নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব হিসেবে সচিব পদমর্যাদায় নাঈমুল ইসলাম খানকে নিয়োগ দেওয়ার কথা ছিল। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি সারসংক্ষেপ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল গত ২৮ মে। এই সারসংক্ষেপটি ফাঁস হয়ে যায় এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে নাঈমুল ইসলাম খান প্রেস সচিব হচ্ছেন এই সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো সারসংক্ষেপে ৭ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত নাঈমুল ইসলাম খানের নিয়োগ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে, এই নিয়োগ ঝুলে গেছে। জনপ্রশাসনমন্ত্রীর কাছে ফাইল রয়েছে এবং এই ফাইলের ব্যাপারে তিনি কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। জনপ্রশাসনমন্ত্রীর অনুমোদনের পর এটি আবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আসবে এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মাধ্যমে তা মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠানোর কথা রয়েছে। কিন্তু গেল ৭ দিন ধরে এই ফাইল স্থবির হয়ে পড়ে রয়েছে।
বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, বেশ কিছু কারণে নাঈমুল ইসলাম খানের এই নিয়োগ ঝুলে গেছে। যে সমস্ত কারণে প্রেস সচিব হিসেবে নাঈমুল ইসলাম খানের নিয়োগ ঝুলে গেছে বা অনিশ্চিত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে;
১. তথ্য ফাঁস: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সারসংক্ষেপ যাওয়াটা একান্ত গোপনীয় একটি বিষয়। এই গোপনীয় বিষয়টি কীভাবে ফাঁস হল-এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় নিজস্ব উদ্যোগে অনুসন্ধান করছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, এটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ফাঁস হয়নি। তাহলে কে কীভাবে ফাঁস করল সেটিও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানানো হয়। দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা।
২. নেতিবাচক মনোভাব: নাঈমুল ইসলাম খানের নিয়োগের সিদ্ধান্ত ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে নেতিবাচক মনোভাব ব্যাপক আকারে সাড়া ফেলেছে। বিশেষ করে নাঈমুল ইসলাম খানের অতীত কর্মকাণ্ড ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরাই। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই নিয়োগে বিস্মিত ও হতবাক হয়েছেন। হতাশা প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের লোকজনও এই নিয়োগকে ঠিকঠাক মতো মেনে নিতে পারছেন না। অন্যদিকে সাংবাদিকদের মধ্যে থেকে যারা জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক তারাও এই ধরনের নিয়োগে বেশ বিস্মিত। তারা যে যেভাবে পেরেছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই নিয়োগ বন্ধ করার আবেদন জানিয়েছেন, অনুরোধ জানিয়েছেন। আর এই সমস্ত ভিন্নমতের কারণে হয়তো পুরো বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবা হচ্ছে।
৩. নাঈমুল ইসলাম খানের তারেক জিয়া বন্দনা: নাঈমুল ইসলাম খান অতীতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম সুবিধাবাদী ছিলেন বলে জোর প্রচার চালানো হচ্ছে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিশেষ করে তারেক জিয়ার প্রতি তার অপাত পক্ষপাত কারও নজর এড়ায়নি। বিএনপির পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক বুলেটিনে 'তারেক জিয়ার কাছে খোলা চিঠি' লেখাটি এখন আওয়ামী লীগ মহলের হাতে হাতে ঘুরছে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা এই লেখার কপি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এটির কারণে একটি বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলেও মনে করছেন অনেকে।
৪. প্রধানমন্ত্রীর পরিবার সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ লেখা প্রকাশ: নাঈমুল ইসলাম খান এক সময় আমাদের সময় পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। সেই পত্রিকায় এক এগারোর সময় বিতর্কিত এবং হাওয়া ভবনের পৃষ্ঠপোষকতায় লালিত প্রোভ মিডিয়া থেকে প্রধানমন্ত্রীর আইটি বিষয়ক উপদেষ্টা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ এবং অসত্য ভিত্তিহীন একটি খবর ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছে। এই পত্রিকাটির কাটিংও প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে পাঠিয়েছে বিভিন্ন মহল। এই রকম একজন ব্যক্তিকে কোন ভাবেই প্রেস সচিব করা যায় কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামী লীগের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা।
৫. অতীত পরিচয়: নাঈমুল ইসলাম খানের প্রথম সম্পাদিত দৈনিক আজকের কাগজে রাজাকারদের যে ধারাবাহিক তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল, সেখানে তার পিতার কথা উল্লেখ ছিল। নাঈমুল ইসলাম খানের পিতা কুমিল্লা অঞ্চলের একজন স্বীকৃত রাজাকার ছিলেন। এই বিষয়টি অতীতে অনেকে জানত। এখন আবার এটি নতুন করে সামনে আনা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, একজন রাজাকারের সন্তান প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব হয় কীভাবে।
৬. বিতর্কিত ভূমিকা: নাঈমুল ইসলাম খানের বিভিন্ন সময় নানা রকম বিতর্কিত ভূমিকার কথা এখন জোরেশোরে আলোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে তার সুবিধাবাদ, অর্থ লোভ এবং বারবার একই পত্রিকা বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে লাভবান হওয়া ইত্যাদি নানা বিষয় গুলো সামনে আনা হচ্ছে। অনেকে মনে করছেন যে, এরকম একজন বহুল বিতর্কিত ব্যক্তিকে প্রেস সচিব করা হলে সেটি হবে সরকার এবং প্রধানমন্ত্রীর জন্য অন্তত ক্ষতিকর। এ সমস্ত বিষয়গুলো নিয়েই এখন সরকারের নীতি নির্ধারক মহলে তোলপাড় চলছে। আর সবকিছু মিলিয়ে নাঈমুল ইসলাম খানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ ঝুলে গেছে। শেষ পর্যন্ত এটির কী হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।