সিরাজগঞ্জে জবর দখল করে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসলেন শিক্ষক
উজ্জ্বল অধিকারী, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের সায়দাবাদে যমুনা ডিগ্রি কলেজে নিয়ম নীতির তক্তা না করে জবর দখল করে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসেছেন এই স্কুলের এক শিক্ষক । অভিযোগ উঠেছে গত ১২ই আগস্ট কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাকির হোসেন থাকা অবস্থাতেই তাকে সরিয়ে জোর করে প্রধান অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন এই কলেজের হিসাববিজ্ঞানের শিক্ষক আব্দুস সামাদ শেখ । গভর্নিং বডির অজান্তে জোর করে চেয়ারে বসেই ভারপ্রাপ্ত অদ্যক্ষ জাকির হোসেনকে এ বিষয়টি নিয়ে বেশি না বোঝার হুমকিও দেন। কলেজের এমন অরজগতার কারণে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। বিষয়টি নিয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাকির হোসেন বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেওয়ায় তাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকি দিয়ে আসছেন শিক্ষক আব্দুস সামাদ শেখ । এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, শিক্ষক আব্দুস সামাদ শেখ কিভাবে এই চেয়ারে বসলেন তার কোন সদ উত্তর দিতে পারেননি। তিনি বলেন বিষয়টি দেখা হচ্ছে।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ১০ অক্টোবর এই কলেজের অধ্যক্ষ অবসরে যান। এরপর থেকেই কলেজের প্রধান শিক্ষক পদটি শূন্য রয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী প্রধান অদ্যক্ষের শূন্য পদে সহকারী অধ্যক্ষ জাকির হোসেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিবেন । যতদিন পর্যন্ত অধ্যক্ষের পথটি শূন্য থাকবে ততদিন পর্যন্ত সহকারী অধ্যক্ষ ভারপ্রাপ্তভাবে অধ্যক্ষের কাজ করে যাবেন।
এরপর কলেজ কর্তৃপক্ষ পরপর চারবার নিয়োগ আহবান করলেও প্রধান অধ্যক্ষ পদে কোন নিয়োগ দিতে পারেনি। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাকির হোসেন নিজে এই পদে প্রার্থী হয়। যেহেতু তিনি নিজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে রয়েছেন এবং প্রধান অধ্যক্ষের শূন্য পদে নিয়োগ প্রার্থী হয়েছেন সেহেতু নিয়ম অনুসারে তাকে ভারপ্রাপ্ত অদ্যক্ষের পথ ছেড়ে দিতে হয়। এ সময় গভর্নিং বডির সদস্যরা নতুন করে রেজুলেশন করে এই কলেজের হিসাব বিজ্ঞানের শিক্ষক আব্দুস সামাদ শেখকে ২০২৪ সালের জানুযারীতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেয়।
কিন্তু দেখা যায় দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নিয়োগ পরীক্ষার ব্যাপারে তার অনীহা প্রকাশ পায়। এ সময় তিনি নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে আর আগায় না। অন্যদিকে কলেজের আর্থিক বিষয়ে তার অসঙ্গতি দেখা যায়। এছাড়াও তিনি দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে কলেজে বহিরাগতদের যাতায়াত বেশি হয়। কলেজের ভাবমূর্তি নষ্ট ও নিয়োগ না দেবার কারণে গভারনিং বোর্ড পরবর্তীতে ৫ মে ২০২৪ তারিখে রেজুলেশন করে তাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থেকে অব্যাহতি দেয় এবং পুনরায় হিসাববিজ্ঞান শিক্ষক পদে তাকে বহাল রাখেন এবং জাকির হোসেন কে পুনরায় নিয়ম অনুসারে ভারপ্রাপ্ত অদ্যক্ষের পদে দায়িত্ব দেন।
পরে গত ১২ আগস্ট সকালে হিসাব বিজ্ঞানের শিক্ষক আব্দুস সামাদ শেখ লোকজন নিয়ে কলেজে প্রবেশ করেন। এ সময় তিনি জোর করে ভারপ্রাপ্ত অদ্যক্ষ জাকির হোসেন কে বেড় করে দিয়ে অধ্যক্ষের চেয়ার দখল করেন। এরপর থেকেই জাকির হোসেনকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিয়ে আসছেন এই শিক্ষক।
এ বিষয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাকির হোসেন বলেন, হঠাৎ করেই কয়েকজন শিক্ষক ও বৈহিরাগত লোকজন নিয়ে শিক্ষক আব্দুস সামাদ শেখ কলেজে আসেন। এসে আমাকে সরিয়ে দিয়ে নিজেকে প্রধান অদ্যক্ষ বলে দাবি করেন। আমি এর প্রতিবাদ করায় আমাকে হুমকি দেন তিনি। আমি নিরুপায় হয়ে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছে।
কলেজের গভর্নিং বোর্ডের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, সরকারী নিয়ম-নীতির বাইরে গিয়ে গভর্নিং বোর্ডের সকলের অজান্তে জোর করে শিক্ষক আব্দুস সামাদ শেখ অদ্যক্ষের চেয়ারে বসেছেন। এটা কোন মতেই কাম্য নয়। এতে কলেজের যেমন এক ধরনের অরজগতা চলছে ঠিক তেমনভাবেই শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক আব্দুস সামাদ শেখ বলেন, এর আগে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন তিনি, এখন এলাকার লোকজনের চাওয়াতে আমি এই দায়িত্ব নিয়েছি। আমার আর তিন থেকে চার মাস চাকরির বয়স আছে। তাই শেষ বয়সে এলাকার লোকজন ও শিক্ষকেরা আমাকে এই সম্মান দিয়েছে।
এবিষয়ে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মনোয়ার হোসেন বলেন, বিষয়টি অবগত হওয়ার পর অভিযুক্ত শিক্ষক আব্দুস সামাদ শেখকে ডাকা হয়েছিল। তিনি কিভাবে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসলেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দিতে পারিনি। বৈধ কাগজপত্র ছাড়া কোন শিক্ষক এই চেয়ারে বসতে পারবেন না। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো মন্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো।