সিরাজগঞ্জে ১৩ হাজার টাকা জন্য শিশু সন্তানকে রেখে কারাগারে গেলেন মা
উজ্জ্বল অধিকারী: আদালতে যাওয়ার সময় শিশুকন্যা ফাতেমাকে রেখে পুলিশের গাড়িতে ওঠার সময় মা-মেয়ের কান্নায় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন খালেদা পারভীন। প্রায় ২০ হাজার টাকা কিস্তি পরিশোধ করলেও সুদ-আসল মিলে ১৩ হাজার টাকা বাকি ছিল। আর ওই টাকার জন্যই তিন বছরের শিশুসন্তানকে ফেলে ঈদের আগের দিন জেলে যেতে হলো হতদরিদ্র এ নারীকে।আদালতে পাঠানোর সময় তিন বছরের শিশুকন্যা ফাতেমাকে রেখে পুলিশের গাড়িতে উঠলেন খালেদা। এ সময় মা-মেয়ের কান্নায় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
বুধবার (১০ এপ্রিল) সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার চর দমদমা গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। এ দিন সকাল ১১টায় বাড়ি থেকে খালেদাকে গ্রেপ্তার করে বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।
উল্লাপাড়া মডেল থানার ওসি আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, খালেদা পারভীনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা রয়েছে। আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে। বিকেলে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।জানা গেছে, খালেদা পারভীনের স্বামী ইব্রাহিম দিনমজুর। অভাবের সংসারে চার মেয়ের মধ্যে দুজনকে বিয়ে দিয়েছে। একজন মেয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ে। সবার ছোট মেয়ে ফাতেমা। বছর দুয়েক আগে উদ্দীপন নামে একটি এনজিও থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নেন খালেদা। অভাবের কারণে সময়মতো ঋণের কিস্তিও পরিশোধ করতে পারেনি।
তবে বেশ কয়েকটি কিস্তিতে প্রায় ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছে। সুদ-আসল মিলে ১৩/১৪ হাজার টাকা পেত সংস্থাটি। ছয় মাস আগে স্বামীসহ ঢাকার পোশাক কারখানায় চাকরি নেয় তারা। চাকরি করে ঋণের বাকি টাকা পরিশোধ করতে চেয়েছিল।
এ দিকে ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় উদ্দীপন এনজিও তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও যে ছিল বিষয়টি তারা জানত না। মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) রাতে ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি ফেরেন খালেদা। বুধবার সকাল ১১টার দিকে পুলিশ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
বেসরকারি সংস্থা উদ্দীপনের সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার ব্যবস্থাপক মনিরুল ইসলাম বলেন, ঋণ নেওয়ার সময় অফিসে এসে ভালো ব্যবহার করেন গ্রাহকরা। কিন্তু সময়মতো কিস্তি দেন না। ঋণ পরিশোধ না করা গ্রাহকদের বিরুদ্ধে বাধ্য হয়ে আদালতে যেতে হয় তাদের।
তিনি বলেন, খালেদা পারভীনের ঈদের আগের দিনে গ্রেপ্তার এবং শিশুসন্তানকে ফেলে জেলে যাওয়ার বিষয়টি জেনে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। কিন্তু এনজিওর একজন কর্মী হিসেবে আমিও বড় অসহায়।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো মন্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো।