দেশ। সেখানে গণতন্ত্রের চর্চা কিভাবে হচ্ছে, বিভিন্ন জরিপগুলোর ফলাফল বাস্তবে কতটুকু প্রতিফলিত সেটা নিয়ে যেকোন রাজনীতিবিদেরই আগ্রহ আছে। এই স্বাভাবিক আগ্রহ থেকে ভারতের নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানারকম আলাপ-আলোচনা চলছে। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে গত এক দশকের বেশি সময় ধরে ভারতের প্রভাব বেড়েছে এবং বাংলাদেশের নির্বাচনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনায় ভারতের ভূমিকা মুখ্য হয়ে উঠেছে। আর এই বাস্তবতায় শেষ পর্যন্ত ভারতের নির্বাচনের ফলাফল কি হয় তার উপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে। যদিও অতীতে দেখা গেছে যে, ভারতের নির্বাচনে যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তাদের বাংলাদেশ নীতিতে তেমন কোন পরিবর্তন আসে না। বিশেষ করে কংগ্রেসকে পরাজিত করে বিজেপি যখন প্রথমবার ক্ষমতায় এসেছিল তখন অনেকেই মনে করেছিল, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্কের হয়তো অবনতি ঘটবে। বিশেষ করে ২০১৪ নির্বাচনের পর পরই ভারতের নির্বাচনে যে পট পরিবর্তন হয় তা আওয়ামী লীগ সরকারকে চাপে ফেলতে পারে এমন আশঙ্কা করেছিলেন অনেকে। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে তার উল্টো।
নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ এবং ভারতের সম্পর্ক আরও নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখনও যদি শেষ পর্যন্ত কোন নাটকীয় ঘটনা ঘটে, ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় আসে তাহলে কি সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোন পরিবর্তন ঘটবে? এটি এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত হচ্ছে।’ এই আলোচনার অন্যতম কারণ হল ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম শরিক ‘আম আদমি পার্টি’র অন্যতম নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সাম্প্রতিক বক্তব্য। ‘আম আদমি পার্টি’র এই প্রধান কারাগার থেকে প্যারোলে মুক্ত হয়ে বিভিন্ন জায়গায় বক্তৃতা দিয়েছেন এবং সে বক্তৃতায় তিনি বাংলাদেশের ব্যাপারে কিছু স্পর্শকাতর কথা-বার্তা বলেছেন। তিনি বলেছেন যে, বাংলাদেশে বিরোধী দলের নেতাদের গ্রেপ্তার করে শেখ হাসিনা নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন।এই বক্তব্যের প্রতিবাদ অবশ্য বাংলাদেশ থেকে করা হয়নি। পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখ পাত্র বলেছেন, এটি মেঠো বক্তব্য, রাজনীতির মাঠে এ ধরনের বক্তব্য অনেকে করে থাকেন। এটি কূটনৈতিক বক্তব্য নয় তাই এটিকে আমলে নেওয়ার কোন কারনও নেই। কিন্তু কূটনৈতিক মহল মনে করছে ইন্ডিয়া জোটে ‘আম আদমি পার্টি’ একটি প্রভাবশালী দল এবং শেষ পর্যন্ত যদি ইন্ডিয়া জোট জয়ী হয় সেক্ষেত্রে হয়তো বাংলাদেশের ব্যাপারে একধরনের চাপ তৈরী করা হতেও পারে। তবে এই মতের সাথে একমত নয় অনেকেই।
তারা মনে করে ইন্ডিয়া জোটের প্রধান দল হল কংগ্রেস এবং কংগ্রেসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় এলেও বাংলাদেশ নীতিতে কোন পরিবর্তন হবে না। আর যদি নির্বাচনে অনুমিত ফলাফলই হয় অর্থাৎ বিজেপি যদি জয়ী হয়। তাহলে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বার্তা নিয়ে এগিয়ে যাবে। তবে বিভিন্ন মহল মনে করছেন যে, নরেন্দ্র মোদী টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের ব্যাপারে কিছু ভিন্ন চিন্তা করতে পারেন। বিশেষ করে চীনের প্রভাব যেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে না পড়ে সেজন্য হয়তো নতুন সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো মন্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো।