মধুপুরে মা-ছেলেসহ চার জনকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের মধুপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের পুন্ডুরা এলাকায় জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বৃদ্ধ মা, দুই ছেলে ও এক ছেলের স্ত্রীকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে।
জরুরি পরিষেবা ৯৯৯- এ কল করে নির্যাতিত পরিবারের সদস্যরা মুক্ত হওয়ার পর একজন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং বউ-শ্বাশুরিকে মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অপরজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে বুধবার (৬ নভেম্বর) বিকাল ৪টা পর্যন্ত মধুপুর থানায় কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ করেনি বলে অফিসার ইনচার্জ জানিয়েছেন।
নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিরা হচ্ছেন, ওই গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের স্ত্রী শাফিয়া বেগম (৫৫), তার বড় ছেলে আলমগীর হোসেন, ছোট ছেলে জুব্বার আলী ও আলমগীরের স্ত্রী জ্যোৎস্না বেগম। তাদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আলমগীর হোসেনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও শ্বাশুরি শাফিয়া এবং ছেলের বউ জ্যোৎস্নাকে মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানায়, পুন্ডুরার মৃত নুরুল ইসলামের দুই ছেলে আলমগীর ও জুব্বারের সাথে প্রতিবেশি মৃত আবু সেকের ছেলে কালু মিয়া সেকসহ তার ভাইদের সঙ্গে ১.১৯ একর জমি নিয়ে বিরোধ চলছে। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মামলা-মোকদ্দমা চলছে। ২৩ বছর বাটোয়ারা মামলা চলার পর চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি আলমগীর-জুব্বারদের পক্ষে আদালতের রায় হলে তারা জমির খাজনা-খারিজ করেন। মাঠ ও প্রিণ্ট পর্চাও তাদের নামেই হয়েছে। এমতাবস্থায় প্রতিপক্ষ কালু মিয়া সেক, তার ভাই আজগর ও সামাদরা এ নিয়ে কয়েক মাস আগে ওই জমির মালিক দাবি করে আদালতে ১৪৪ জারি চেয়ে আবেদন করলে আদালত স্থানীয় সংশ্লিষ্ট বিভাগের তদন্ত রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে ১৪৪ ধারা জারি করে।
আলমগীর-জুব্বাররা কাগজপত্রের ভিত্তিতে ১৪৪ ধারার বিপরীতে জজ কোর্টে আপিল করেছেন। এ নিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে দুই পরিবারের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল।
মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে কালু মিয়ারা বিরোধীয় ৬০ শতক জমিতে গিয়ে ঘর নির্মাণ শুরু করেন। এ সময় আলমগীর-জুব্বাররা বাঁধা দিতে গেলে প্রতিপক্ষরা তাদেরকে প্রথমে পিটিয়ে পরে গাছের সাথে বেঁধে রাখে। তাদের মা শাফিয়া বেগম ফেরাতে গেলে প্রতিপক্ষরা তাকেও গাছে বেঁধে ফেলেন।
শ্বাশুরিকে রক্ষায় ছেলের বউ জ্যোৎস্না বেগম এগিয়ে যান। প্রতিপক্ষের লোকজন ওই ছেলের বউকেও হাত-পা বেঁধে বসিয়ে রাখে। এ অবস্থায় পুলিশে খবর দিলে না আসায় নির্যাতিতদের পক্ষে জাতীয় জরুরি পরিষেবা ৯৯৯- এ কল দিয়ে সাহায্য চাওয়া হয়। পরে মধুপুর থানা পুলিশ এসে রশি দিয়ে গাছের সঙ্গে বাঁধা অবস্থা থেকে তাদের উদ্ধার করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ওয়ার্ড কাউন্সিলর হারুন অর রশীদ ও স্থানীয় মাতব্বররা ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয় পক্ষকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। পরে মধুপুর থানা পুলিশকে ফোন করে জানানো হয়। কাউন্সিলর হারুন অর রশীদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।
এদিকে পুলিশ তাদেরকে উদ্ধার করে মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। তাদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আলমগীরকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। শ্বাশুরি শাফিয়া বেগম, ছেলের বউ জ্যোৎস্নাকে মধুপুর হাসপাতালে রাখা হয়েছে। জুব্বারকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
মধুপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোল্লা আজিজুর রহমান জানান, জমি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধের জেরে ধাক্কা-ধাক্কি হয়েছে। এ ঘটনায় বুধবার বিকাল পর্যন্ত কেউ লিখিত দেয়নি। ওসি আরও জানান, দুই পক্ষকে ডেকে এনে ১৪৪ ধারা জারি ও তার আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শান্তি রক্ষায় জমিতে যেতে বারণ করা হয়েছে।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো মন্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো।