আসাদুর রহমান, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জ শহীদ এম. মনসুর আলী অডিটোরিয়ামে শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭.০০টায় 'নদী'র (একটি সাংস্কৃতিক বিকাশ কেন্দ্র) আয়োজনে 'সুস্থ ধারার সংস্কৃতি বিকাশে’ গীতিকবি হাসান আনোয়ারের গান নিয়ে আলোচনা ও সংগীতানুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ শাহ্ আজম।
অনুষ্ঠানে উপাচার্য মহোদয় বলেন, সংস্কৃতি মানুষের জীবন-বিকাশ, রাজনৈতিক চরিত্র নির্মাণ ও ব্যক্তিত্বের বিকাশের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে। সংস্কৃতির উপজীব্য বিষয়গুলোর মধ্যে সংগীত অন্যতম। সংগীত জনচিত্তকে আলোড়িত করার শক্তি ধারণ করে। কবিগুরু বলেছেন, “গানে যখন কথা আছে তখন কিন্তু কথার উপজীব্য না বাড়ানোই ভালো এবং যেখানে কথা শেষ সেখানেই সংগীতের শুরু”। তিনি বলেন, সংগীত ও কবিতা একটি ছবির মতো। এক্ষেত্রে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘জাপান যাত্রী’ গ্রন্থে বলেছেন, “ছবি হচ্ছে সীমা আর গান হচ্ছে অসীম। অসীম যেখানে সীমার মধ্যে ধরা দেয় সেটি হচ্ছে ছবি। আর সীমা যেখানে সীমাহীনতায় বিলীন হতে চায়, সেখানে গান।
ভাষার দুটি দিক থাকে, একটি ভাষার অর্থবোধক দিক আরেকটি সুরের দিক। এভাবেই সংগীত হয়ে ওঠে পৃথক ভাষা তথা যোগাযোগের মাধ্যম। গান সময়ের পরম্পরায় এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের মধ্যে সেতু বন্ধন রচনা করে।” কবি জীবনানন্দ দাস তাঁর 'কবিতার কথা' গ্রন্থে বলেছেন, “কবির পক্ষে সমাজকে বোঝা দরকার। কবিতার অস্থির ভিতরে থাকবে ইতিহাসচেতনা ও মর্মে থাকবে পরিচ্ছন্ন কালজ্ঞান।” একজন গীতিকারের ক্ষেত্রেও উক্ত মন্তব্য প্রযোজ্য।
উপাচার্য় মহোদয় আরও বলেন, আমাদের দেশে যে সংগীত ও সাহিত্যচর্চা হয় সেখানে আমরা দেখেছি ভাষার প্রয়োগে কতোটা উদাসীনতা, অবহেলা ও অযত্ন। আমরা শুধু লেখায় কিংবা কথ্যভাষায় ভাষার অপব্যবহার নিয়ে কথা বলি কিন্তু যে সংস্কৃতি আমাদের বাংলার চাষা, কামার, কুমোর ও মজুরকে একত্রিত করেছে এবং হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানকে অসাম্প্রদায়িকতার শিক্ষা দিয়েছে এবং যেটি ছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং যেই মর্ম বাণীটি মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষকে যুদ্ধে নামিয়েছিলেন সেই সংস্কৃতি এখন হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে যখন সরকারি আনুকূল্য ও পৃষ্ঠপোষণা দেয়া হচ্ছে, সেই সময়ে ভাষা ব্যবহারে আমাদের গুরুচণ্ডালী দোষ ও শব্দের অপপ্রয়োগ গানের ক্ষেত্রেও কিন্তু ভয়ংকর হুমকি তৈরি করছে।
সুতরাং এই হুমকি কাটিয়ে উঠে আমাদেরকে সুস্থ-সংস্কৃতির চর্চা করতে হবে। উপাচার্য মহোদয়, সুস্থ ধারার সংস্কৃতি বিকাশে গীতিকবি হাসান আনোয়ারের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান এবং তাকে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন।
নদী'র উপদেষ্টা নবী নেওয়াজ খান বিনুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও সাবেক ক্যাবিনেট সচিব জনাব কবির বিন আনোয়ার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি ড. জান্নাত আরা তালুকদার হেনরী।
সংবাদটি শেয়ার করুন।
Copyright © 2024 সংবাদের আলো. All rights reserved.