সংবাদের আলো ডেস্কঃসাভারের আশুলিয়ায় একটি এনজিওর বকেয়া কিস্তির টাকা পরিশোধ না করার মামলায় দুই শিশুসহ তাদের মাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) রাতে ওই নারীকে দুই সন্তানসহ থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।আজ বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত ওই নারীকে ঢাকার মুখ্য বিচারিক আদালতে পাঠানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) রাতভর আশুলিয়া থানা হেফাজতে শীতের মধ্যে দুই শিশুসহ ওই নারীকে আটক রাখার ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনা হয়। গ্রেপ্তারকৃত নারী মনির হোসেনের স্ত্রী। তাদের আড়াই বছরের এবং ১৪ মাস বয়সের দুই শিশুসন্তান রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় ১ বছর আগে গ্রেপ্তারকৃত নারীর স্বামী মনির হোসেন একটি এনজিওর পল্লীবিদ্যুৎ শাখা থেকে ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা ঋণ নেন। পরবর্তীতে ঋণের ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা পরিশোধ করলেও প্রায় ১ লাখ টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হন মনির।এ ঘটনায় এনজিও কর্তৃপক্ষ ঋণগ্রহীতা মনির হোসেনের স্ত্রীকে আসামি করে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করে। ওই মামলায় পুলিশ গতকাল মঙ্গলবার রাতে তাকে দুই সন্তানসহ থানায় নিয়ে আসে। গভীর রাত পর্যন্ত থানার ভেতর একটি কক্ষে তাদের আটকে রাখা হয়। শীতে এবং ভয়ে ওই দুই শিশু কান্না করছিল।পুলিশ হেফাজতে থাকা ওই নারী বলেন, ‘আমি জানি না, কেন তারা আমাকে গ্রেপ্তার করেছে। শুধু শুনেছি, আমার স্বামী নাকি কিস্তি দিতে পারে নাই। তাই তারা আমার নামে মামলা দিয়েছে। অথচ আমি কোনো এনজিও থেকে টাকা তুলিনি। তারা আমার স্বামীকে কিছু না বলে আমাকে ধরে এনেছে। গ্রেপ্তারকৃত নারীর স্বামী ঋণগ্রহীতা মনির হোসেন বলেন, ‘ছোট ব্যবসা করতাম, লোকসানের মুখে পড়ায় কিস্তি দিতে কিছুটা দেরি হচ্ছে। ঋণ নিয়েছি আমি, আমাকে গ্রেপ্তার না করে তারা আমার স্ত্রী-সন্তানকে থানায় নিয়ে আসছে।’গ্রেপ্তার অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া আশুলিয়া থানার এসআই নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ওই নারীর নামে আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় তাকে আটক করা হয়েছে। সঙ্গে তার দুই শিশুসন্তানও রয়েছে। তারা বুকের দুধ পান করে তাই রেখে আসতে পারিনি।’ এদিকে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকে সুশীল সমাজসহ পুলিশ সদস্যরাও বিষয়টি সম্পর্কে সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আশুলিয়া থানার এক এসআই বলেন, ‘ছোট ছোট বাচ্চা দুটোকে নিয়ে আসা ঠিক হয়নি। সারা রাত শীতে কষ্ট করেছে, কান্নাকাটি করেছে। হয় তাকে আদালতে জামিন হতে বলে চলে আসা, না হয় বাচ্চা দুটিকে কোনো আত্মীয়ের কাছে রেখে আসা উচিত ছিল। এখন যে কেউ বাচ্চা দুটিকে দেখলে পুলিশের বিরুদ্ধে খারাপ ধারণা সৃষ্টি হবে।’ বিষয়টি নিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক কমিটির ঢাকা বিভাগের সমন্বয়কারী জিল্লুর রহমান বলেন, ‘এই শীতে বাচ্চা দুটিকে থানায় রাখা অমানবিক। পুলিশ ইচ্ছে করলে বাচ্চা দুটিকে আরো ভালো সুরক্ষা দিতে পারত। কারণ ওসির অনেক দায়িত্ব ছিল। ওই নারী তো আর হত্যা কিংবা বড় কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত নন।’
সূত্রঃ কালের কণ্ঠ
সংবাদটি শেয়ার করুন।
Copyright © 2024 সংবাদের আলো. All rights reserved.