বুধবার, ২২শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

বেলকুচিতে শ্রমিক লীগ নেতার বাড়িতে ‘বোমা বিস্ফোরণে’ চরমপন্থি নিহত, ১৩ মাস পর তদন্তে গতি,

জহুরুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার: সিরাজগঞ্জের বেলকুচির সাবেক শ্রমিকলীগ নেতা আব্দুল মোতালেবের বাড়িতে ‘বোমা বিস্ফোরণের’ আলোচিত ঘটনায় চরমপন্থী সদস্য ফজলু হক নিহতের ঘটনার মূল ‘মাস্টারমাইন্ডরা’ এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। বোমা বিস্ফোরণে সর্বহারা-চরমপন্থী হত্যার ‘মাস্টারমাইন্ড’ আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক এমপি আব্দুল মমিন মন্ডল ও তার নির্বাচনী সমন্বয়ক আমিনুল ইসলাম ওরফে ইঞ্জিনিয়ার আমিনুল শুরু থেকেই রহস্যজনক পুলিশের সন্দেহের বাইরে। তারা বাইরে থাকলেও ১৩ মাস পর মামলার তদন্তে হঠাৎ ‘গতি’ ফিরেছে। অভিযোগ রয়েছে, ‘বোমা বিস্ফোরণের’ ঘটনাটি শুরু থেকেই আড়াল করার চেষ্টা করেন বেলকুচির সাবেক ওসি আনিছুর রহমান ও সহকারী পুলিশ সুপার জন রানা (সরকার পতনের কদিন আগে চাকরি ছেড়ে সস্ত্রীক কানাডায় পাড়ি জমিয়েছেন)। এর আগে দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন বেলকুচি থানা ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আহসানুজ্জামান। তার তদন্তের ধীরগতি ও গড়িমসিতে মামলাটি স্থানান্তরিত হয় ডিবি পুলিশে। ডিবির সাবেক ওসি জুলহাজ উদ্দিন তদন্তের ভার নিয়ে মোতালেবের সহোদর আবু তালেবকে গ্রেপ্তার করেন। কিন্তু মোতালেব হোসেনকে গ্রেপ্তার বা ‘মাস্টারমাইন্ড’দের খুঁজে পেতে ব্যর্থ হন ওসি জুলহাজ উদ্দিন। ফলে তদন্ত মাঝপথে ঝুলে যায়। এরপর ইন্সপেক্টর জুলহাজ উদ্দিন বদলীর পর নতুন তদন্ত করেন ডিবির উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাজমুল ইসলাম। মূল ‘মাস্টারমাইন্ডদের না খুঁজে তিনিও কৌশলে কালক্ষেপণ-গড়িমসি করেন বলে অভিযোগ উঠে। এদিকে, স্থানীয়দের সহায়তায় এরই মধ্যে বেলকুচি থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন সাবেক শ্রমিকলীগ নেতা আব্দুল মোতালেব। এরপর মূল মাস্টারমাইন্ডদের ইন্ধনে মোতালেব ও তালেবসহ সহোদর দু’ভাইকে অভিযুক্ত দেখিয়ে আদালতে মামলার চার্জশিট দাখিলের মহা পরিকল্পনা করেন এস আই নাজমুল। এমন অভিযোগও রয়েছে। বিষয়টি জেনে গণমাধ্যমকমীরা তৎপর হলে এসআই নাজমুলের কাছ থেকে নথিপত্র জব্দ করে করেন ডিবির নতুন ওসি একরামুল হক। এরই মধ্যে তিনি তদন্ত শুরু করেন। সোমবার বেলকুচিতে তদন্তে গেলেও সরকার পতনের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তিন মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও বিএনপি কর্মী নিহতের ঘটনায় নতুন মামলায় আসামি হওয়ার কারণে পালিয়ে থাকা মূল ‘মাস্টারমাইন্ড’ ইঞ্জিনিয়ার আমিনুল ও সাবেক এমপি মমিন মন্ডলকে খুঁজে পাননি তিনি।সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে সাবেক শ্রমিকলীগ নেতা মোতালেবের বাড়িতে ‘বোমা বিস্ফোরণে’র ঘটনাটি ২০২৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর। গত ১৩ মাস আগে ওই বিস্ফোরণে চরমপন্থী ও সর্বহারা সদস্য কুষ্টিয়া জেলা সদরের মিলপাড়ার বাসিন্দা ভাড়াটে সন্ত্রাসী ফজলু হক নিহত হন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নৈরাজ্য সৃষ্টির পরিকল্পনায় সাবেক পতিত সরকারের লোকজন কুষ্টিয়া থেকে বোমা তৈরির কারিগর ভাড়া করে বেলকুচিতে আনে। সাবেক এমপি আব্দুল মমিন মন্ডলের প্রতিপক্ষ সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসকে ঘায়েল করতে নির্বাচনপূর্ব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার অংশ হিসেবে বোমা নৈরাজ্যের পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু বোমা তৈরির সময় হঠাৎ বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হন ডাকাতি ও অস্ত্রসহ একাধিক মামলার আসামি ফজলু। সাবেক শ্রমিকলীগ নেতা মোতালেবের বাড়িতে বিস্ফোরণের পরপরই সাবেক এমপি মমিন মন্ডলের ব্যবহৃত কালো রংয়ের মাইক্রোবাসে আহত ফজলুকে প্রথমে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের পাশে কড্ডার মোড়ে একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। আহত ফজলুকে চিকিৎসার জন্য ইঞ্জিনিয়ার আমিনুল, শ্রমিকলীগ নেতা মোতালেব, তার সহোদর আবু তালেব, তাদের ভাগিনা আমিরুল, ভাতিজা রানাসহ ৭-৮ জন ধরাধরি করে নিয়ে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শী সাবেক মেয়র সাজ্জাদুল হক রেজাসহ তার লোকজন জানান। এরপর অবস্থা বেগতিক হলে পরবর্তীতে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। সেখানে তিন দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর অবশেষে মারা যান তিনি। এ ঘটনায় নিহতের সহোদর বিপুল হক বাদী হয়ে ঘটনার পাঁচদিন পর বেলকুচিতে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামি সাবেক শ্রমিকলীগ নেতা মোতালেব টানা এক বছর ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও তার সহোদর ভাই আবু তালেব ডিবি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। এক বছর পর স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় সাবেক শ্রমিকলীগ নেতা মোতালেবকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হলেও ঘটনার মুল মাস্টারমাইন্ড সাবেক এমপি আব্দুল মমিন মন্ডল ও তার নির্বাচন সমন্বয়কারী শুরু থেকেই আড়ালে। এখনও তারা পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে। মামলার নতুন তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির ইন্সপেক্টর একরামুল হক সাংবাদকর্মিদের বলেন, ‘যেহেতু খুব শিগগিরই চার্জশিট দাখিল করা হবে। তাই আসামিদের ভূমিকার বিষয়ে নিজেই সরেজমিনে এসে তদন্ত শুরু করেছি। সাবেক এমপি মমিন মন্ডল ও ইঞ্জিনিয়ার আমিনুল জড়িত আছে কিনা, বিষয়টি নিশ্চিত নই। সাবেক তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘বাদীর এজাহারেও সাবেক এমপি মমিন মন্ডল ও ইঞ্জিনিয়ার আমিনুলের নাম নেই।’ সিরাজগঞ্জ সিআইডি পুলিশের সাবেক ইন্সপেক্টর ছায়া তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাইমিনুল ইসলাম সংবাদকর্মীদের বলেন, ‘বোমা বিস্ফোরণকে প্রেশার কুকার বিস্ফোরণ বলে ঘটনার মামলার আলামত আগে নষ্ট করে ফেলে আসামি মোতালেব ও তার স্বজনরা। বেলকুচি থানা পুলিশের গড়িমসির কারণে ঘটনার আলামত বাড়ির পাশে খালে ফেলা হয়। এমনকি, বোমার আগুনে ঘরে ঝলসে যাওয়া দেয়াল রং করার পাশাপাশি ভঙ্গুর টাইলসও পরিবর্তন করা হয়।’ এদিকে, মামলার কারণে পলাতক সিরাজগঞ্জ-৫ বেলকুচি ও চৌহালী) আসনের সাবেক এমপি মমিন মন্ডল ও ইঞ্জিনিয়ার আমিনুলের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। দু’জনের ব্যক্তিগত মুঠোফোনের হোয়াটসঅ্যাপের নম্বরে মঙ্গলবার সকালে কল ও ক্ষুদে-বার্তায় সাড়া দেননি বেলকুচির সাবেক সার্কেল এএসপি জন রানা ও সাবেক ওসি আনিসুর রহমান।

সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

এই সপ্তাহের পাঠকপ্রিয়