টাঙ্গাইলের তিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাসের হার শূণ্য
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের কালিহাতী, নাগরপুর ও সখীপুর উপজেলার তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও কেউ পাস করতে পারেনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- কালিহাতী উপজেলার সোমজানি উচ্চ বিদ্যালয়, সখীপুর উপজেলার কালিয়া আড়াইপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং নাগরপুর উপজেলার ইসলামাবাদ দারুচ্ছুন্নাহ আলিম মাদরাসা। জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানাগেছে, সোমজানি উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী ছিল তিনজন, সখীপুরের কালিয়া আড়াইপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ছিল পাঁচজন এবং নাগরপুরের ইসলামাবাদ দারুচ্ছুন্নাহ আলিম মাদরাসার শিক্ষার্থী ছিল ২৭ জন। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এসব শিক্ষার্থীর কেউ পাস করতে পারেনি।
স্থানীয়রা জানায়, ২০০৪ সালে সোমজানি গ্রামের ডা. ক্যাপ্টেন আব্দুল বাসেত তার নিজ নামে ‘ডা. ক্যাপ্টেন আব্দুল বাসেত ইবনে আইনউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুতে এটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছিল। পরে উচ্চ বিদ্যালয় করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর সাতজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু দীর্ঘ দিনেও এমপিওভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষকরা নিয়মিত স্কুলে আসা বন্ধ করে দেন। স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতা বিরোধী ভূমিকা পালন করেছেন- এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালে তার নাম স্কুল থেকে বাদ দেওয়া হয়। নামকরণ করা হয় ‘সোমজানি উচ্চ বিদ্যালয়’। স্থানীয়দের ভাষায়, স্কুলে নিয়মিত ক্লাস হয় না। দুই চারজন শিক্ষার্থী এলেও শিক্ষকরা আসেন না। স্কুলের শিক্ষক মো. মুছা মিয়া জানান, এমপিওভুক্ত না হওয়ায় কোনো শিক্ষক স্কুলে যান না। কাগজে কলমে তারা ওই স্কুলের শিক্ষক। কিন্তু বাস্তবে করোনাকালীন সময়ের পর থেকে কেউ স্কুলে যান না। মাঝে মধ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক গিয়ে খোঁজ-খবর নেন।
তিনি জানান, নিজে রতনগঞ্জ বাজারে ওষুধের দোকান করেন। অন্য শিক্ষকরা কেউ কোচিং সেন্টার অথবা অন্য কোনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েছেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুর রজ্জাক জানান, বিনা বেতনে শিক্ষকরা থাকতে চান না। এবার যে তিনজন এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল তারা কর্মজীবী। তাই ভালো ফলাফল করতে পারেনি। ২০০০ সালে সখীপুরে কালিয়া আড়াইপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়টি এখনও এমপিওভুক্ত হয়নি। বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে প্রধান শিক্ষকসহ ১১ জন শিক্ষক ও তিনজন কর্মচারী রয়েছে। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫৬ জন। বিদ্যালয়টি ২০২১ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি পায়। এলাকাবাসী জানায়, বিদ্যালয়টিতে তেমন পড়াশুনা হয় না। শিক্ষকরা এসেই চলে যান। শিক্ষার্থীও তেমন নেই। শুধুমাত্র এমপিওভুক্তি পাওয়ার জন্য বিদ্যালয়টি চালু রাখা হয়েছে।
বিগত সময়েও ওই বিদ্যালয়ের ফলাফল ভালো ছিল না। জেলা শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, এবার জেলায় এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৮২ দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং শতভাগ পাস করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪০টি। মাদরাসায় ৭৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ এবং শতভাগ পাস করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২২টি। এছাড়া টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার নরিল্যা আ. খা. মহিলা দাখিল মাদরাসা এবং গাড়াখালি বালিকা দাখিল মাদরাসার একজন শিক্ষার্থীও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি। সখীপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ জানান, উপজেলায় এবার পরীক্ষার রেজাল্ট ভালো হয়েছে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যতীত।
কালিয়া আড়াইপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত না। তারপরও কেন তাদের পরীক্ষায় কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি বা ফলাফল খারাপ হয়েছে সেই বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। ওই বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সামনের পরীক্ষাগুলোতে ফলাফল খারাপ হলে ওই বিদ্যালয়ের ক্লাস কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে। নাগরপুর উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাদির আহমদ জানান, ইসলামাবাদ দারুচ্ছুন্নাহ আলিম মাদরাসার ২৭ শিক্ষার্থীর একজনও কেন পাস করলো না এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। যেহেতু তিনি নতুন যোগদান করেছেন- তাই প্রতিষ্ঠানের বিগত ফলাফলের বিষয়ে অবগত নন। প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যাখ্যা পাওয়ার পরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো মন্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো।