স্বাস্থ্য বিভাগকে ‘ভারপ্রাপ্ত’ মুক্ত চাই সিরাজগঞ্জবাসী
নিজস্ব প্রতিবেদক: সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ের দায়িত্বে আছেন এডহক থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত এক নন ক্যাডার মেডিকেল অফিসার। এই মেডিকেল অফিসার ২০১১ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত হলেও তাদের চাকুরী ২০২৩সালে নিয়মিতকরণ করা হয়। নিয়মিতকরণের পূর্বেই ২০১৯ সালে তৎকালীন সাংসদ এর জোড়ালো লবিংয়ে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পদে ‘‘ভারপ্রাপ্ত’’ হিসেবে যোগদান করে। ভারপ্রাপ্ত হিসেবে যোগদান করার পর থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে চলে নানা রকম দূর্নীতি।
নবনিযুক্ত বিসিএস কর্মকর্তারা যোগদানের পরে দেখতে পান উপজেলা স্বাস্থ্য কার্যালয় পরিচালনা হয় মেডিকেল অফিসার দিয়ে, তখন নবনিযুক্ত বিসিএস কর্মকর্তা অন্যত্র বদলী নিয়ে চলে যেতে দেখা গেছে। অপরদিকে এডহক থেকে নিয়োগপ্রাপ্তদের নেই কোন ফাউন্ডেশন ট্রেনিং। ফাউন্ডেশন ট্রেনিং না থাকায় স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জনসাধারন। প্রশাসনিক কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে বিশৃঙ্খলা। আজ সাড়ে ৪ বছরের অধিক সময়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিয়ে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ পরিচালনা হওয়ায় স্বাস্থ্যকর্মীর মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা। প্রায় ৫ বছরের মত সময় ধরে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব থাকায় সরকারের ভাবমূতি ক্ষুণœ হচ্ছে বলে সিরাজগঞ্জবাসী মনে করছে।
সিরাজগঞ্জবাসী মনে করছে, এতদিন কেন ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চালানো হচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগকে। জনগণের মনে দেখা দিয়েছে নানা কৌতুহল। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার স্বাস্থ্য বিভাগকে ভারপ্রাপ্ত মুক্ত করার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সিরাজগঞ্জবাসী। তথ্যানুন্ধানে জানা যায়, সিরাজগঞ্জ স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে ৩১ডিসেম্বর ২০১৯ইং তারিখ থেকে দায়িত্ব পালন করছেন নন বিসিএস, ২০১০ সালে এডহক থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার ডা: জাহিদুল ইসলাম। তবে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে মেডিকেল অফিসার ডা: জাহিদুল ইসলাম মান সম্মান এর ভয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও অফিসের লেমপ্লেটে, অফিসের চিঠি আদান প্রদান সহ সকল কাগজপত্রে তার নামের পদবীতে ভারপ্রাপ্ত শব্দটি উল্লেখ করেন না।
তবে তিনি এখনো মেডিকেল অফিসার পদটি ব্যবহার করে বেতন ভাতা উত্তোলন কর আসছেন। ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করলে আইনে ভারপ্রাপ্ত লিখতে বাধ্য হলেও, আইনকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে চলছেন এই মেডিকেল অফিসার। ২০২০ সাল থেকেই নবনিযুক্ত বিসিএস কর্মকর্তারা যোগদানের পরে দেখতে পান উপজেলা স্বাস্থ্য কার্যালয় পরিচালনা হয় মেডিকেল অফিসার দিয়ে, তখন নবনিযুক্ত বিসিএস কর্মকর্তা অন্যত্র বদলী নিয়ে চলে যেতে দেখা গেছে। এছাড়াও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ৩৫% অলিখিত ট্যাক্স না দিয়ে যেকোন সম্মানি ভাতা হাতে পায় না বা উত্তোলন করতে পারে না স্বাস্থ্যকর্মীরা।
স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতন-ভাতা পাওয়ার পরেও সরকারি বিভিন্ন কাজের জন্য সম্মানি ভাতা পেয়ে থাকে। সম্মানি ভাতা উত্তোলন করতে হিসাবরক্ষন কর্মকর্তাকে ১০%, কাজের অডিট ১০%, অফিস খরচ ১০% এবং কর্মকর্তার সম্মানি ৫% কর্তন করে স্বাস্থ্যকর্মীদের হাতে পৌছে সম্মানি ভাতার টাকা। এমন কি একবার করোনা টিকা প্রদান করার সময় সম্মানি ভাতা ব্র্যাকের কর্মকর্তারা স্বাস্থ্যকর্মীদের হাতে পৌছে দেওয়ার পরেও পুনরায় স্বাস্থ্যকর্মীদের নিকট থেকে সম্মানি ভাতা ফেরত নিতে দেখা গেছে। ঘটনাটি বিল ভাতা উত্তোলন ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্মানি ভাতা পৌছে দেওয়ার সময় সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দায়িত্বে নন ক্যাডার মেডিকেল অফিসার ডা: জাহিদুল ইসলাম ঘটিয়ে থাকেন।
তথ্যানুসন্ধানে আরোও জানা যায়, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছর থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত সদর উপজেলার ৪৭টি কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রতি বছর পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বিল ২লাখ ৮২ হাজার, কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার আপ্যায়ন বিল ৪৭ হাজার, পরিবহন বিল ১লাখ ৪১ হাজার, স্টেশনারী বিল ৯৪ হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়ে থাকে। মোট বিলের সরকারি ভ্যাট ব্যতিত মোট বিলের ৫লাখ ৬৪ হাজার টাকার উপর ২লাখ টাকা নিজের পকেটে তোলেন সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দায়িত্বে নন ক্যাডার মেডিকেল অফিসার ডা: জাহিদুল ইসলাম। এছাড়া করোনা টিকা প্রদানের বিল, জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন, জাতীয় কৃমিনসপ্তাহ, মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ সহ সকল সম্মানির ভাতার বিলে ৩৫% কর্তন করে প্রদান এই কর্মকর্তা।
এছাড়াও ডা: জাহিদুল ইসলাম এর যোগদানের পর থেকে ৪ মাস পরপর পিকনিক, বিদায় অনুষ্ঠান, পিটুলী ভোজ, ইফতারি, ফল উৎসব এর নামে উপজেলার সকল কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার, স্বাস্থ্য সহকারি, স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও অফিস কর্মচারীদের কাছে জনপ্রতি নির্দিষ্ট টাকার পরিমাণ বসিয়ে চাঁদা আদায় করে। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাকে কর্মক্ষেত্রে ভুলত্রুটি, ক্লিনিকের আগমন-প্রস্থান এর ৫-১০ মিনিট কমবেশি হলে বিভিন্ন ধরনের চিঠি দিয়ে বরখাস্তের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে থাকে। এখানে তিনি ক্ষ্যান্ত নন, চাঁদা ও বিলের কর্তনের বিষয়ে কেউ মুখ খুললে তাকে বরখাস্ত করা হবে মর্মে বিভিন্ন সময়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে থাকে। এছাড়াও পিকনিক, বিদায় অনুষ্ঠান, পিটুলী ভোজ, ইফতারি, ফল উৎসবে চাঁদা প্রদান করার পরেও তার অসৌজন্যমূলক আচারণ, অসুলভমূলক কথাবার্তা না শোনার জন্য অনুষ্ঠানে আসতে চাই না।
কিন্তু ক্ষমতার দাপট দেখানোর জন্য তার অসৌজন্যমূলক আচারণ, অসুলভমূলক কথাবার্তা শোনার জন্যই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বরখাস্তের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে অনুষ্ঠানে আসতে বাধ্য করেন। যদি কোন ব্যক্তি না আসে তবে তাকে কৈফিয়ত তলব করে থাকেন। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ৪৭টি কমিউনিটি ক্লিনিকে ২০২৩ নভেম্বর ২দিন ও ২০২৪ সালে মার্চ মাসে পুষ্টি বিষয়ে ২দিন ব্যাপী মা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার বরাদ্দ প্রদান হয়।
২০২৩ নভেম্বর ২দিনব্যাপী মা সমাবেশের ১০লাখ ৯৭হাজার ১’শ টাকার আত্মসাত ও চলতি বছরে ফেব্রুয়ারী মাসের শেষের দিক থেকে মার্চের ১০ তারিখের মধ্য মা সমাবেশ অনুষ্ঠিত না করে ১৪মার্চ ২০২৪ইং তারিখে ১০লাখ ৯৭হাজার ১’শ টাকা বরাদ্দের বিল ভাউচার স্বাক্ষর করে সিরাজগঞ্জ জেলা হিসারক্ষন কর্মকর্তা বরাবর জমা প্রদান করেন সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিবার কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা: জাহিদুল ইসলাম। ইতিমধ্য ১ম দফায় ২০২৩ নভেম্বর ২দিনব্যাপী মা সমাবেশের ১০লাখ ৯৭হাজার ১’শ টাকা ও ২য় দফায় ১০লাখ ৯৭হাজার ১০০টাকা আত্মসাত করেছেন বলে স্বাস্থ্যকর্মীরা অভিযোগ করেন।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো মন্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো।