রবিবার, ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

ভূঞাপুরে এক দম্পত্তির পলিথিনের ঘরে মানবেতর জীবন

আখতার হোসেন খান, ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি: টাঙ্গাইালের ভূঞাপুরে পলিথিনে মোড়ানো ঘরে মানবেতর জীবন যাপন করছেন অভিরাম (৬২) ও তার অসুস্থ এবং প্রতিবন্ধী স্ত্রী শ্যামলীরাণী (৫৫) দম্পত্তি। টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার অলোয়া ইউনিয়নের চরনিকলা গ্রামে বাঁশঝাড়ের নিচে পলিথিনে মোড়ানো ঘরে মানবেতর জীবন যাপন করছেন অভিরাম ও অসুস্থ এবং প্রতিবন্ধী শ্যামলীরাণী দম্পত্তি। পলিথিনে মোড়ানো ছাপড়া ঘরটিতে দীর্র্ঘকাল বসবাস করছেন তারা। পোঁকা-মাকড়ের আতঙ্ক থাকলেও সেখানেই দুই বছর ধরে বসবাস করছেন এই ভূমিহীন অসহায় দম্পত্তি। সরেজমিনে দেখা গেছে, পরিত্যক্ত একটি পুকুর পাড়ের বাঁশঝাড়ে নিচে গ্রামের প্রতিবেশিদের সহযোগিতায় ৬টি টিন ও শোলার (পাটখড়ি) বেড়া দিয়ে ছাপড়া তুলে বসবাস করছেন উপজেলার চরনিকলা গ্রামের পূর্ণ সরকারের ছেলে অভিরাম সরকার। ছাপড়ার পাশেই একটি মাটির রাস্তা। ওই রাস্তা দিয়ে আশপাশের মানুষজন চলাচল করে। টিন জং ধরায় পলিথিন মোড়ানো হয়েছে চালে যাতে বৃষ্টিতে ঘরে পানি না পড়ে। তারপরও বৃষ্টি হলে পানি পড়ে অভিরামের পাটখরির ঘরে। এছাড়া রাস্তার পাশে ছাপড়া থাকায় পলিথিন দিয়ে বেড়া দেয়া হয়েছে। মাটির তৈরি পাট দিয়ে টয়লেট থাকলেও সেটি পলিথিনে মোড়ানো। অসুস্থ্য প্রতিবন্ধি স্ত্রী শ্যামলীকে রেখেই কাজে যেতে হয় অভিরামকে। জানা গেছে, অভিরাম সরকার ও শ্যামলী দম্পত্তির ঘরে চৈতন্য নামের এক ছেলে এবং ও গৌড়ি নামের এক মেয়ে রয়েছে। বাড়ির জায়গা-জমি বিক্রি ২০০৪ সালে স্বপরিবার ভারত পারি জমান। সেখানে জায়গা কিনে কাজ করে ছেলে মেয়েদের বড় করেন। মেয়েকে বিয়ে দেন সেখানেই। এরপরই হঠাৎ একদিন তার স্ত্রী শ্যামলী বিদ্যুৎপুষ্টে গুরুত্বর আহত হয়। সঠিক চিকিৎসা না হওয়ায় ধীরে ধীরে অসুস্থ্য হয়ে পরে। এতে তিনি শ্রবন ও শারীরিক প্রতিবন্ধি হয়ে পড়ে। পরে বিগত প্রায় ১০ বছর আগে ভারতে থাকা বাড়ি ও ছেলেকে রেখে অসুস্থ্য স্ত্রীকে নিয়ে দেশের বাড়িতে চলে আসেন। কারণ ছেলে বিয়ে করায় বৃদ্ধ বাবা-মাকে আর ভাত দিতে চায় না। সহায়-সম্বল না থাকায় দেশের বাড়িতে এসে বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নেন। কিন্তু সর্বশেষ দুই বছর আগে কোন জায়গা না পেয়ে এক আত্মীয়ের পুকুর পাড়ের বাঁশ ঝাড়ের নিচে একটি ছাপড়া তোলে এলাকার লোকজনের আর্থিক সহায়তায়। বর্ষার সময় পুকুর ভরাট হলে পানিতে তলিয়ে যায় তার পলিথিনের মোড়ানো ছাপড়া ঘরটি। এলাকায় তিনি মাছ কিনে বিক্রি করে যা উপার্জন করেন তাতে সংসার চলে না। তার উপর আবার স্ত্রীর ওষুধ কিনতে হয়। তার ছেলে ও মেয়েরাও খোঁজ নেয় না বৃদ্ধ বাবা-মাকে। ফলে অসুস্থ্য স্ত্রীকে নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। স্থানীয়রা জানান, বংশি নামে পরিচিত অভিরাম। তার বাপ-দাদাদের অনেক সম্পত্তি ছিল। কিন্তু সব কিছু বিক্রি করে পরিবার নিয়ে ভারতে গিয়েছিল। সেখান থেকে ফিরে এসেছে দেশে। আসার পর বিভিন্নস্থানে ছিল ঘর তুলে ঠিকই কিন্তু চিরস্থায়ী ছিল না। পরে পুকুরপাড়ে ঠায় হয়েছে। যেটা আড়া জঙগল আর বাঁশ ঝাড়। চরনিকলা গ্রামের হালিম মিয়া বলেন, আড়া-জঙলে এভাবে মানুষ বসবাস করে না এই যুগে। কষ্ট কি সেটা তাদের দেখলেই বোঝা যায়। তার ছাপড়া ঘরটি এলাকার মানুষের আর্থিক সহায়তায় হয়েছে ঠিকই কিন্তু সেটা চিরস্থায়ী না। বৃষ্টির হাত থেকে বাচঁতে পলিথিন দেয়া হয়েছে। মাছ বিক্রি করে যে কয়টা উপার্জন হয় তাকে তার স্ত্রীর ওষুধ কেনা যায় না খাবে কি। এমন ভূমিহীনকে সরকার যেন সহায়তা করে। অভিরাম সরকার বলেন, আমার বড় ভাইও পরিবারসহ ভারতে চলে গিয়েছে। সেই সুবাদে আমিও ছেলে, মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে চলে গিয়েছিলাম। বেশ কয়েকজন সেখানে থাকার পর দেশে চলে এসেছি। ছেলেকে বড় করলেও মানুষ করতে পারিনি। উপার্জন করতে না পারায় ছেলের বউ ভাত দিতে চায় না। তাই অসুস্থ্য স্ত্রীকে নিয়ে দেশে চলে আসছি। থাকার জায়গা না পেয়ে পুকুর পাড়েই আছি। এই বয়সে তেমন কাজ করতে পারিনা। হাট-বাজার থেকে মাছ কিনে এনে গ্রামের বাজারে বিক্রি করি। তাতে সংসার চলতে চায় না। কপালের কষ্ট থাকলে সেটা ভোগ করতে হবে। তাই নিয়তি মেনেই কষ্টভোগ করছি। তবে স্ত্রী যদি সুস্থ্য থাকতো তাহলে কষ্টটা কিছুটা হলেও কম হতো। সকালে উঠে রান্না করে স্ত্রীকে সেবাযতœ ও খাওয়া-দাওয়া করিয়ে বাজারে যাই মাছ কিনতে। আবার বাড়িতে এসে তাকে খাওয়াতে হয়। চিরনিকলার সাবেক ইউপি সদস্য মোকলেছুর রহমান জানান, অভিরামের মত অভাবী মানুষ নেই দেশে। স্ত্রী অসুস্থ্য টিনের ছাপড়া তুলে পুকুর পাড়ে থাকে। তার স্ত্রীর একটা প্রতিবন্ধি কার্ড করে দিয়েছিলাম পরিষদ থেকে মেম্বার থাকার সময়। এখন তার খুবই অভাব। সরকার যদি অসহায় ওই ভূমিহীন দম্পত্তিকে একটা থাকার ঘর দিলে তারা নিরাপদে থাকতো। অলোয়া ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম হাসান বলেন, অসহায় ওই পরিবারের জন্য ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক সহযোগিতা করার পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সকল ধরনের সহায়তা করা হবে। সরকারি সুবিধাসহ তার থাকার ঘর নির্মাণে টিন দিয়ে সহায়তা করা হবে।

সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো মন্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো।

----- সংশ্লিষ্ট সংবাদ -----

এই সপ্তাহের পাঠকপ্রিয়