পুলিশ সংস্কারে ১০৮ সুপারিশ প্রতিবেদন জমা
সংবাদের আলো ডেস্ক: পুলিশকে প্রভাবমুক্ত ও জবাবদিহিমূলক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে বলপ্রয়োগ, আটক, গ্রেপ্তার, তল্লাশি, জিজ্ঞাসাবাদ, মামলা রুজু, তদন্ত, ভেরিফিকেশন ও মানবাধিকার চর্চাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ১০৮টি সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পুলিশ সংস্কার কমিশন। গতকাল বুধবার (১৫ জানুয়ারি) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেন কমিশনের সদস্যরা। বলপ্রয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে সুপারিশে বলা হয়, ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি আইন, ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন, ১৯৪৩ সালের বেঙ্গল পুলিশ রেগুলেশন্সের (পিআরবি) যথাযথ অনুসরণ করে এবং সেইসঙ্গে সময়ের বিস্তর ব্যবধানে আধুনিক বিশ্বে উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে যেসব প্রযুক্তিগত কৌশল ব্যবহার করা হয়, তা বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ কর্তৃক পাঁচ ধাপে বলপ্রয়োগের একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রণীত ধাপগুলোকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনী কর্তৃক বলপ্রয়োগের জন্য নির্ধারিত নীতিমালা অনুসরণ করে সুবিন্যস্ত করা হয়েছে। এই পদ্ধতি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অনুসরণের লক্ষ্যে আইনগত বৈধতা দেওয়ার জন্য কমিশন সুপারিশ করছে। এতে ন্যূনতম ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাণহানির ঝুঁকি এড়িয়ে চলা সম্ভব হবে। আটক, গ্রেপ্তার, তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ: গ্রেপ্তার, তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশনা [ 8 SCOB (2016) AD] অবিলম্বে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। অধিকন্তু, রাষ্ট্রপক্ষ কতৃক দায়েরকৃত আপিল বিভাগের উক্ত রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনটি প্রত্যাহার কিংবা দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ করে উহার আলোকে, প্রয়োজনে, ফৌজদারি কার্যবিধিসহ সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি-প্রবিধান সংশোধন করা যেতে পারে।২। আটক ব্যক্তি বা রিমান্ডে নেওয়া আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রতিটি থানায় স্বচ্ছ কাচের ঘোরাটোপ দেওয়া একটি আলাদা জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষ ( Interrogation room) অবশ্যই থাকবে।
৩। পুলিশের তত্ত্বাবধানে থানাহাজত ও কোর্ট হাজতের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং বন্দিদের কোর্ট থেকে আনা-নেওয়ার সময় ব্যবহারকারী যানবাহনগুলোতে মানবিক সেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিচ্ছন্নতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির সুপারিশ করা হলো।
৪। নারী আসামিকে যথেষ্ট শালীনতার সঙ্গে নারী পুলিশের উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।
৫। তল্লাশির সময় পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয় দিতে অস্বীকার করলে অথবা সার্চ ওয়ারেন্ট না থাকলে জরুরি যোগাযোগের জন্য নাগরিক নিরাপত্তা বিধানে একটি জরুরি কল সার্ভিস চালু করা যায়।
৬। জব্দকৃত মালামালের যথাযথ তালিকা না হলে এবং তল্লাশি কার্যক্রমটি সন্দেহজনক মনে হলে তা তাৎক্ষণিক জানানোর জন্য মেট্রো এলাকায় ডেপুটি পুলিশ কমিশনার/জেলা পুলিশ সুপারের বরাবর জরুরি কল সার্ভিস চালু করা যায়।
৭। অভিযান পরিচালনা করার সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যের কাছে জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম ও ভিডিও রেকর্ডিং ডিভাইসসহ (Body-wom camera) ভেস্ট/পোশাক পরিধান করতে হবে।
৮। রাতের বেলায় (সুর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয়ের মধ্যবর্তী সময়) গৃহ তল্লাশি করার ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট/স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি/স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
৯। থানায় মামলা রুজু তথা এফআইআর গ্রহণ ও তদন্ত কঠোরভাবে সার্কেল অফিসার বা পুলিশ সুপার কর্তৃক নিয়মিত তদারকি জারি রাখতে হবে।
১০। কেইস ডায়েরি আদালতে দাখিল করে আদালতের আদেশ ব্যতীত কোনোক্রমেই এফআইআর বহির্ভূত আসামি গ্রেপ্তার করা যাবে না।
১১। ভুয়া/গায়েবি মামলায় অনিবাসী/মৃত/নিরাপরাধ নাগরিকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দায়ের প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য করতে হবে।
১২। অজ্ঞাতনামা আসামিদের নামে মামলা দেওয়ার অপচর্চা পরিহার করতে হবে। কোনো পুলিশ সদস্য যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে কাউকে এধরনের মামলায় হয়রানি করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
১৩। বিচার প্রক্রিয়ায় সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে চূড়ান্তভাবে দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত মিডিয়ার সামনে কাউকে অপরাধী হিসেবে উপস্থাপন করা যাবে না।
মানবাধিকার:
১। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত করার জন্য সরাসরি সমস্ত পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ওপর ন্যস্ত করার জন্য পুলিশ সংস্কার কমিশনের তরফ থেকে জোর সুপারিশ করা হচ্ছে।
২। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দ্বারা বা তাদের প্ররোচনায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হলে, সংশ্লিষ্ট সংস্থা প্রধান নিজেই যাতে তদন্তের নির্দেশ প্রদান করতে পারেন, সেই লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রধান কার্যালয়েও একটি মানবাধিকার সেল কার্যকর থাকার বিষয়ে কমিশন সুপরিশ করছে।
৩। সংবিধান, বিভিন্ন আইন এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশনা পুলিশ কর্তৃক অমান্য করার দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে তাৎক্ষণিক প্রতিকার পাওয়ার জন্য নতুন হেল্প লাইন চালু করা কিংবা ট্রিপল নাইন (৯৯৯) কর্তৃক সেবার মধ্যে এ ধরনের অপরাধ অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
৪। ভুক্তভোগী ও সাক্ষী সুরক্ষার জন্য একটি সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা উচিত, যা জনবান্ধব পুলিশিং নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
৫। পুলিশের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এবং জনবান্ধব পুলিশ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে র্যাবের (র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন) অতীত কার্যক্রম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ পর্যালোচনা করে এর প্রয়োজনীয়তা পুনর্মূল্যায়ন করা যেতে পারে।
৬। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্র-জনতাকে হত্যা ও আহত করার জন্য দোষী পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
প্রভাবমুক্ত ও জবাবদিহিমূলক পুলিশ বাহিনী
১। পুলিশ সংস্কার কমিশন সামগ্রিক বিষয় ধর্তব্যে নিয়ে একটি নিরপেক্ষ প্রভাবমুক্ত ‘পুলিশ কমিশন’ গঠনের বিষয়ে নীতিগতভাবে ঐকমত্য পোষণ করে।
২। প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশন আইনের আওতায় অন্তর্ভুক্ত একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হবে নাকি সাংবিধানিক কাঠামোভুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান হবে তা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে হওয়া বাঞ্ছনীয়।
৩। পুলিশ কমিশনের গঠন, কার্যপরিধি, সাংবিধানিক বা আইনি বাধ্যবাধকতা, আইনে অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন বিষয়াদি বিচার-বিশ্লেষণ ও যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন।
থানায় জিডি, রেকর্ড, মামলা, রুজু, তদন্ত ও পুলিশ ভেরিফিকেশন :
১। থানায় জিডি গ্রহণ বাধ্যতামূলক, কোনোক্রমেই জিডি গ্রহণ প্রত্যাখ্যান করা যাবে না।
২। মামলার এফআইআর গ্রহণে কোনোরূপ অনীহা/বিলম্ব করা যাবে না।
৩। ফৌজদারি মামলার তদন্তের জন্য একটি বিশেষায়িত দল গঠন করতে হবে, যাদের তদন্ত সংক্রান্ত ইউনিট ও থানা ব্যতীত অন্যত্র বদলি করা যাবে না। ভবিষ্যতে মামলা পুলিশ পরিচালনা ও তদন্ত একটি ক্যারিয়ার প্ল্যানিংয়ের অধীনে পরিচালিত হতে হবে এবং তারা ভেরিফিকেশন ফৌজদারি মামলা প্রসিকিউশন সংক্রান্ত একটি বিশেষ তদন্ত দল হবে।
পুলিশ ভেরিফিকেশন:
৪। জাতীয় পরিচয়পত্রধারী (NID) চাকরিপ্রার্থীদের স্থায়ী ঠিকানা অনুসন্ধানের বাধ্যবাধকতা রহিত করা যেতে পারে।
৫। চাকরিপ্রার্থীর বিভিন্ন শিক্ষাগত যোগ্যতা/শিক্ষা সনদপত্র/ট্রান্সক্রিপ্ট/মার্কশিট ইত্যাদি যাচাই-বাছাই করার দায়-দায়িত্ব নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের ওপর বর্তাবে। এগুলো পুলিশ ভেরিফিকেশনের অংশ হবে না।
৬। পুলিশ ভেরিফিকেশনের ক্ষেত্রে চাকরিপ্রার্থীর রাজনৈতিক মতাদর্শ যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজনীয়তা রহিত করাসহ এতদসংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট বিধিমালা সংস্কার করা যেতে পারে। তবে চাকরিপ্রার্থী বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা সংক্রান্ত কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে তা ভেরিফিকেশন রিপোর্টে প্রতিফলিত করতে হবে।
৭। চাকরির জন্য সব পুলিশ ভেরিফিকেশন সর্বোচ্চ ১ (এক) মাসের মধ্যে সমাপ্ত করতে হবে এবং অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন হলে সর্বোচ্চ ১৫ (পনেরো) দিন পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
যুগোপযোগী আইন ও প্রবিধানমালা:
ব্রিটিশ আমলে প্রণীত কিছু কিছু আইন ও প্রবিধান যুগের প্রয়োজনে সংস্কার/হালনাগাদ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। কমিশনে নিম্নলিখিত আইনগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তা যুগোপযোগী করার জন্য সুপারিশ করছে।
১। পুলিশ আইন, ১৮৬১ : পুলিশকে জনবান্ধব ও জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক বাহিনী/প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার জন্য এই আইনের প্রয়োজনীয় পরিবর্তন/পরিমার্জন অথবা নতুন আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে।
২। ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮; বলপ্রয়োগ ও মানবাধিকার সুরক্ষায় এ আইনের প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের সুপারিশ করা হলো।
৩। পি আর বি, ১৯৪৩; জনবান্ধব ও জবাবদিহিমূলক পুলিশ বাহিনী গঠনে এ প্রবিধানমালায় সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে পরিবর্তন/পরিমার্জন অথবা নতুন প্রবিধানমালা প্রণয়ন করা যেতে পারে।
পুলিশের দুর্নীতি ও প্রতিকার:
১। ‘সর্বদলীয় কমিটি’ গঠন: পুলিশের কাজকর্মে ইচ্ছাকৃত ব্যত্যয় বা পেশাদারি দুর্নীতি রোধে স্বল্পমেয়াদি একটি কার্যক্রম হিসেবে ‘ওয়াচডগ বা ওভারসাইট কমিটি গঠন করা যায়। প্রতিটি থানা/উপজেলায় একটি ‘সর্বদলীয় কমিটি’ গড়ে তোলা যায়, যারা স্থানীয় পর্যায়ে ‘ওভারসাইট বডি’ হিসেবে কাজ করবে এবং দুর্নীতি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।
২। বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন: উপরোল্লিখিত ১ম সুপারিশ চলমান অবস্থায় একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা যায় এবং ‘সর্বদলীয় কমিটি’র অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে যাবতীয় বিষয় ধর্তব্যে নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি ও প্রতিকার সুপারিশ প্রণয়নের জন্য এই টাস্কফোর্সকে দায়িত্ব প্রদান করা যায়।
৩। পুলিশের বর্তমান পুরস্কার কাঠামোকে পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। বর্তমান ব্যবস্থানতে তাদের বিভিন্ন কাজে প্রণোদনা ও উৎসাহ দিতে বিভিন্ন পুরস্কার (মেডেল ও ভাতা/বিপিএম/পিপিএম অন্যান্য) দেওয়া হয়। বর্তমান কাঠামোতে সুনির্দিষ্ট কোনো মানদণ্ড নেই এবং পুরো প্রক্রিয়াটি প্রভাবমুক্ত নয়। এই সুযোগের অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। এতদ্সংক্রান্ত নিয়মকানুন ও বিধিমালা যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করা প্রয়োজন।
দুর্নীতি প্রতিরোধ ও চলমান ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ:
১। নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করা একান্ত প্রয়োজন এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা/কর্মচারীর সততা ও নৈতিকতার উচ্চমান নিয়ে সন্তুষ্ট হওয়ার পর তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা একান্ত প্রয়োজন।
২। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন, ইত্যাদি উচ্চ পর্যায়ের একটি পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে সম্পন্ন করা যেতে পারে। যেকোনো ধরনের অনিয়ন/ব্যত্যয় তাৎক্ষণিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থায় আনতে হবে।
৩। পদায়ন, বদলি এবং পদোন্নতির ক্ষেত্রে সততা ও নিষ্ঠাকে গুরুত্ব প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।
৪। পদায়ন, বদলি ও পদোন্নতির জন্য ভিন্ন ভিন্ন স্তরে সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করে সংশ্লিষ্ট সকলকে অবহিত করতে হবে।
৫। থানার কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভয়ভীতির মাধ্যমে অর্থ আদায়ের অপবাদ/অভিযোগ পুলিশ সুপার কর্তৃক তদন্তের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সরকারি ক্রয়:
৬। প্রতিটি থানায় বিবিধ খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকা প্রয়োজন যেমন—লাশ পরিবহন, সাক্ষী আনা-নেওয়া, বেওয়ারিশ মৃতদেহের সৎকার ইত্যাদি।
৭। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অডিট ও ইন্সপেকশন শাখার মাধ্যমে অধীনস্ত ইউনিটসমূহের ক্রয়-সংক্রান্ত বিষয়াদির পরীক্ষা-নিরীক্ষা রুটিন ভিত্তিতে সম্পন্ন করতে হবে।
৮। একই সঙ্গে দ্বৈবচয়ন/আকস্মিক পরিদর্শন বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অডিটের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
থানাকেন্দ্রিক আর্থিক বিষয়াদি:
৯। জিডি গ্রহণে কালক্ষেপণ /ওজর-আপত্তি বা কোনো রকম দুর্নীতির প্রমাণে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
১০। মামলার তদন্তব্যয় বৃদ্ধিসহ জিডি ভেরিফিকেশন-সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রমের জন্য প্রতি থানায় বিশেষ বরাদ্দ ও ভাতার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
১১। থানায় প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র সরবরাহ ও মেরামতের নিয়মিত ব্যবস্থা করা উচিত। এজন্য প্রতি থানা বরাবর প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করা যেতে পারে।
১২। পুলিশের টহল ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য টিওএন্ডইভুক্ত প্রয়োজনীয় গাড়ি এবং জ্বালানি সরবরাহ সুনিশ্চিত করা যেতে পারে।
১৩। থানায় বাদী/বিবাদীদের নিয়ে কোনো ধরনের মধ্যস্থতা, Arbitration বা Altemate Dispute Resolution (ADR) এর জন্য বৈঠক বা অন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না।
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা:
১৪। মামলা প্রদানের ক্ষেত্রে বডিওন (body-wor) ক্যামেরাসহ উন্নত প্রযুক্তির সন্নিবেশ করা যেতে পারে।
১৫। মামলা দায়ের, রেকার বিল চার্জ করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে উর্ধ্বতন কর্মকর্তা কর্তৃক মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
১৬। রাস্তায় যানবাহনে নিয়মিত চেকিং বা চেকপোস্টের মাধ্যমে চেকিংয়ের ক্ষেত্রে বাড়িওন (body-wom) ক্যামেরা বা সিসি ক্যামেরার সন্নিবেশন ও প্রয়োগ নিশ্চিত করা যেতে পারে।
প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা:
প্রশিক্ষণ
১। প্রশিক্ষণে অর্জিত জ্ঞান ও ফলাফলকে পদোন্নতি ও পদায়নের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নিতে হবে।
২। প্রশিক্ষণের ফলাফল প্রশিক্ষণার্থীর এসিআরের প্রাপ্ত নম্বরে প্রতিফলিত হতে হবে।
৩। অর্গানাইজড ক্রাইম বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ (Expertise) এনে ট্রেনিং সেন্টারে প্রায়োগিক এবং ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা যেতে পারে।
৪। প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ (TOT) কর্মসূচিতে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত করে এর মাধ্যমে দক্ষ পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষক হিসেবে গড়ে তোলা যায়। যাতে তারা অন্যান্য পুলিশ সদস্যকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করতে সক্ষম হয়।
৫। বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যরা একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত পুলিশের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান এবং বিশেষায়িত ইউনিটগুলোতে চাকরি করতে বাধ্য থাকবেন।
৬। বলপ্রয়োগে অনুমোদিত Standard Operating Procedure (SOP) অনুসরণের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিতে হবে এবং তা মনিটরিং করতে হবে।
৭। পুলিশ সদস্যদের মানবিক মূল্যবোধে উজ্জীবিত করার জন্য এবং স্ব-স্ব ধর্মীয় নৈতিকতা শিক্ষা দিতে তাদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে এসংক্রান্ত পৃথক প্রশিক্ষণ মডিউল অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৮। বৈধ ও অবৈধ আদেশ প্রতিপালনের বিষয়ে প্রশিক্ষণে সম্যক ধারণা দিতে হবে। ৯। পুলিশ সদস্যদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তাদের মানবাধিকার বিষয়াদির ওপর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতিমালার বিষয়ে নিবিড় প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে।
১০। প্রত্যেক পুলিশ সদস্য ‘জনগণের সেবক এবং বন্ধু’ এই মনোভাব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের মধ্যে জাগ্রত করতে হবে।
সক্ষমতা:
ভৌগোলিক অবস্থান ভেদে পুলিশি কার্যক্রম
১১। বরিশাল, চাঁদপুর, শরীয়তপুর, খুলনা, ভোলাসহ সমগ্র দেশে আনুমানিক ২৪ দশমিক ১৪০ (প্রায়) বর্গকিলোমিটার জলপথমণ্ডিত এলাকা নৌ নেটওয়ার্কভুক্ত রয়েছে, তাই এই অঞ্চলে নদীপথে দস্যুতা, চোরাচালান, মানব পাচারসহ অন্যান্য অপরাধ দমনে কার্যকর ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে এসমস্ত জেলায় ‘ভাসমান থানা’ গঠন করার সুপারিশ করা হচ্ছে। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ভাসমান থানা চিহ্নিত করে এসমস্ত এলাকায় বিদ্যমান নৌযানসহ অন্যান্য | লজিস্টিকসের সংখ্যা ও পরিমাণ নির্ধারণপূর্বক প্রয়োজনীয় প্রকল্প প্রণয়ন করে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
১২। পার্বত্য চট্টগ্রামে অপরাধের ধরন শুধু ভূমি বিরোধ ও দৈনন্দিন ফৌজদারি অপরাধের সঙ্গে জড়িত নয়; বরং সশস্ত্র সংঘাত ও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপক শঙ্কা ও ঝুঁকির সৃষ্টি করে। উল্লেখ্য যে, চিটাগাং হিল ট্র্যাক্ট রেগুলেশন্স, ১৯০০ অনুযায়ী পার্বত্য অঞ্চলে সামাজিক বিচার-আচার সম্পন্ন হওয়ার সংস্কৃতি এখনও চালু আছে। উপযুক্ত অবস্থায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত পুলিশ তাদের সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ সম্পাদন করতে উদ্যোগী থাকবে।
গবেষণা ও উন্নয়ন:
১৩। প্রস্তাবিত Centre for Police Research and Development (CPRD) গঠন এবং প্রতিষ্ঠায় এই কমিশন নীতিগতভাবে ঐকমত্য পোষণ করে। প্রাথমিকভাবে জনবল এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি পুলিশ স্টাফ কলেজ ও পুলিশ একডেমির সঙ্গে সমন্বয় করে পরিচালিত হতে পারে। তবে দীর্ঘমেয়াদে পৃথক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের বাজেট প্রাপ্তি অনুসারে বিবেচনা করা যেতে পারে।
১৪। টেক পুলিশিং : বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তিগত অগ্রগতির কারণে পুলিশিং কার্যক্রমের প্রতিনিয়ত ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। এ সংক্রান্ত অ্যান্ডভান্সড্ ডিজিটাল ফরেনসিক এবং ডিএনএ অ্যানালাইসিস, বায়োমেট্রিক ভিত্তিক, ডাটা ভিত্তিক এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স) ভিত্তিক এবং সাইবার অপরাধ ও সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত ইত্যাদি সর্বশেষ প্রযুক্তির ব্যবহার বাংলাদেশ পুলিশে প্রচলন করা যেতে পারে। এতদুদ্দেশ্যে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পুলিশের দক্ষ জনবল তৈরি করা প্রয়োজন।
১৫। আইসিটি ও টেক কোর: পুলিশ বাহিনীকে নতুন নতুন টেকনোলজির সঙ্গে পরিচিত করানো এবং সেগুলোর যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করা, সাইবার ঝুঁকি প্রতিরোধ করা, আধুনিক প্রযুক্তিগত সরঞ্জামাদি ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ সুনিশ্চিত করা, আইসিটি খাতের উন্নয়ন, আইসিটি | সরঞ্জামাদির প্রমিত মান Standard Specification (SS) অনুসরণ করে সংগ্রহ ও ক্রয় পরিকল্পনা প্রণয়ন, ইত্যাদি কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য একটি আইসিটি ও টেক কোর গঠনের সুপারিশ করা হলো।
নারী, শিশু ও জেন্ডার সচেতনতা
১। শিশু অধিকার ও শিশুদের সার্বিক সুরক্ষা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে শিশু আইন, ২০১৩ এর বিধানসমূহ পূর্ণাঙ্গ ও যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে।
২। বিভিন্ন পর্যায়ে যে হট লাইন নম্বরগুলো আছে সেগুলোর তৎপরতা ও কার্যক্রমের পরিধি বৃদ্ধি করতে হবে। মহিলাকেন্দ্রিক সেবামূলক কর্মকাণ্ড যেমন: Victim Support Centre Women Support and Investigation Division Police Cyber Support for women ৬৪ জেলায় স্থাপন করতে হবে।
৩। পুলিশের মধ্যে জেন্ডার ও চিলড্রেন সেনসিটিভিটি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ধারাবাহিকভাবে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু রাখতে হবে এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে। বিবেচ্য ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনসমূহে যেসকল বিধিবিধান রয়েছে তা কঠোরভাবে প্রতিপালন করতে হবে।
পুলিশের কল্যাণ ও কর্মপরিবেশ
১। পুলিশের জন্য একটি পরিপূর্ণ মেডিকেল সার্ভিস গঠনের প্রস্তাব করা হচ্ছে।
২। প্রতি জেলা/মেট্রোপলিটন পুলিশে লিগ্যাল অফিসার্স সেল গঠন করে ‘লিগ্যাল এক্সপার্ট’ নিয়োগের বিষয়ে কমিশন সুপারিশ করছে।
৩। পুলিশ সদস্যদের নিয়মিত ডোপ টেস্টের ও সাইকোলজিক্যাল টেস্টের আওতায় আনতে হবে। পুলিশ লাইন্স, থানা পুলিশ ক্যাম্প, ব্যারাকে সর্বত্র স্বাস্থ্যসম্মত ও মানবিক কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
৪। অতিরিক্ত কাজের চাপ কমানোর জন্য তাদের কর্মঘণ্টা সুনির্দিষ্ট রাখতে হবে। ৮ ঘণ্টার অতিরিক্ত ডিউটির ক্ষেত্রে বিশেষ প্রণোদনা চালু করতে হবে।
৫। স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের অংশ হিসেবে পুলিশ সদস্যদের মানসিক চাপ হ্রাসকল্পে তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ও মেলামেশার সুযোগ দিতে হবে।
৬। মাঝে মধ্যে বিনোদনমূলক কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে তাদের মধ্যে কর্মস্পৃহা ও সতেজতা তৈরি করতে হবে।
৭। প্রতিটি থানায় আগত মহিলা (ভিকটিম/আটক) এবং মহিলা পুলিশ সদস্যদের জন্য চেঞ্জিং/ড্রেসিং/ব্রেস্ট ফিডিং কর্নারের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৮। পুলিশ লাইন্স, থানা, ক্যাম্প ইত্যাদি অবস্থানে কনস্টেবল পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের জন্য শতভাগ/পর্যাপ্ত সংখ্যক ডরমিটরি/কোয়ার্টারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৯। ডরমিটরিতে প্রতি নারী-পুরুষের স্বাস্থ্যসম্মত আবাসন সুবিধা (নারী-পুরুষের আলাদা বিশ্রামাগার, শৌচাগার, পৃথক ডাইনিং রুমের ব্যবস্থা) নিশ্চিত করতে হবে।
১০। আউটসোর্সিংয়ের ভিত্তিতে ট্রাফিক পুলিশের জন্য বিশেষত নারী পুলিশ সদস্যদের জন্য মোবাইল টয়লেটের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
১১। কনস্টেবল এবং সমমানের পুলিশ সদস্যদের কাজের ব্যাপকতা, পরিধি ও সময়কাল বিবেচনা করে তাদের জন্য একটি পৃথক ছুটি গ্রহণ এবং ভোগের অনুশাসন/নীতিমালা সরকার বিবেচনা করতে পারেন।
১২। পুলিশ ব্যারাকে অতিরিক্ত কাজের চাপে থাকায় পুলিশ সদস্যদের মানসিক চাপ হ্রাস করার জন্য তাদের বছরে ১ বার ভাতাসহ নির্দিষ্ট মেয়াদের ছুটি ভোগ বাধ্যতামূলক করা উচিত।
নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতি
১। বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগের জন্য বর্তমান প্রচলিত ব্যবস্থাকে গতিশীল এবং কাঠামোগত দক্ষতা বৃদ্ধির স্বার্থে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের আওতায় সহকারী পুলিশ সুপারের নিয়োগ নিম্নোক্তভাবে করা যেতে পারে:
বর্তমানে সহকারী পুলিশ সুপার নিয়োগের ক্ষেত্রে যে ধরনের শারীরিক ও মানসিক যোগ্যতার প্রয়োজন, তা উপেক্ষিত হচ্ছে। এজন্য বর্তমান বিসিএস পরীক্ষায় পুলিশ ক্যাডারে নিয়োগের জন্য আলাদাভাবে শারীরিক যোগ্যতা [(উচ্চতা ও ওজন ইত্যাদি পরিমাপ, ফিজিক্যাল এনডিউরেন্স টেস্ট (PET), মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা ইত্যাদি)] অন্তর্ভুক্ত করে আবেদনের যোগ্যতা নিরূপণ করা যায়। এতে আগ্রহী এবং যোগ্য প্রার্থীরা পুলিশ ক্যাডারে আবেদন করার জন্য সহজে বিবেচিত হতে পারবেন। এক্ষেত্রে The Bangladesh Civil Service (Enforcement: Police) Composition and Cadre Rules, 1980 সহ সংশ্লিষ্ট বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনয়নের সুপারিশ করা হলো।
২। সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) সভায় বাংলাদেশ পুলিশের এজেন্ডা থাকলে আইজিপিকে বোর্ডে উপস্থিত রাখার সুপারিশ করা হলো।
৩। পুলিশ সার্ভিসের পুলিশ সুপার, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পদায়নের জন্য ফিটলিস্ট প্রস্তুত করে নিয়মিত বিরতিতে হালনাগাদ করতে হবে। হালনাগাদকৃত তালিকা থেকে পুলিশ সুপার ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পদায়ন করতে হবে।
৪। বিশেষায়িত পুলিশ যথা (সিআইডি, সাইবার অপরাধ, বায়োমেট্রিক আইডেনটিফিকেশন ফিঙ্গারপ্রিন্ট ইত্যাদি) স্ব-স্ব বিভাগের ভেতরে বা সংশ্লিষ্ট পদে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পদায়ন করতে হবে।
৫। কনস্টেবল থেকে এএসআই এবং এএসআই থেকে এসআই পদোন্নতিতে প্রতি বছর পরীক্ষা দেওয়া ও পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার রীতি বাতিল করে ১ বার উত্তীর্ণ হলে তাকে শারীরিক যোগ্যতাসাপেক্ষে পরবর্তী তিন বছরের জন্য পদোন্নতির যোগ্য হিসেবে বিবেচনার সুপারিশ করা হলো।
৬। বিভাগীয় পদোন্নতির নীতিমালা সংস্কার করে কনস্টেবল/ এসআই নিয়োগ স্তর থেকে একটি ক্যারিয়ার প্ল্যানিং প্রণয়ন করতে হবে। যাতে সদস্যদের মধ্যে পেশাদারিত্ব উন্নয়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য উৎসাহ/উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়।
৭। বর্তমানে থানাসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নারী পুলিশের সংখ্যা শতকরা মাত্র ০৮ শতাংশ যা জনসেবা বৃদ্ধিতে নিতান্ত অপ্রতুল। থানাসহ, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার, সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন এবং অন্যান্য ইউনিট ও অফিসে কাঙ্ক্ষিত নারী পুলিশের সংখ্যা বর্তমানে ১৬ হাজার ৮০১ থেকে বাড়িয়ে কমপক্ষে ২৯ হাজার ২৪৮ করার জন্য সুপারিশ করা হলো।
১৩। নারী পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য বর্তমান অর্গানোগ্রামে পদ সৃষ্টি করতে হবে।
পুলিশের বিশেষায়িত সংস্থা/ইউনিট শক্তিশালীকরণ:
১। পরীক্ষামূলকভাবে আটটি বিভাগীয় মেট্রোপলিটন এলাকায় করোনার (Coroner ) নিয়োগ এবং তাঁর অফিস স্থাপনের সুপারিশ করা হলো।
২। মামলার আলামত চিহ্নিতকরণ, সংগ্রহ, পরিবহন ও সংরক্ষণের পেশাগত জ্ঞানের উন্নয়নের জন্য একটি ফরেনসিক ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (AFIT) প্রতিষ্ঠা করা যায়।
৩। সকল বিভাগীয় শহরে ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবরেটরি স্থাপনের সুপারিশ করা হলো।
৪। প্রতিটি বিভাগে একটি ক্রাইমসিন ইউনিট/ব্যালাস্টিক শাখা গঠন করা যেতে পারে।
৫। প্রতিটি বিভাগে জাল নোট ও অন্যান্য জাল দলিলাদি শনাক্তকরণের জন্য ইউনিট গঠন করা যেতে পারে।
৬. প্রতিটি বিভাগে একটি পদচিহ্ন শাখা, একটি হস্তলিপি শাখা ও একটি ফিঙ্গারপ্রিন্ট শাখা গঠন করা যেতে পারে।
৭. প্রতিটি বিভাগীয় শহরে অটোমেটেড ডিএনএ ল্যাব স্থাপন করার সুপারিশ করা হলো।
জনকেন্দ্রিক ও জনবান্ধব পুলিশিং:
১। টাউন হল সভা- জনগণ ও পুলিশের মধ্যে আস্থা পুনর্গঠন ও পারস্পরিক সম্প্রীতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিয়মিত টাউন হল সভার আয়োজন করা যেতে পারে। স্থানীয় পর্যায়ে সংলাপে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিনিধি থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের নাগরিকের প্রতিনিধিত্ব থাকবে।
২। নাগরিক নিরাপত্তা কমিটি গঠন- আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও উন্নতির জন্য এলাকায় (প্রতি থানা) নাগরিক নিরাপত্তা কমিটি গঠন করা যায়।
৩। নাগরিক সচেতনতা তৈরির জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গঠনমূলক পাঠ/চর্চা অন্তর্ভুক্ত করা যায়। এ লক্ষ্যে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কারিকুলামে পুলিশিং ও আইন সংক্রান্ত বিষয়াদি রাখা জরুরি। যেমন: ‘একদিন পুলিশ হয়ে দেখুন’ এ ধরনের রোল প্লে করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুলিশের কাজকর্ম সম্পর্কে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হবে।
৪। পুলিশের আলাদা পিআর (পাবলিক রিলেশন) স্ট্র্যাটেজি থাকতে হবে, যাতে পুলিশের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগ আরও জোরদার হয়। যেমন- পুলিশের বিভিন্ন হটলাইনের ব্যাপারে মিডিয়ার মাধ্যমে প্রমোশন করা যেতে পারে। বিশেষ করে নারীদের জন্য পুলিশের যেই সেবাগুলো আছে তা আরও প্রচার-প্রচারণার দরকার আছে।
৫। কমিউনিটি পুলিশিং- বর্তমানে প্রচলিত কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী ও সম্প্রসারণ করে এটিকে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সের একটি পদ্ধতি হিসেবে প্রস্তাব করা হলো, যা পুলিশের জবাদিহিতা বৃদ্ধি করবে এবং পুলিশের কাজে জনসম্পৃক্ততা নিশ্চিত করবে।
৬। পুলিশের সেবামূলক ও জনবান্ধব কার্যক্রম:
বর্তমানে চলমান পুলিশের সেবাধর্মী কার্যক্রমের যথেষ্ট উন্নতি প্রয়োজন। আরও আন্তরিক ও নিষ্ঠার সঙ্গে জনবান্ধব পুলিশিং-এর জন্য জোর প্রচেষ্টা ও প্রচার প্রয়োজন। পুলিশকে সেবাধর্মী ও জনবান্ধব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় পুলিশ সদর দপ্তরের কার্যকর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে বহুল প্রচারসহ গতিসঞ্চার করা অপরিহার্য।
৭। পুলিশের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে থানাভিত্তিক মামলা কার্যক্রমের অগ্রগতি সংক্রান্ত তথ্য জনগণের জন্য উন্মুক্ত রাখা উচিত।
৮। জনবান্ধব পুলিশ গঠনে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পদক্ষেপ: বাংলাদেশে বিগত ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বুদ্ধিভিত্তিক সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিভাগের পাশাপাশি পুলিশ বিভাগেও তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির সুপারিশ করা হলো। এই উদ্যোগ একদিকে পুলিশের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক উন্নত করবে, অন্যদিকে আহত ব্যক্তিদের সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে।
বিবিধ পর্যবেক্ষণ:
১। কারাগারের নিরাপত্তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আগামীতে নতুন কারাগার ও পুলিশ লাইন্সের মধ্যবর্তী দূরত্ব যথাসম্ভব কম রাখতে হবে, যাতে একটি সমন্বিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা যায়। এক্ষেত্রে ফৌজদারি বিচার প্রশাসন ও জেল কর্তৃপক্ষের মধ্যে কার্যকর সমন্বয় নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হলো।
২। মাদক অপরাধ দমনে নিয়োজিত সংস্থাসমূহের জন্য একটি সমন্বিত সফটওয়্যার বা ডাটাবেজ তৈরিকরণের সুপারিশ করা হলো।
৩। বাংলাদেশ পুলিশের ক্রিমিনাল ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (CDMS) সফটওয়্যারে মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাগণের প্রবেশাধিকার প্রদান বা বিকল্পে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নিজস্ব (CDMS) তৈরি ও সময় সময় জনগণের প্রবেশাধিকার প্রদানের সুপারিশ করা হলো।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।