জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সকালে প্রো-ভিসি নিয়োগ, রাতে স্থগিত
নিজেস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রো-ভিসি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এবং লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে নিয়োগ দিয়ে বৃহস্পতিবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল সরকার। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে আরেক প্রজ্ঞাপন দিয়ে এই নিয়োগ স্থগিত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিষয়টি নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট মহলে। ড. মিজানুর রহমান বলছেন, একটি চিহ্নিত মহল সরকারকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে এই নিয়োগ স্থগিত করার পেছনে কলকাঠি নেড়েছে।তার ভাষ্য, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রো-ভিসি হিসেবে আমি যোগদান করলে কারও অনিয়ম, দুর্নীতি করা অসম্ভব হয়ে পড়ত। তাই আমার নিয়োগ স্থগিত করতে কেউ কেউ উঠেপড়ে লেগেছিল।’ প্রো-ভিসির নিয়োগ প্রজ্ঞাপনে রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের অনুমোদনক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুসারে চার বছরের জন্য নিয়োগ করার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল।
তথ্যমতে, প্রো-ভিসি হিসেবে নিয়োগের আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। এরপর তা রাষ্ট্রপতি তথা চ্যান্সেলরের অনুমোদন শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আসে। পরে মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ এ পদে নিয়োগের আগে নিরাপত্তাজনিত কারণে যাচাই করা হয় আরও কয়েক ধাপে।
জানা গেছে, ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের নিয়োগের আগেও সম্পন্ন করা হয় এসব প্রক্রিয়া; কিন্তু তার নিয়োগের পরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপিপন্থি শিক্ষক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ আনা হয়।
এই প্রতিবেদকের হাতে আসা তথ্যে দেখা গেছে, এই অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাকাল্টি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির আওয়ামী লীগপন্থি শিক্ষক সংগঠন নীল দলের আহ্বায়ক হিসেবে দুই বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্যও ছিলেন। তিনি বর্তমানে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রো-ভিসি পদে নিয়োগ পেয়েও স্থগিত হওয়া অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার বিরুদ্ধে সাদা দল ও বিএনপি সম্পৃক্ততার অভিযোগ আনা হয়েছে বলে জেনেছি। কিন্তু আমি তো ২০০৮ সাল থেকে আওয়ামী লীগপন্থি শিক্ষক সংগঠন নীল দলের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছি। এর পরও আমার বিরুদ্ধে অন্য দলের সম্পৃক্ততার অভিযোগ আনা হয়েছে, যা চরম বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসামূলক বলে মনে করছি। তিনি বলেন, আমি এর আগে জাতীয় বস্ত্র প্রকৌশল ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (নিটার) ও লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। আমাকে যোগ্য মনে করার কারণেই সরকার গোয়েন্দাদের মাধ্যমে যাচাইবাছাই শেষে আমাকে প্রো-ভিসি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল। কিন্তু রাষ্ট্রপতি তথা চ্যান্সেলর নিয়োগ দেওয়ার পরও আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে নামে একটি পক্ষ। তিনি বলেন, আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করলে সেখানে কারও কারও অনিয়ম, দুর্নীতি করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাই হয়তো আমার নিয়োগ স্থগিত করতে কেউ কেউ উঠেপড়ে লাগে। তার বিরুদ্ধে আনা বিএনপি সম্পৃক্ততা অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই বলে জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রো-ভিসি নিয়োগের পর তা স্থগিত করার ব্যাপারে জানতে চাইলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান বলেন, সরকার যে কাউকে প্রো-ভিসি হিসেবে নিয়োগ দিতে পারে। কিন্তু আমি জেনেছি তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ পাওয়ায় তার নিয়োগ স্থগিত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ ছিল। এ ছাড়া তিনি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের মানুষ কি না- তা নিয়েও অনেকের সন্দেহ রয়েছে। ড. মশিউর রহমান বলেন, আমি চেয়েছি যত দিন আমি উপাচার্য থাকব তত দিন বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভালো একটি টিম থাকুক। প্রো-ভিসি নিয়োগের প্রজ্ঞাপন পাওয়ার পর বিষয়টি আমি জানিয়েছি। এরপর সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে।
এদিকে জানা গেছে, নিটারে উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনকালে ২০২১ সালে ড. মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছিল। পরে এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি করে নিটার। তদন্তে অভিযোগকারীসহ ৩৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেও এই অভিযোগের সত্যতা পায়নি তদন্ত কমিটি। পরে প্রতিবেদনে তদন্ত কমিটি জানায়, ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অসত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। অভিযোগকারী কয়েকজনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ চাপে বাধ্য হয়ে অভিযোগ করেছিলেন বলেও উঠে আসে তদন্ত প্রতিবেদনে।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো মন্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো।