বেলকুচিতে দুই আবেদনকারী মুক্তিযোদ্ধার নামে অভিযোগ
উজ্জ্বল অধিকারী: সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে দুই আবেদনকারী মুক্তিযোদ্ধার নামে অভিযোগ করেছেন ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও সদস্যরা। উপজেলায় নতুন করে মুক্তিযোদ্ধাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে যাচাই বাচাই শুরু হয়েছে। আর এই যাচাই বাচাই কমিটির কাছে দুজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আবেদন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস উপজেলা নির্বাহী অফিসারের।
বেলকুচি উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ অভিযোগ করে বলেন, আমার ইউনিয়নের সমেশপুর গ্রামের মৃত ফেদু মন্ডলের ছেলে আসাব উদ্দিন বুদ্দু ও চর সমেশপুর গ্রামের মৃত ইঞ্জিন মন্ডলের ছেলে মৃত সোলায়মান মন্ডলের নামে তার ছেলেরা মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট ও তালিকা ভুক্ত করার আবেদন করেন। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা যাচাই বাচাই কমিটি তদন্ত শুরু করে। তদন্তে উপজেলার বাহির থেকে কিছু মুক্তিযোদ্ধা এনে মিথ্যে স্বাক্ষ্য দিয়ে তাদের তালিকায় আনার চেষ্টা করছে। প্রকৃত পক্ষে তারা দুজন কখনই মুক্তিযুদ্ধ করেনি। তারা স্বাধীনতার ৫১ বছর পর এসে নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা দাবী করছেন। আসলে তারা দুজন মুক্তিযোদ্ধা না। আমি উপজেলা যাচাই বাচাই কমিটির কাছে আবেদন করি আমাদের ইউনিয়নে যেন কোন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার নাম তালিকায় অন্তভুক্ত না করে।
ইউনিয়নের আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম বলেন, আমাদের গ্রামের বুদ্দু ও সোলায়মান দুজনেই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। এই অঞ্চলের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান তিনি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এই দুজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তভুক্ত করার চেষ্টা করছে। আমি চাই কোন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা যেন আমাদের গ্রামকে কলঙ্কিত না করে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার রহমান বলেন, আমরা ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষন নিয়ে এসে যুদ্ধ করেছি। আমার সব কিছু মনে আছে। এরা দুজন কোথাও কোন প্রশিক্ষন নেননি। তারা ১৯৭১ সালে কোথাও কোন যুদ্ধ করেনি। তার পক্ষে যে তিনজন স্বাক্ষী দিয়েছে তারা কেউ আমাদের উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা না। তাই উপজেলা যাচাই বাচাই কমিটি আমাদের আবেদনটি অবশ্যই খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর জব্বার বলেন, বুদ্দু আর সোলায়মানের নাম লাল বার্তা, মুক্তি বার্তায় তাদের নাম নেই। এছাড়াও কোন কমান্ডরের প্রত্যায়ন পত্র নেই। তাই কিছু অসাধু মুক্তিযোদ্ধা কারনে যেন কোন ভুয়া লোক মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তভুক্ত না হয়।
এবিষয়ে আসাব উদ্দিন বুদ্দু বলেন, আমি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছিলাম সমেশপুরে। আমি যুদ্ধের শেষ দিকে নৌকা যোগে মানকার চরে প্রশিক্ষনের জন্য গিয়েছিলাম কিন্তু আমাদের কমান্ডার সোবাহান খান সাহেব বলেন এখন আর প্রশিক্ষন হবেনা তুমি গ্রামে ফিরে যাও। তখন আমি প্রশিক্ষন না নিয়েই গ্রামে ফিরে আসি। পরে আমাদের গ্রামের মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সমেশপুরেই যুদ্ধে অংশ গ্রহন করি। এতোদিন আসলে আবেদন করিনি। এখন আবেদন করেছি স্বাক্ষীরা স্বাক্ষ দিয়েছে। আমি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা আমাকে অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অন্তভুক্ত করে স্বন্মানাদেবে।
মৃত সোলায়মান মন্ডলের ছেলে রেজাউল করিম বলেন, আমার বাবা একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তিনি মারা যাবার পূর্বেই আবেদন করে গেছেন। উপজেলা যাচাই বাচাই কমিটি অবশ্যই সকল স্বাক্ষীদের স্বাক্ষ্য মোতাবেক আমার বাবাকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্মাননা দেবে।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাচাই কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ সাইদুর রহমান বলেন, আমরা সঠিক ভাবেই যাচাই বাচাই করছি। এদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আপনার কাছে শুনছি সেই ধরনের কোন অভিযোগ লিখিত ভাবে আমাদের কাছে কেউ দেয়নি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই খতিয়ে দেখবো।
বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনিসুর রহমান বলেন, এধরনের কোন অভিযোগ আমি লিখিত ভাবে পাইনি। আমার কাছে কেউ এখনো আসেনি। আমি লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো মন্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো।