ব্যতিক্রম একজন ইউএনও ছিলেন বুলবুল আহমেদ
বিশেষ প্রতিনিধি: একজন ইউএনও কতটা জনপ্রিয় হতে পারেন তার ঝলমলে নজির ইউএনও বুলবুল আহমেদ। প্রত্যন্ত হাওরাঞ্চলের মানুষের কাছে একজন ব্যতিক্রম ইউএনও হিসেবে পরিচিত মুখ ছিলেন তিনি । ২০২০ সালের ৫ জুলাই তিনি মদন উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্বে আসেন। তারপরের গল্প এখন মদন উপজেলার মানুষের মুখে মুখে।
ভালো কাজ, ভালো ব্যবহার আর ভালোবাসা দিয়ে গত দুই বছরে উপজেলার সর্বস্তরের মানুষের মন জয় করে নিয়েছিলেন তিনি। ক্ষমতাবান মানুষ থেকে শুরু করে সাধারন দিনমজুর সবার কথা তিনি মনোযোগ সহকারে শোনতেন।
সরকারি রুটিন দায়িত্বের পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের যেকোন অনুষ্ঠানে ইউএনও বুলবুল আহমেদ এর সরব উপস্থিতি প্রমাণ দেয় তিনি কতটা উদার ও মিশুক প্রকৃতির কর্মকর্তা ছিলেন।
কথাবার্তায় মার্জিত ও আচরণে অত্যন্ত ভদ্র এই মানুষটি মাত্র দু’বছরে মদনবাসীর মন প্রিয়জন হয়ে উঠেছিলেন। উপজেলার সর্বস্তরের মানুষের ভালোবাসার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন ইউএনও বুলবুল আহমেদ।
একজন সরকারি কর্মকর্তার প্রতি সাধারণ মানুষের এতটা আবেগ, এতটা ভালোবাসা নিঃসন্দেহে অভাবনীয়।
ইউএনও বুলবুল আহমেদ একজন সফল ইউএনও ছিলেন। তার মত চৌকস অফিসারের সংখ্যা যত বেশি হবে, উন্নত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা ততটাই বাস্তবায়িত হয়ে উঠবে বলে মদন উপজেলাবাসী মনে করেন। ইউএনও বুলবুল আহমেদ এর বদলিজনিত কারণে মদন উপজেলা মানুষের মনে আক্ষেপের চিত্র ফুটে উঠে।
তিনি বিশ্ব মহামারি করোনার সময় নিজের জীবন বাজি রেখে উপজেলার মাঠে ঘাটে বেড়িয়েছেন। কর্মহীন হতদরিদ্রদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী খাবার পৌঁছিয়ে দিয়ে প্রশংসা কুঁড়িয়েছেন।
এবারের আগাম বন্যায় বোরো ফসল রক্ষার জন্য মাঠ পর্যায়ে রাত দিন মাঠে থেকে কৃষকদের ধান কর্তন করাতে সক্ষম হয়েছেন। এতে হাওর পাড়ের কৃষকদের কাছে তিনি অতি আপনজন হয়ে উঠেন। সাম্প্রতিক বন্যায় তিনি রাত দিন মাঠে থেকে বন্যার্তদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া এবং সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ত্রাণ স্বে”ছাসেবকদেরকে সাথে নিয়ে প্রতিটি আশ্রয় কেন্দ্রে এবং বন্যায় গৃহ বন্দিদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেন। এমন কি মেডিকেল টিম নিয়ে প্রতিটি আশ্রয় কেন্দ্রের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
অসহায় দুঃস্থ মানুষের চিকিৎসা, এমনকি ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় হাসপাতালে নিজ খরচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে মানবিক ইউএনও হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
গত দুই বছরে তিনি- মদন উপজেলা পরিষদে মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ফলক স্থাপন, উপজেলা পরিষদে বঙ্গবন্ধু পাবলিক লাইব্রেরি স্থাপন, হাওরের অনাবাদী ৩০০ হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় আনয়ন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ, ভিক্ষুক পুনর্বাসন, ট্রান জেন্ডার জনগোষ্টির পুনর্বাসন, বজ্রপাত নিরোধ কল্পে বজ্র নিরোধী যন্ত্র স্থাপন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় টেকসই নগর ও জনবসতি গড়ে তোলা এবং হাওর অঞ্চলের জীবনমান উন্নয়নে সহ পর্যটন শিল্পের বিকাশে পদক্ষেপ গ্রহণ, হিজল/করচ বৃক্ষরোপন, উচিতপুর পর্যটন কেন্দ্রের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বজ্রপাত নিরোধকল্পে তালগাছ রোপনসহ অসংখ্য কাজ করে উপজেলায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ইউএনও বুলবুল আহমেদ।
তিনি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ভাংনামারী ইউনিয়নের খানপাড়া গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। উনার পিতা হাসান আলী তালুকদার স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। তিনি বিসিএস ৩৩তম ক্যাডারের প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ২০১৪ সনে সহকারি কমিশনার হিসেবে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যোগদান করেন। এর পর তিনি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, বরিশাল, বরিশাল বিভাগে বিভাগীয় কমিশনারের একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর পর তিনি সহকারি কমিশনার ভূমি হিসেবে নেত্রকোনা সদরে ২বছর ৮মাস সফলতার সহিত দায়িত্ব পালন করেন। ২০২০ সালে ৫ জুলাই তিনি মদন উপজেলায় যোগদান করেন। ২০২২ সনের ৬ জুলাই তিনি শেরপুর জেলার নকলা উপজেলায় যোগদানের লক্ষ্যে মদন উপজেলা হতে বিদায় নেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি বিবাহিত এবং ২ কন্যার জনক। উনার স্ত্রী মেহনাজ ফেরদৌস শেরপুর জেলা সদরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো মন্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো।