ব্যাংক খাতে তিন মাসে প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে ২৩৯৭ কোটি টাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক: উচ্চ খেলাপি ঋণের ভারে খুড়িয়ে চলছে দেশের ব্যাংক খাত। আর এই খেলাপির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রভিশন ঘাটতিও। ভাল এবং মন্দ ঋণের বিপরীতে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রভিশন তথা নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে হয় ব্যাংকগুলোকে। আর ঋণ জালিয়াতি এবং অব্যবস্থাপনাসহ নানা অনিয়মের কারণে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ লাফিয়ে বাড়ছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী প্রভিশন রাখতে পারছে না সরকারি ও বেসরকারি খাতের কিছু ব্যাংক। ফলে ২০২৪ সালের মার্চ প্রান্তিক শেষে (জানুয়ারি-মার্চ) দেশের ব্যাংক খাতের প্রাভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এখন ব্যাংকের যে অবস্থা তাতে প্রভিশন ঘাটতি হবে। কারণ দিন দিন তো খেলাপি ঋণ বাড়ছে। তারপরও সম্প্রতি খেলাপি ঋণ অনেক বেড়ে গেছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে বেশি বেড়েছে। তাই প্রভিশন ঘাটতি বাড়বে। এখানে শতভাগ প্রভিশন রাখা দরকার। এখানে একটার সাথে আরেকটা জড়িত। তিনি বলেন, এভাবে প্রভিশন বাড়তে থাকলে ব্যাংকগুলো দুর্বল হয়ে যাবে। ক্যামেলস রেটিংয়ে র্যাঙ্ক কমে যাবে। প্রভিশন ঘাটতি কমাতে হলে আগে খেলাপি ঋণ কমাতে হবে। ঋণ দেয়ার সময় যাচাঁই বাছাই করে দিতে হবে যাতে টাকাগুলো আবার ফেরত আসে। নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোকে পরিচালন মুনাফার ০.৫ থেকে ৫ শতাংশ সাধারণ ক্যাটাগরির ঋণের বিপরীতে প্রভিশন হিসেবে রাখতে হয়। নিম্নমানের খেলাপি ঋণের বিপরীতে ২০ শতাংশ প্রভিশন এবং ৫০ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হয় সন্দেহজনক খেলাপি ঋণের বিপরীতে। এছাড়া, প্রতিটি ব্যাংকের জন্য মন্দ বা লোকসান ক্যাটাগরির খেলাপি ঋণের বিপরীতে ১০০ ভাগ প্রভিশনিং আলাদা করে রাখার বিধান রয়েছে। প্রভিশন ঘাটতি ব্যাংকিং খাতের জন্য একটি অশনি সংকেত, কারণ এটি ব্যাংকগুলোর দুর্বল আর্থিক অবস্থার চিত্র তুলে ধরে, যা মূলত উচ্চ খেলাপি ঋণের ফল। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের মার্চ শেষে ভাল-মন্দ মিলিয়ে ১৬ লাখ ৪০ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর ১ লাখ ১১ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা প্রভিশন হিসেবে রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু এই সময়ে ব্যাংকগুলো প্রভিশন হিসেবে জমা রাখতে সক্ষম হয়েছে ৮৪ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ২০২৪ সালের মার্চ শেষে ব্যাংক খাতের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের প্রভিশন ঘাটতি ছিল ২৪ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা।সেই হিসাবে চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিক ( জানুয়ারি-মার্চ’) এই তিন মাসে প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে ২ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের মার্চ মাস শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৪০ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে এক লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১১.১১ শতাংশ। আর ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ১৬ লাখ ১৭ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছিল এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৯ শতাংশ। সেই মার্চ শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৬ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো মন্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো।