মতিউরের দুই স্ত্রীর নামেও সম্পদের পাহাড়, লাপাত্তা প্রথম স্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক: এবারের ঈদুল আজহায় ঈদ ছাপিয়ে দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ‘ছাগলকাণ্ড’। আলোচিত সমালোচিত সাদিক এগ্রো থেকে ১৫ লাখ টাকায় এক তরুণের ছাগল ক্রয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হলে, পরে জানা যায় ওই তরুণ এনবিআরের সদস্য মতিউর রহমানের ছেলে। পরবর্তীতে বিষয়টি গণমাধ্যমে অনুসন্ধান শুরু হলে বেরিয়ে আসে মতিউরের বিপুল সম্পত্তি ও রত্নভান্ডারের তথ্য। অনুসন্ধানে দেখা গেছে মতিউরের এই রত্নভান্ডারের অধিকাংশই তার প্রথম স্ত্রী নরসিংদী রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ ও দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মি আখতারের নামে। এছাড়াও দেশে বিদেশে মতিউরের সন্তানদের বিলাসবহুল জীবনযাপনও ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
জানা যায়, মতিউরের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চেয়ারম্যান। ২০২৩ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস ছাদেক মারা গেলে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হন এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রভাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হন লায়লা কানিজ। পরবর্তীতে জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির তিনি দুর্যোগ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক হন। তার নির্বাচনী হলফনামা থেকে জানা গেছে, তার বাৎসরিক আয় কৃষিখাত থেকে ১৮ লাখ, বাড়ি-অ্যাপার্টমেন্ট-দোকান ও অন্যান্য ভাড়া থেকে ৯ লাখ ৯০ হাজার, শেয়ার-সঞ্চয়পত্র-ব্যাংক আমানতের লভ্যাংশ থেকে ৩ লাখ ৮২ হাজার ৫০০, উপজেলা চেয়ারম্যানের সম্মানী বাবদ ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৭৫, ব্যাংক সুদ থেকে ১ লাখ ১৮ হাজার ৯৩৯ টাকা।
বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার জমা রয়েছে ৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। তার কৃষিজমির পরিমান ১৫৪ শতাংশ, তার অকৃষিজমির মধ্যে রয়েছে রাজউকে পাঁচ কাঠা, সাভারে সাড়ে ৮ কাঠা, গাজীপুরে ৫ কাঠা, গাজীপুরের পুবাইলে ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ ও ২ দশমিক ৯০ শতাংশ, গাজীপুরের খিলগাঁওয়ে ৫ শতাংশ ও ৩৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ, গাজীপুরের বাহাদুরপুরে ২৭ শতাংশ, গাজীপুরের মেঘদুবীতে ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ, গাজীপুরের ধোপাপাড়ায় ১৭ শতাংশ, রায়পুরায় ৩৫ শতাংশ, ৩৫ শতাংশ ও ৩৩ শতাংশ, রায়পুরার মরজালে ১৩৩ শতাংশ, সোয়া ৫ শতাংশ, ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ২৬ দশমিক ২৫ শতাংশ ও ৪৫ শতাংশ, শিবপুরে ২৭ শতাংশ ও ১৬ দশমিক ১৮ শতাংশ, শিবপুরের যোশরে সাড়ে ৪৪ শতাংশ, নাটোরের সিংড়ায় ১ একর ৬৬ শতাংশ। তবে বিভিন্ন সূত্র বলছে তিনি তার মোট সম্পত্তির মাত্র অর্ধেকেরও কম দেখিয়েছেন হলফনামায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রায়পুরা উপজেলার মারজালে নিজ এলাকার প্রায় দেড় একর জমিতে ‘ওয়ান্ডার পার্ক ও ইকো রিসোর্ট’ নামে একটি বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলেন লায়লা কানিজ। এছাড়াও মরজাল বাসস্ট্যান্ড থেকে এক কিলোমিটার দূরত্বে মতিউর রহমান ও লায়লা কানিজ লাকী দম্পতির আধুনিক স্থাপত্যের ডুপ্লেক্স বাড়ি। কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত আধুনিক স্থাপত্যের বাড়িটি বেশ বিলাসবহুল। এদিকে লায়লা কানিজ নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদে অফিস করছেন না বলে জানা গেছে। তাকে মুঠোফোনেও পাওয়া যাচ্ছে না। রোববার (২৩ জুন) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদে আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা ছিল।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইকবাল হাসানের সভাপতিত্বে সভায় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা অংশ নিলেও অনুপস্থিত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ। পরিষদে তার কক্ষটিও তালাবদ্ধ।’ অন্যদিকে, মতিউরের দ্বিতীয় স্ত্রীও কম যান না। বিভিন্ন সূত্র বলছে, এনবিআর সদস্য মতিউর রহমান দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামে। কয়েক বছর আগে সোনাগাজীতে শ্বশুরের ভিটায় শাশুড়িকে একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি বানিয়ে দেন মতিউর রহমান। প্রায়ই সেখানে মতিউর রহমানের স্ত্রী শাম্মী আখতার, তাঁদের ছেলে মুশফিকুর রহমান (ইফাত) ও মতিউরের শাশুড়ির যাতায়াত ছিল বলে এলাকার সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।
এছাড়াও মতিউর রহমানের নামেও বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে অঢেল সম্পদ। ভূমি অফিসের তথ্য মতে, সাভারে ১২ দশমিক ৫৮ শতাংশ (দশমিক ৩৮ বিঘা) জমি রয়েছে। মতিউর রহমান ২০১৬ সালের ৮ অক্টোবর সাভারের বিলামালিয়া মৌজায় এই জমি কেনেন। মতিউর রহমানের নামে গাজীপুর সদরের খিলগাঁও মৌজায় ৪৯ দশমিক ৫ শতাংশ (দেড় বিঘা’) জমির তথ্য পাওয়া গেছে। এগুলো ছাড়াও মতিউর রহমানের নামে ‘আপন ভুবন’ নামে গাজীপুরে পিকনিক অ্যান্ড শুটিং স্পট আছে বলে জানা যায়।
উল্লেখ্য, রোববার (২৩ জুন) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট মতিউর রহমানকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে। এদিন মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করার কথা জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এছাড়াও এদিন মতিউর রহমানকে সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পদ থেকেও সরিয়ে দেয়া হয়। রোববার (২৩ জুন) অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের সভায় তিনি যোগ দেননি
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো মন্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো।