নিজস্ব প্রতিবেদক : এক কিশোরকে তুলে নিয়ে মাদক দিয়ে চালান দেওয়ার ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবি ও অর্থ নিয়ে মাদক সম্রাটকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ১০ পুলিশ সদস্যকে ক্লোজড করা হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় গিয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত এক মাদক সম্রাটকে গ্রেফতারের পর ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগে গোদাগাড়ী থানা পুলিশের পাঁচ কর্মকর্তাসহ মোট ছয়জনকে পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে। এছাড়া এক কিশোরকে তুলে নিয়ে মাদক দিয়ে চালান দেওয়ার ভয় দেখিয়ে দুই লাখ টাকা দাবির ঘটনায় রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার প্রেমতলী পুলিশ ফাঁড়ির চার সদস্যকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
ফলে পৃথক ঘটনায় গোদাগাড়ী থানা ও অধীনস্ত প্রেমতলী ফাঁড়ি থেকে মোট ১০ জন পুলিশ সদস্যকে ক্লোজড করা হয়েছে। সোমবার (৬ মে) জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে ৫ জন কর্মকর্তা ও একজন কনস্টেবলকে ক্লোজড করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। ক্লোজড হওয়া পুলিশ সদস্যরা হলেন, থানার এসআই আকরামুজ্জামান, এসআই সত্যব্রত, এএসআই আব্দুল করিম, এএসআই মঞ্জুরুল ইসলাম, এএসআই রঞ্জু ও কনস্টেবল মাহবুব। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, রোববার (৫ মে) বিকেলে পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান (পিপিএম) গোদাগাড়ী মডেল থানা পরিদর্শনে এসে ক্লোজড হওয়া পুলিশ সদস্যদের অপরাধ সম্পর্কে অবহিত হন।
এরপর ফিরে গিয়ে ৬ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। গোদাগাড়ী মডেল ওসি আব্দুল মতিন বলেন, ৬ পুলিশ সদস্যকে রাতেই থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যাহার হওয়া ৬ পুলিশ সদস্য মাদক ব্যবসায়ীদের মাসোহারা নেয়াসহ আটক করে মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করার অভিযোগ আছে পুলিশ সুপারের কাছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানায়। এরআগে, রোববার (৫ মে) সকালের দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার কোদালকাটি গ্রামের বাদেফুল ইমলামের ছেলে আব্দুস সামাদ নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে তিন লাখ টাকা নিয়ে ছেড়ে দেন এসআই আকরামুজ্জামান।
আব্দুস সামাদের বিরুদ্ধে গোদাগাড়ী থানায় গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে'। অন্যদিকে, এক কিশোরকে তুলে নিয়ে মাদক দিয়ে চালান দেওয়ার ভয় দেখিয়ে দুই লাখ টাকা দাবির ঘটনায় রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার প্রেমতলী পুলিশ ফাঁড়ির চার সদস্যকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রত্যাহার হওয়া পুলিশ সদস্যরা হলেন, প্রেমতলী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই রেজাউল করিম, এএসআই আনোয়ারুল ইসলাম, কনস্টেবল রেজাউল ইসলাম ও মিলন হোসেন। রোববার বিকেলে তাদের প্রত্যাহারের আদেশ দেন রাজশাহীর পুলিশ সুপার মো. সাইফুর রহমান। প্রত্যাহার হওয়া পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করা হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে গোদাগাড়ী উপজেলার গোগ্রাম ইউনিয়নের গোগ্রাম থেকে কিশোর সোহানুর রহমান সোহানকে (২২) সাদা পোশাকে তুলে নিয়ে যান প্রেমতলী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের চার পুলিশ সদস্য। সোহান গোগ্রাম এলাকার ব্যবসায়ী মর্তুজা আলীর ছেলে।' অভিযোগ মতে, এ পুলিশ দলের নেতৃত্বে ছিলেন এসআই রেজাউল করিম। পুলিশ সদস্যরা সোহানকে গোগ্রাম থেকে তুলে প্রেমতলী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পেছনে পদ্মা নদীর পাড়ে নিয়ে যান। আইপিএল জুয়ায় বিপুল টাকা পাওয়ার অভিযোগ এনে ছেলেকে ছাড়াতে সোহানের বাবার কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করে পুলিশ। টাকা না দিলে হেরোইনের মামলা দিয়ে চালান করার ভয় দেখানো হয়। সোহানের হাতে পরানো হয় হাতকড়া।
এদিকে, পুলিশ দলের সদস্যরা সোহানকে পদ্মার ধারে আটকে রেখে এএসআই আনোয়ারুল ইসলাম টাকা নিতে গোগ্রাম চলে যান সোহানের বাবার কাছে। এ সময় গ্রামবাসী একজোট হয়ে আনোয়ারুল ইসলামকে আটক করে সোহানকে ফেরত দেওয়ার দাবি করেন। খবর পেয়ে বাকি তিন পুলিশ সদস্য রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে সোহানকে বসন্তপুরের একটি ফাঁকা সড়কে ছেড়ে দিয়ে যান। সোহান তার পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বললে আটক পুলিশ কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলামকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ছাড়া পাওয়ার পর সোহান জানায়, তাকে ছেড়ে দেওয়ার আগে পুলিশ সদস্যরা তার মোবাইল কেড়ে নিয়ে বিকাশের পিন দিয়ে কয়েক হাজার টাকা তুলে নেন। এদিকে ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ পেয়ে ঘটনাটি তদন্ত করেন গোদাগাড়ী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সোহেল রানা। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় রোববার রাতে চার পুলিশ সদস্যকে পুলিশ লাইনে ক্লোজড করার নির্দেশ দেন রাজশাহীর পুলিশ সুপার মো. সাইফুর রহমান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহীর পুলিশ সুপার মো. সাইফুর রহমান বলেন, অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মেলায় প্রেমতলী তদন্ত কেন্দ্রের চার পুলিশকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগে জানা গেছে, গোদাগাড়ী থানায় পোস্টিং পাওয়ার পর থেকে এসব পুলিশ সদস্যরা ধরা-ছাড়া বাণিজ্য করে আসছিলেন। পুলিশ সুপার মো. সাইফুর রহমান আরো জানান, শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে জড়িত থাকায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।'