সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ৫ বছর ক্লাস না নিয়েও বেতন তুলছেন মাদ্রাসা শিক্ষক রেজাউল করিম বাচ্চু
উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় এক মাদ্রাসা শিক্ষক ৫ বছর ধরে কোন ক্লাস না নিয়েই নিয়মিত উত্তোলন করছেন বেতন। উপজেলার উধুনিয়া দাখিল মাদ্রাসার জুনিয়র শিক্ষক ও উধুনিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বাচ্চু। তিনি আওয়ামী লীগের ক্ষমতা প্রভাব খাটিয়ে ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর বিনা ভোটে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এর আগে ২০১৯ সালে উধুনিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ার পর থেকেই ক্লাসে অনিয়মিত , চেয়ারম্যান হওয়ার পর মাদ্রাসার বেতন এবং চেয়ারম্যানের সম্মানি ভাতা নিয়মিত উত্তোলন করছেন।
এমন অভিযোগ উঠলে তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে ভাতা নিচ্ছেন না কিন্তু মাদ্রাসার শিক্ষক হিসেবে বেতন তুলছেন যথা সময়ে৷ মাদ্রাসার বেতন নিচ্ছেন ক্লাস না করিয়েই, এটা নিয়ে সমালোচনা এবং অভিযোগ থাকলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি তার বিরুদ্ধে। তার এমন কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে মাদ্রাসা সুপার ভয়ে কিছুই বলতে পারছে না, সংশ্লিষ্ট কাউকেই অবগত করতে সাহস পাননি মাদ্রাসা সুপার। মাদ্রাসায় না গিয়েও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে তুলছেন বেতন। ইতিপূর্বে উপজেলা প্রশাসনের কাছে একাধিকবার এই ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ক্লাস না করিয়েই বেতন উত্তোলন করছে এমন অভিযোগ উঠলেও অদৃশ্য কারণে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা পতনের পরেও উধুনিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান কিভাবে ক্লাস না করিয়েই বেতন উত্তোলন করছেন জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। এই ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিএনপির নেতাকর্মীদের পুলিশ দিয়ে হয়রানি, সহ বিভিন্ন ভবে হয়রানি করত। উধুনিয়া এই ইউপি চেয়ারম্যান উধুনিয়া মানিকজান উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি থাকাকালীন সময়ে ৪ টি পদে নিয়োগ দিয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে এই ৪ টি পদের জন্য মোট ৪০ লক্ষ টাকা ঘুষ বাণিজ্য করেছেন। এটি নিয়ে বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উধুনিয়া ইউনিয়নের শিক্ষার্থী আব্দুল মালেক শান্ত জানান এই চেয়ারম্যান সভাপতি থাকাকালীন নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, এছাড়াও স্কুলের শিক্ষার্থীদের বেতন ১৫০ টাকা করে নিয়েছে, পরীক্ষা ফি নিয়েছে অতিরিক্ত এই টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উধুনিয়া ইউনিয়ন বিএনপির এক নেতা জানান ইউপি চেয়ারম্যান বাচ্চু ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ, রাস্তা না করেই টাকা উত্তোলন,ভাতা ভোগীদের টাকা আত্মসাৎ সহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে কিন্তু আওয়ামী লীগের সময়ে কেউ মূখ খুলতে পারেননি। তার ভাই ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হওয়ায় এখনো সে দাপটের সাথেই দূর্নীতি করে যাচ্ছে। তার বিরুদ্ধে দুদক জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদের অনুসন্ধান করলেই বেরিয়ে আসবে তার দূর্নীতির হিসাব। অভিযোগের বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বাচ্চু জানান সে সমাজিক কাজ করতে পারবে, ক্লান না নিয়ে। ইউপি চেয়ারম্যানের ভাতা নিচ্ছেন না তিনি জানান।
তিনি আরো বলেন তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা। উধুনিয়া দাখিল মাদ্রাসা সুপার ওসমান গণী জানান মাদ্রাসা শিক্ষক রেজাউল করিম বাচ্চু চেয়ারম্যান ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ক্লাস না করেই বেতন উত্তোলন করছেন। ২০১৯ সালে উধুনিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ার পর থেকেই তিনি ক্লাস করেন না, এরপর ২০২১ সালে চেয়ারম্যান হয়েছেন। হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে তুলছেন বেতন। ক্লাস না করে কিভাবে বেতন উত্তোলন করছেন এমন প্রশ্ন মাদ্রাসা সুপার কে বললে তিনি আরো জানান সপ্তাহের কোন এক সময় চেয়ারম্যান মাদ্রাসায় এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন এতে তিনি হাজিরা খাতায় উপস্থিত দেখিয়ে বেতন নিচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করতে পারেননি।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শামসুল হক জানান আওয়ামী লীগের সময় তার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ দেয়নি, এখন আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবো। উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সালেহ্ মোহাম্মদ হাসনাত জানান ক্লাস না করে বেতন উত্তোলনের সুযোগ নেই, তার বিরুদ্ধে তদন্ত করার কথা বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো মন্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো।