জামায়াতের খালেদা প্রীতি
নিজস্ব প্রতিবেদক: বেগম খালেদা জিয়া এখন অসুস্থ। তিনি ফিরোজায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। সরকারের অনুকম্পায় ফৌজদারী কার্যবিধির ৪০১ ধারায় তাকে জামিন দেওয়া হয়েছে। অথচ এই জামিনের জন্য বিএনপি আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছিল। আন্দোলন করে কোন লাভ হয়নি। জামিন পাওয়ার জন্য তারা আইনের আশ্রয় নিয়ে মাঝ পথে থেমে গেছে। এখন সরকারই তাকে তার বাসভবনে থেকে চিকিৎসা করার অনুমতি দিয়েছে। রাজনীতিতে তিনি নেই বললেই চলে। রাজনৈতিক কর্মকান্ডে বেগম খালেদা জিয়ার একধরনের অনাগ্রহ তৈরী হয়েছে। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে যে, এখন বিএনপির পুরো কর্তৃত্ব তারেক জিয়ার হাতে। তারেক জিয়া যা বলছে, সেটি বিএনপির চূড়ান্ত এবং শেষ কথা বলেই বিবেচনা করা হয়। এর মধ্যেই গতকাল জামায়াতের পক্ষ থেকে বেগম খালেদা জিয়ার জন্য আম এবং লিচু পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, গতকাল বিকালে জামায়াতের নেতারা গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার জন্য আম এবং লিচু পাঠান। রাজশাহী এবং সাতক্ষীরা থেকে কয়েক ঝুড়ি আম এবং বেশ কিছু লিচু বেগম জিয়ার জন্য তার কার্যালয়ে দিয়ে আসা হয়। এই আম এবং লিচু অবশ্য অর্ধেক সেখানে রেখে বাকিটা ফিরোজায় পাঠানো হয়েছে। কিন্তু খালেদা জিয়া এখন ডায়বেটিকস্, উচ্চ রক্তচাপ, সহ নানারকম জটিলতায় ভুগছেন। তার কিডনির অবস্থাও ভালো না। আর এ কারণেই বেগম খালেদা জিয়ার জন্য এধরনের রসালো ফল খাওয়ার অনুমতি দেন না চিকিৎসকরা। চিকিৎসকরা অনুমতি না দিলেও জামায়াতের পক্ষ থেকে এই উপঢৌকন বেগম জিয়াকে পাঠানো হয়েছে। বেগম জিয়া তা গ্রহণও করেছেন। বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রতি জামায়াতের এই প্রেম বা ভালোবাসা নতুন কিছু নয়। দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রতি জামায়াতের আলাদা একটি ভালোবাসা এবং মমতা রয়েছে। বিশেষ করে জামায়াত নানা কারণেই বেগম জিয়া এবং বিএনপির কাছে ঋণী।
স্বাধীনতার পরবর্তীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ছিল এবং ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দল গড়ার কোন সুযোগ ছিল না। এই সাংবিধানিক বিধির কারণে জামায়াতের রাজনীতি আপনা আপনি নিষিদ্ধ হয়ে যায়, কিন্তু জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি পুনরায় শুরু করেন চান এবং জামায়াতকে রাজনীতির মাঠে স্বাগত জানিয়ে নিয়ে আসে। এরপর জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধী এবং জামায়াতের ঘৃণিত নেতা, পাকিস্তানের নাগরিক গোলাম আযমকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনেন এবং বাংলাদেশে থাকার অনুমতি দেন। আজকের জামায়াত যে ফুলে ফেঁপে উঠেছে তার পেছনে জিয়াউর রহমানের অবদান আছে বলেই অনেকে মনে করেন।’ ১৯৯১ সালের নির্বাচনে খালেদা জিয়া নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাননি। সরকার গঠনের মতো তার অবস্থা ছিল না। সেই সময় জামায়াতই তার পাশে দাঁড়ায় এবং জামায়াতের সমর্থন নিয়ে বেগম জিয়া সরকার গঠন করেন।
১৯৯৬ সালে পরাজয়ের পর জামায়াত-বিএনপির প্রকাশ্য প্রেম হয়। এবং বেগম খালেদা জিয়াই আগ্রহী হয়ে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করেন। এবং এ সম্পর্কের জেরে চার দলীয় জোট গঠিত হয়। ২০০১ এর নির্বাচনে এ চার দলীয় জোট বিজয়ী হয়। আর চার দলীয় জোটের বিজয়ের পর স্বাধীনতা বিরোধী কুখ্যাত মতিউর রহমান নিজামী এবং আলী আহসান মুজাহিদকে ৩০ লাখ শহীদের রক্তে রঞ্জিত জাতীয় পতাকা তুলে দেন বেগম খালেদা জিয়া। মন্ত্রিত্ব থাকার কারনে তাদের গাড়িতে শোভা পায় শহীদের রক্তে রঞ্জিত পতাকা। আর একারনেই জামায়াতের সাথে বিএনপির সম্পর্কটা অত্যন্ত গভীর। গত কিছুদিন ধরে বিএনপি এবং জামায়াতের মধ্যে একটি দূরত্ব ছিল। বিশেষ করে ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে বলা হয়েছিল যাতে জামায়াতের সঙ্গে কোন সম্পর্ক না করা হয়। আর এ কারণেই জামায়াতকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। ২০ দলীয় জোটকেও নিষ্ক্রিয় করা হয়েছিল। কিন্তু এখন আবার জামায়াত বিএনপির প্রকাশ্য প্রেম দেখা যাচ্ছে আর তারই অংশ হিসেবে এই আম উপঢৌকন খালেদা জিয়ার জন্য পাঠানো হয়েছে বলেই ধারণা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো মন্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো।