প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ২৮, ২০২৪, ১:৪৯ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ মে ১৮, ২০২৪, ১১:৩০ পূর্বাহ্ণ
রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির আনুষ্ঠানিক চিঠি পাচ্ছেন সিরাজগঞ্জের যুদ্ধ শিশু মেরিনা
উজ্জ্বল অধিকারী: ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে বর্বর পাকসেনাদের সহিংসতা শুধু গনহত্যা বা জেনোসাইড এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। সে সময় প্রায় সাড়ে চার লক্ষ নারীকে শহর বন্দর গ্রামে ব্যাপকভাবে ধর্ষন এর মতো পাশবিক নির্যাতন করা হয়। ৭১ এ এরকম হাজার হাজার নির্যাতিতা চরম দৈহিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে হারিয়ে গেছেন কালের গর্ভে। যাঁরা এখনো বেঁচে আছেন তাদেরকে প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত করে দুঃসহ অপমান ও অত্যাচারের স্মৃতি। এসকল ধর্ষিতাদের মধ্যে যাঁরা গর্ভবতী হয়েছিলেন তাঁদের অনেককে ঢাকার কয়েকটি ক্লিনিকে এনে দেশি ও বিদেশি এনজিওর সহায়তায় গর্ভপাত ঘটানো হয়। যে সকল যুদ্ধ শিশুর জন্ম হয় তাদের প্রতিপালনের জন্য মাদার তেরেসা পরিচালিত শিশুভবন বা বেবিহোম নির্মান করা হয়।
এছাড়াও কেয়ার, কারিতাস, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে স্ক্যাডেনেভিয়ান দেশের সহায়তায় বেশ কিছু যুদ্ধ শিশুকে দত্তক হিসেবে নিয়ে যায় সেসব দেশের বহু পরিবার। দেশের অভ্যন্তরে যেসব যুদ্ধ শিশু কে আমরা খুঁজে পাই তার মধ্যে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার যুদ্ধশিশু মেরিনা খাতুন কে অবশেষে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয় থেকে যুদ্ধশিশু হিসেবে স্বীকৃতির আনুষ্ঠানিক চিঠি দেবার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও মেরিনা খাতুনের এই স্বীকৃতিতে অনেক উচ্ছসিত তার পরিবারের সদস্য সহ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সহ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের মানুষ। তবে তাকে মুক্তিযোদ্ধাদের মতো মাসিক ভাতার দেবার কোন বিষয় উল্লেখ না থাকায় খানিকটা হতাশও তারা। কিন্তু এই সামগ্রিক চিত্রটা তুলে আনা এত সহজ ছিল না। এর পেছনে দীর্ঘ এক ক্রান্তিকাল অতিবাহিত করেছেন ৭১ টিভির সিরাজগঞ্জের বার্তা প্রতিনিধি সাংবাদিক মাসুদ পারভেজ, যিনি দীর্ঘ এক জীবন ধরে সন্তানের মতো লালন করে চলেছেন সিরাজগঞ্জের বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা মায়েদের। ১৯৭১ সালে পাক সেনা ও তাদের দোসরদের পাশবিক নির্যাতনে বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা পচি বেগমের গর্ভে আসে মেরিনা খাতুন। লোক লজ্জার ভয়ে ভ্রুনেই মেরিনাকে শেষ করতে চাইলেও অন্য সন্তানদের অনুরোধে শেষ পর্যন্ত মেরিনার জন্ম দেন মা পচি বেগম। পচি বেগম রাষ্ট্রীয়ভাবে ২০১৮ সালে বীরঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পান।
২০২২ সালে সাংবাদিক মাসুদ পারভেজ মেরিনা খাতুনকে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে যুদ্ধ শিশুর হিসেবে স্বীকৃতি দেবার জন্য আবেদনের সাহায্য সহযোগিতা করেন এবং মেরিনা খাতুন মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ে আবেদন পত্র প্রেরণ করেন। জামুকার ৮২ তম সভায় মেরিনাকে যুদ্ধ শিশু হিসেবে স্বীকৃতি দেবার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে মন্ত্রীসভায় প্রস্তাবটি পাঠায় জামুকা। দীর্ঘ সময় পরে মন্ত্রীসভা তাদের স্বীদ্ধান্ত জানিয়ে চিঠি দেয় জামুকাকে। তার আলোকে জামুকার ৮৯তম সভায় মেরিনাকে যুদ্ধশিশু হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেবার সিদ্ধান্ত নেয় জামুকা। আনুষ্ঠানিক চিঠি দেবার ঘোষনায় উচ্ছসিত যুদ্ধশিশু মেরিনা খাতুনের পরিবার। এবার বাবার নাম অজ্ঞাত রেখেই রাষ্ট্রের সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারবেন মেরিনা।
কিন্তু সরকারের কাছ থেকে ভাতা পাওয়ার ব্যাপারে এখনো কোন স্বীদ্ধান্ত হয়নি বলেই জানা যায়। মেরিনার পরিবারের স্বজনরা জানান, এই রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়ায় তারা উচ্ছসিত। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধশিশু হিসেবে মেরিনার এই স্বীকৃতি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে আরো সমৃদ্ধ করবে বলে মনে করেন। যুদ্ধশিশুর স্বীকৃতি রাষ্ট্রে নতুন একটি অধ্যায়ের সূচনা। তবে তাদের মাসিক ভাতা প্রদানের দাবী আমাদের আরও কিছু দিন অব্যাহত রাখতে হবে বলে মনে হচ্ছে। বর্তমানে আমাদের সন্ধানে তিনজন যুদ্ধ শিশুর পরিচয় আছে। যুদ্ধ শিশু মেরিনার স্বীকৃতির পর বাকি দুজনের স্বীকৃতিও খুব দ্রুত অর্জন হবে বলে আমরা আশা রাখছি।
সংবাদটি শেয়ার করুন।
Copyright © 2024 সংবাদের আলো. All rights reserved.