১৪ দলে ভাঙনের সুর
নিজস্ব প্রতিবেদক: ১৪ দলকে পুনর্গঠন এবং সক্রিয় করার জন্য সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। ওই বৈঠকে ১৪ দলের নেতাদের মান অভিমান ভাঙানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগ নেন। গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ১৪ দলের বিভিন্ন নেতারা আবেগঘন কথাবার্তা বলেন, হতাশার কথা বলেন। তাদেরকে কীভাবে অবজ্ঞা, অবহেলা করা হচ্ছে তার ফিরিস্তিও তুলে ধরেন। বিশেষ করে নির্বাচনে ১৪ দলকে উপেক্ষার বিষয়টি সামনে চলে আসে। প্রধানমন্ত্রী অবশ্য ধৈর্য্যের সঙ্গে সবার বক্তব্য শুনেছিলেন। এরপর তিনি ১৪ দলকে সক্রিয় করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এর পরপরই ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর নেতৃত্বে ১৪ দলের নেতৃবৃন্দের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এবং তারা বিভিন্ন বিষয়ে ধীরে ধীরে কর্মসূচি পালনের জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নেন।কিন্তু এরমধ্যেই গতকাল বাজেটের পর ১৪ দলের মধ্যে ভাঙনের সুর লক্ষ্য করা যাচ্ছে।’ ১৪ দলের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি এই বাজেটের তীব্র সমালোচনা করেছেন। রাশেদ খান মেনন এই বাজেটকে জনগণের প্রতিপক্ষ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, এর ফলে দুর্নীতিবাজ, কালো টাকার মালিকরা সুবিধা পাবে, সাধারণ মানুষ কষ্ট পাবে। একই রকম অবস্থান গ্রহণ করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এর সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তিনিও এই বাজেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে সমালোচনা করেছেন। অতীতে কোন সময় আওয়ামী লীগের শরিকরা বাজেট নিয়ে সরাসরি ভিন্নমত পোষণ করেনি। বাজেট নিয়ে তাদের ভিন্ন মত তারা জোটের ফোরামে আলোচনা করেছেন এবং সেই অনুযায়ী আওয়ামী লীগকে পরামর্শ দিয়েছেন।কিন্তু এবার সম্পূর্ণ চিত্রটা ভিন্ন। বাজেটের পরপরই রাশেদ খান মেনন এবং হাসানুল হক ইনু মুখ খুলেছেন। তারা সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন। এই প্রেক্ষিতেই রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন উঠেছে যে, তাহলে কী ১৪ দল ভেঙে যাচ্ছে? একটি জোটের মধ্যে শরিকরা সরাসরি কী সরকারের অবস্থান বা প্রধান দলের অবস্থানের সমালোচনা করতে পারে’? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজেট নিয়ে সমালোচনার সঙ্গে ১৪ দলের ভাঙনের কোন সম্পর্ক নেই। এটি সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ঘটনা। প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের নিজস্ব অর্থনৈতিক কৌশল এবং নীতি রয়েছে। ওয়ার্কার্স পার্টির একটি অর্থনৈতিক অবস্থান আছে। তারা তাদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মনে করছে, বাজেট সঠিক হয়নি।
অন্যদিকে জাসদও বাজেটকে ইতিবাচকভাবে দেখছে না। সেটা প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। কিন্তু ১৪ দলীয় জোট একটি আদর্শিক জোট। এই জোটের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, গণতন্ত্র এবং স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন সম্পৃক্ত রয়েছে। কাজেই আদর্শিক জোট সামান্য ভুল বোঝাবুঝি থেকে ভেঙে যাবে এমনটি মনে করেন না কোন রাজনৈতিক বিশ্লেষকই। তবে এখন যেহেতু জাসদ, সাম্যবাদী দল বা ওয়ার্কার্স পার্টি সরকারে নেই, কাজেই তাদের স্বাধীন অবস্থান রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো ১৪ দলের শরিক সবাই নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়ী হয়েছেন এবং সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যারা যে দলের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হবেন সেই দলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারবেন না, অবস্থান গ্রহণ করতে পারবেন না।সেটা করলে তাহলে তা ‘ফ্লোর ক্রসিং’ হিসেবে বিবেচিত হবে। কাজেই ১৪ দলের শরিকরা যদি শেষ পর্যন্ত জাতীয় সংসদে বাজেটের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে সেখানে একটি অন্যরকম পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তবে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল স্বাধীন সত্তা। যে কোন বিষয়ে তাদের মতামত দেওয়ার অধিকার রয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত জাতীয় সংসদে তারা বাজেটের পক্ষেই অবস্থান নিবে বলে আওয়ামী লীগের নেতারা আশা প্রকাশ করেছেন।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো মন্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো।