সংবাদের আলো ডেস্ক: সুসংগঠিতভাবে ভুয়া প্রচারণার’ অভিযোগে ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও এর গবেষণা সেল ‘সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন-সিআরআই’ সংশ্লিষ্ট ৫০টি অ্যাকাউন্ট ও ৯৮টি পেজ মুছে দিয়েছে ফেসবুকের মূল কোম্পানি মেটা। সরিয়ে দেয়া অ্যাকাউন্ট ও পেজগুলোর সম্মিলিতভাবে প্রায় ৩৪ লাখ ফলোয়ার ছিলো। এসব পেজ থেকে ৬০ ডলার বিজ্ঞাপনী খরচের কথা জানিয়েছে মেটা, যা টাকায় পরিশোধ করা হয়েছে।গত বুধবার (২৯ মে) প্রকাশিত মেটার ২০২৪ সালের প্রথম ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভুয়া পরিচয়ের এসব অ্যাকাউন্ট ও পেজগুলো সাধারণ মানুষকে উদ্দেশ্য করে কনটেন্ট পোস্ট করেছে বলে দেখা গেছে। এই পেজগুলোর কিছু নিজেদেরকে সংবাদমাধ্যম হিসেবে দাবি করেছে এবং অন্যগুলো বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের নাম ব্যবহার করে কনটেন্ট পোস্ট করেছে। আবার কিছু পেজ বিএনপির নাম ব্যবহার করেছে এবং বিএনপির সমালোচনা করে কনটেন্ট পোস্ট করেছে।
মেটার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এই অ্যাকাউন্ট ও পেজগুলোর নেটওয়ার্ক ইউটিউব, এক্স (সাবেক টুইটার), টিকটক, টেলিগ্রাম ও তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটসহ একাধিক প্ল্যাটফর্মে রয়েছে। এতে আরো বলা হয়, ‘প্রতিটি ক্ষেত্রে ভুয়া অ্যাকাউন্ট তৈরি করে কিছু ব্যক্তি একে অপরের যোগসাজশে অন্যদের বিভ্রান্ত করছে। তারা কারা এবং কি করছে- এই সম্পর্ক ভুয়া তথ্য প্রচার করে।’
এসব অ্যাকাউন্ট ও পেজের নেটওয়ার্ক ইউটিউব, এক্স (সাবেক টুইটার), টিকটক, টেলিগ্রামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এ ছাড়া নিজস্ব ওয়েবসাইটও রয়েছে। বাংলাদেশের এসব ভুয়া কার্যকলাপের বিষয়ে অভ্যন্তরীণ তদন্ত পরিচালনা করেছে মেটা। এই ১৪৮টি পেজ ও আইডি বন্ধের বিষয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) কিছু জানে কিনা জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের কাছে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই৷ আমরা তাদের কাছে কিছু আইডি বা পেজের ব্যাপারে সুপারিশ করি, সেগুলো নিয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়৷ এগুলো তারা কিভাবে করেছে, আমরা কিছুই জানি না ৷
এই ধরনের অপপ্রচারের বিষয়ে জানতে চাইলে চাইলে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)-র সাইবার ক্রাইম ইউনিটের উপ-মহাপরিদর্শক শ্যামল কুমার নাথ ডয়চে ভেলেকে বলেন, “এই ১৪৮টি পেজ বা আইডির ব্যাপারে আমরা কিছুই জানি না৷” তবে
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)-র সাইবার ক্রাইম বিভাগের উপ-কমিশনার তারেক আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, “বিভিন্ন ঘটনায় আমরা ফেসবুকের কাছে তালিকা পাঠাই৷ সেখানে এই নামগুলো আছে কিনা, সেটা তো না দেখে বলা যাবে না ৷ তবে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত আইডি বা পেজগুলোর বিরুদ্ধেই আমরা রিপোর্ট করি৷ যে পেজ বা আইডিগুলো বন্ধ হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ ছিল, সেটা তো আমরা জানি না৷”
মেটার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই চক্র প্রধানত বাংলা ভাষায় এবং ইংরেজিতে বাংলাদেশের রাজনীতি, নির্বাচন, বিএনপির সমালোচনা, বিএনপির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, নির্বাচনপূর্ব সহিংসতায় বিএনপির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ নিয়ে সংবাদ ও চলতি ঘটনা পোস্ট করতো৷ পাশাপাশি বর্তমান সরকার, ক্ষমতাসীন দল এবং বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত উন্নয়নে এর ভূমিকা এসব সমর্থন করে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করতো৷ এ বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে বাংলাদেশ ছাড়াও চীন, ক্রোয়েশিয়া, ইরান, ইসরায়েল, মালদোভা ও মাদাগাস্কারে ছয়টি ভুয়া প্রচারাভিযান মুছে দিয়েছে মেটা।