প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ২১, ২০২৪, ৮:৩৭ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুলাই ১, ২০২৪, ৭:১৯ অপরাহ্ণ
সিরাজগঞ্জে বিচারকের নাম ভাঙিয়ে চা দোকানীর ভয়াবহ প্রতারণা
নজরুল ইসলাম: সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরের চৌকি আদালতের বিচারকের নাম ভাঙিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন রফিক নামের একজন চা বিক্রেতা। নিঃস্ব হচ্ছেন বিচারপ্রার্থীরা৷ জানা যায়, কোর্ট চত্বরে অবস্থিত আদালতের সামনেই ভ্রাম্যমান চা বিক্রী করে আসছেন রফিক নামের এক যুবক। চায়ের পাশাপাশি খাবারও বিক্রি করে থাকেন। নিয়মিত বিচারকদের খাবার সরবরাহের পাশাপাশি তাদের বিভিন্ন কাজ করার বিষয়কে পুঁজি করে রফিক তাদের নাম ভাঙিয়ে বিচার প্রার্থীদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
সোমবার (১লা জুলাই) উপজেলার বেলতৈল গ্রামের প্রতিবন্ধী বৃদ্ধ সুশীল কুমার ঘোষ (৭৯) প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করে বলেন, জমি সংক্রান্ত তার একটি মামলা ছিল। প্রায় ১ বছর আগে তার মামলাটি খারিজ করে দেন আদালত। আদালত থেকে অন্যান্য কাগজপত্রাদী নেওয়ার বিষয়ে রফিকের নজরে পরে। তখন থেকে রফিক যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মামুন অর রশিদ এর মাধ্যমে মামলার রায় তার অনুকূলে দেয়ার আশ্বাস দেন। এদিকে সুশীল কুমারের বিশ্বাস অর্জনের জন্য কোন এক ব্যক্তিকে শাহজাদপুর যুগ্ম ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মামুন অর রশিদ সাজিয়ে মুঠোফোনে কথা বলিয় দেন।
তারপর থেকে প্রতিনিয়ত মামলার খরচ ও কাগজপত্র সংগ্রহের নাম করে বৃদ্ধ সুশীল কুমারের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ নিয়ে থাকেন রফিক। বিভিন্ন কৌশল খাটিয়ে প্রায় দেড় লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর বৃদ্ধ সুশীল কুমার প্রতারনার বিষয় বুঝতে পারেন। এরই মধ্যে রফিকের প্রতারণার ফাঁদে জড়িয়ে জায়গা সংক্রান্ত ঝামেলাগুলো তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় ও অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়। প্রতিপক্ষের লোকজন তার জায়গা জমি দখল করে নেয় এবং বেশ কয়েকটি গাছও কেটে নেয়। পরে তিনি প্রতারক রফিকের কাছে মামলার কাগজপত্র ফেরত চাইলে সে নানারকম টালবাহানা করতে থাকে।
চায়ের দোকানের পাশের বিআরডিবি'র চেয়ারম্যান লূৎফর রহমানের কাছে এ বিষযে জানালে রফিক কাগজপত্র বাবদ আবারও ১৫ হাজার টাকা দাবি করলে লূৎফর রহমানের মাধ্যমে তাকে সে টাকা দেওয়া হয়। এই বিষয়ে বিআরডিবি'র চেয়ারম্যান লূৎফর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি চেষ্টা করেছি রফিকের কাছ থেকে টাকা ও কাগজপত্র তুলে দেওয়ার জন্য। সে আমার মাধ্যমেও খরচের টাকা নিয়েছে কিন্তু আজ পর্যন্ত ফেরত দেয়নি। এই বিষয়ে শাহজাদপুর আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এড. শেখ আব্দুল হামিদ লাভলু বলেন, একজন চা দোকানদার হয়ে বিচারপ্রার্থীদের সাথে প্রতারণা এটি ঘৃনিত কাজ।
এছাড়া তার এই প্রতারণার কারণে অনেক মানুষ আদালতের সাহায্য ও বিচারপ্রার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে। এই বিষয়ে অভিযুক্ত চায়ের দোকানদার রফিকের বক্তব্য জানতে তার দোকানে গেলে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে সে পালিয়ে যায়। পরে তার স্ত্রীর কাছে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি ১০ হাজার টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করেন। এদিকে চা দোকানির প্রতারণার ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়লে আদালত চত্বরে চাঞ্চল্যেকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এসময় উকিল, মহুরী ও বিচারপ্রার্থীরা প্রতারক রফিকের শাস্তি দাবি করেন।
সংবাদটি শেয়ার করুন।
Copyright © 2024 সংবাদের আলো. All rights reserved.