নওগাঁয় এক প্রসূতি নারীর পেটে গজ রেখেই সেলাই করে দেওয়ার অভিযোগ
সংবাদের আলো ডেস্ক: নওগাঁয় সুমি খাতুন নামে এক প্রসূতি নারীর পেটে গজ রেখেই সেলাই করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। গত বুধবার ( ১৫মে ) সকালে শহরের একতা ক্লিনিকে এই ঘটনা ঘটে। সুমি খাতুন জেলার আত্রাই উপজেলার বান্দাইখাড়া এলাকার উজ্জল হোসেনের স্ত্রী। ভুক্তভোগীর স্বামী উজ্জল থেকে জানা যায়, গত ১৫ মে প্রসব ব্যথা শুরু হলে নওগাঁ শহরের হাসপাতাল রোড এলাকায় অবস্থিত একতা ক্লিনিকে নেওয়া হয় ওই প্রসূতি নারীকে। সেখানে ওই দিনই সিজার করান প্রসূতি বিদ্যা ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ সার্জন ডাক্তার তানিয়া রহমান তনি। সিজারের পরই ওই নারী তার পেটে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন এবং প্রচুর পরিমানে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। ডাক্তার তানিয়া ক্লিনিকের মার্কেটিং অফিসার আব্দুর রউফকে দিয়ে দ্রুত রোগির পেটে সেলাই করিয়ে নেয়। তারপর বুধবার রাত ১০টার দিকে কৌশলে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন।
এরপর রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর রাতেই আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে জানা যায় তার পেটে বাড়তি কিছু একটা জিনিস রয়েছে। আর সেটার জন্য তাকে বৃহস্পতিবার সকালে পরিবারের সম্মতিতে ফের অপারেশন করার পর পেট থেকে গজ পাওয়া যায়। ভুল অপারেশন ও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে সংকটাপন্ন অবস্থায় বর্তমানে তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। উজ্জল হোসেন বলেন, ডাক্তার তানিয়া সিজার করার পর পেটেই গজ রেখে দেন। আবার অপারেশন শেষে ঐ ক্লিনিকের মার্কেটিং অফিসারকে দিয়ে তিন-চারজন মিলে আমার স্ত্রীকে চেপে ধরে পেটে সেলাই করিয়ে দেয়। তিনি তো এ বিষয়ে কোন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নয়। সেলাই দেওয়ার পরেও রক্তক্ষরণ বন্ধ হচ্ছিলনা। পরে ডাক্তারকে জানালে তারা কৌশলে রাজশাহীতে রেফার করে। আমার স্ত্রীর অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন। আমরা এর বিচার চাই।
বর্তমানে আমরা রাজশাহীতে রয়েছি। আমরা মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি ডাক্তার ও ক্লিনিক মালিকের বিরুদ্ধে। একতা ক্লিনিকের মার্কেটিং অফিসার আব্দুর রউফ বলেন, ডাক্তার তানিয়া আমাকে যেভাবে শিখিয়ে দিয়েছিল সেভাবেই আমি সেলাই করেছি। আপনি কি এ বিষয়ে অভিজ্ঞ কিনা বা এটা আপনার কাজ কিনা জানতে চাইলে তিনি কোন স্বদোত্তর দিতে পারেননি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ডাক্তার তানিয়া রহমান তনিকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, চেম্বারে রোগি দেখছি ৫ মিনিট পর আপনাকে কলব্যাক করছি বলে এই প্রতিবেদকের নাম্বার ব্লকলিস্টে রাখেন। পরে অন্য আরেকটি নাম্বার থেকে ফোন করা হলেও তিনি ফোনকল রিসিভ করেননি। ডাক্তার তানিয়ার স্বামী ডাক্তার আদনান ফারুককেও একাধিকবার ফোন করা হলে তিনিও ফোনকল রিসিভ করেননি। ক্লিনিক মালিক মাসুদুর আলম (আগা ) বলেন, ঘটনার জন্য আমরা দায়ী নয়।
যেসব ডাক্তার এ ঘটনার সাথে জড়িত তাদের সাথে কথা বলুন। আপনার ক্লিনিকে সিজার করার সময় এমন ঘটনা ঘটেছে এবং ডাক্তারকে আপনি নিয়ে এসেছেন রোগির সিজার করানোর জন্য। তাহলে আপনার এখন করণীয় কি ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন রোগির জন্য দোয়া করা ছাড়া আর কি-বা করতে পারি। বিষয়টি নিয়ে কথা হলে সিভিল সার্জন ডাঃ মো. নজরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আপনার কাছে থেকে আবগত হলাম। আমরা খোঁজ নিয়ে অবশ্যই দেখবো। আর রোগির অভিভাবক কেউ যদি অভিযোগ করেন তাহলে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো মন্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো।