৭ বছরে ৩৩৬ দিন সচিবালয়ে অধ্যক্ষ বাবুল মিয়া, অবশেষে
নিজস্ব প্রতিবেদক: ঠিক দুপুর বেলা। বাইরে প্রচন্ড রোদ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের করিডোরে অতিথিদের জন্য রাখা সোফায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন অধ্যক্ষ মো. বাবুল মিয়া। এর আগে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ঘুরে এখানে এসেছেন। হাতে কতগুলো কাগজ বেশ নিখুঁত ভাবে পড়ছিলেন। পরিচয় দিয়ে কথা শুরু। তারপর কথায় কথায় জানালেন সচিবালয়ে তার ৩৩৬ দিনের অভিজ্ঞতা। বলছি বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার বঙ্গবন্ধু সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. বাবুল মিয়ার কথা। গত প্রায় ২৯ বছর ধরে তিনি এই কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। আগে এমপিও ভুক্ত থাকলেও ২০১৮ সালে কলেজটি জাতীয়করণ করা হয়। এর আগে ২০১৬ সালে জাতীয়করণের প্রক্রিয়া শুরু করেন অধ্যক্ষ মো. বাবুল মিয়া।কলেজটি জাতীয়করণ করতেই গত ৭ বছরে তাকে ৩৩৬ দিন সচিবালয় আসতে হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে অর্থ মন্ত্রণালয় সহ অন্যান্য আরও বেশ কয়েকটি অধিদপ্তরে ঘুরছেন অধ্যক্ষ মো. বাবুল মিয়া। শুরুতে বেশ ঝামেলা পোহাতে হলেও এখন আর তেমন ঝামেলা পোহাতে হয় না বললেই চলে। প্রথম দিকে সচিবালয়ে প্রবেশ করতে বেশ বেগ পেতে হতো। সচিবালয়ের ভেতরে কেউ পরিচিত না থাকায় প্রবেশ দ্বারে পুলিশ সদস্যদের ম্যানেজ করে ঢুকতে হতো। তবে এখন তিনি সহজেই সচিবালয়ের ভেতরে ঢুকতে পাশ পেয়ে যান। গত ৭ বছরে সচিবালয়ের বেশ কয়েকজন ভালো কর্মকর্তার সাথে তার পরিচয় হয়েছে, সখ্যতা বেড়েছে। এটিই তার পাশ পাওয়ার মূলমন্ত্র।
অধ্যক্ষ মো. বাবুল মিয়া জানান, ২০১৮ সালে জাতীয়করণের পর সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বেতন ও ভাতা ছাড় করে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। ফলে বাকি প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করতেই অধ্যক্ষ বাবুল আবার সচিবালয়ে। এর আগে ৩৩৫ দিন সচিবালয়ে আসলেও তার এবারের অনুভূতি একটু ভিন্ন। এতোদিন একটা বিরক্তি ভাব থাকলেও এখন তিনি স্বস্তিবোধ করছেন। দেরিতে হলেও পুরো প্রক্রিয়া এখন সম্পন্ন হতে যাচ্ছে দেখে তিনি বেশ খুশি। আগামী দেড় মাসের মধ্যে তার চাকরির মেয়াদ শেষ হবে। প্রায় ২৯ বছর ধরে তিনি এই কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।গত ৭ বছরের অভিজ্ঞতা ভালো না হলেও এখন তিনি সন্তষ্ট। জানান সরকারের সদিচ্ছা ছিল বলেই হয়তো পুরো প্রক্রিয়া শেষ পর্যন্ত সম্পন্ন হতে যাচ্ছে। না হলে আরও সময় লাগতে পারতো। এ সময় স্মরণ করেন তার স্থানীয় সংসদ সদস্যের কথা। কলেজটি জাতীয়করণ করতে তিনি বেশ সহযোগিতা করেছেন বলে তার প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। জাতীয়করণ প্রক্রিয়া শেষ হতে এতো দীর্ঘ সময় কেন লাগল জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বাবুল বলেন, কর্মকর্তাদের সদিচ্ছার অভাবেই এত সময় লেগেছে।
তার মতে শিক্ষা ক্যাডাররাই এই প্রক্রিয়া দীর্ঘ হওয়ার প্রধান প্রতিবন্ধকতা। করিডোরের সোফায় বসে থাকা অন্যান্য সহকর্মীকে দেখিয়ে অধ্যক্ষ বাবুল বলেন, এখানে যাদের দেখছেন তাদের প্রতেক্যের অভিজ্ঞতা আমার মতোই। তবে পুরোনো দিনগুলো আর মনে করতে চান না তিনি। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন। বলেন দেরিত হলেও এই প্রক্রিয়া আমি শেষ করতে পারলাম। চাকরির মেয়াদ আর বেশিদিন নেই। আর দেড় মাস পরে অবসরে যাব। এরপর বিশ্রামে সময় কাটাব। পরিবারকে সময় দেব।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো মন্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো।